নিজস্ব প্রতিবেদক

১১ নভেম্বর, ২০১৫ ২২:০৮

আজও অনাবিস্কৃত ‘মুস্তাফিজ বিষের’ দাওয়াই!

প্রযুক্তির এক অভাবনীয় উৎকর্ষতার যুগে বসবাস আমাদের। স্বভাবতই ক্রিকেটেও লেগেছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। বলা ভালো, ক্রিকেট এখন অনেকটাই প্রযুক্তি নির্ভর। এক ম্যাচে কেউ ভালো খেললেই পরের ম্যাচে তাকে নিয়ে কাঁটাছেড়ায় বসে পড়েন প্রতিপক্ষ দলের ক্রিকেটীয় প্রযুক্তিবিদেরা!

আর কেউ বলে বা ব্যাটে হইচই ফেলে দিলে তো আর রক্ষে নেই! ভিডিচিত্রে পুঙ্খানুপঙ্খু বিশ্লেষণ করে তাঁর দুর্বলতা, শক্তির দিক, তাকে ঠেকানোর উপায় খুঁজতে নেমে পড়ে বাকী ক্রিকেট বিশ্ব!

তবে এসব প্রযুক্তি-টযুক্তি আর প্রযুক্তিবিদদের কাঁটাছেড়া বোধহয় মুস্তাফিজুর রহমান রহমান নামে উনিশের এক তরুণের জন্য প্রযোজ্য নয়। বোধ হয় বলছি কেনো, প্রযোজ্য নয়ই তো! নয় বলেই তো, এখনও অপ্রতিরোধ্য এই বিস্ময় বালক। এখনো দুর্বোধ্য তার বিস্ময়কর কাটার।

এখনও 'মুস্তাফিজ বিষ' থেকে সুরক্ষার মোক্ষম কোনো দাওয়াই যে আবিষ্কৃত হয়নি তা তো আজকেই হাড়ে হাড়ে টের পেলেন জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরা। একে একে পাঁচজন ব্যাটসম্যানের প্রাণ হরণ করলো এই বিষ!

আজকে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৫ উইকেট নিয়ে একটি বিশ্বরেকর্ডেও ভাগ বসিয়েছেন সাতক্ষীরার এই সোনার ছেলে। এ পর্যন্ত ক্যারিয়ারের মাত্র নয় ম্যাচে ২৬ উইকেট শিকার করেছেন মুস্তাফিজ। এরআগে এই কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের মিশেল ম্যাকলেনাহানের। তাঁর পাশে গিয়ে বসলেন মুস্তাফিজ।

রেকর্ডটা আজ একেবারে নিজের করেই নিতে পারতেন মুস্তাফিজ। প্রয়োজন ছিলো মাত্র এক উইকেট। তার দুটি ওভারও বাকী ছিলো। তবু যে হলো এজন্য সব 'দায়' দেয়া যেতে পারে আরাফাত সানিকে। জিম্বাবুয়ের শেষ উইকেটটা তুলে নিয়ে সানিই তো মুস্তাফিজের রেকর্ড গড়ার পথে 'কাঁটা' হয়ে গেলেন।

মুস্তাফিজ নিজের অষ্টম ওভারের শেষ চারটি বল যখন করছেন, স্লিপ ও গালি অঞ্চলে উইকেটরক্ষকসহ মোট আটজন খেলোয়াড়! ওয়ানডেতে খুবই বিরল দৃশ্য। তবে মুস্তাফিজুরের উদ্দেশ্য সফল হলো না। কখনো ব্যাটের পাশে বাতাস লাগিয়ে বল চলে গেল, আবার কখনো স্টাম্পের ওপরের বলটায় ব্যাট পেতে দিয়ে বেঁচে গেলেন মুজারাবানি। আট ওভার শেষে তাই ৫ উইকেট নিয়েই ‘সন্তুষ্ট থাকতে হলো মুস্তাফিজকে।

দিনের শুরুটাই দারুণভাবে করেছিলেন বাংলাদেশের এই তরুণ সেনসেশন। প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই ফিরিয়েছেন চামু চিবাভাকে। অন্য ওপেনারও তাঁরই শিকার।

শুরুর ধাক্কার পর জিম্বাবুয়ের লেজ গুটিয়ে নেওয়ার কাজটুকু করলেন মুস্তাফিজ। নিজের সপ্তম ওভারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে ফেরালেন সিকান্দার রাজা ও লুক জঙ্গুয়েকে। দুই ব্যাটসম্যানকে আউট করে জিম্বাবুয়েকে ম্যাচ থেকেও আউট করে দিলেন মোস্তাফিজ। হ্যাটট্রিকের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিলো। হয়নি। তবে ঠিকই পানিয়াঙ্গারাকে ফিরিয়ে দিয়ে ৩য় বারের ৫ম উইকেট তুলে নেন মুস্তাফিজ।

ভারত সিরিজে শুরু হওয়া মোস্তাফিজ বিস্ময় জিম্বাবুয়ে সিরিজে শেষেও অব্যাহত রইলো। পুরো বাংলাদেশ চাইবে, এই বিস্ময় আরো দীর্ঘায়িত হোক, আরো দীর্ঘদিন অনাবিস্কৃত থাকুক মুস্তাফিজ বিষের দাওয়াই!

আপনার মন্তব্য

আলোচিত