রাজেশ পাল

০৭ জানুয়ারি, ২০১৭ ১৪:২০

পেছন পথে হাঁটা

পাঠ্যপুস্তক আন্দোলন কার্যত সাফল্যের মুখ দেখায় এবার সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে গ্রীক দেবী থেমিসের মূর্তি সরিয়ে ফেলার দাবী জানিয়েছে ওলামালীগ!

গ্রীক মাইথোলজি অনুযায়ী দেবী থেমিস ছিলেন গ্রীকদের ন্যায়পরায়ণতার দেবী। যার দুচোখ কালো কাপড়ে বাধা। একহাতে খোলা তলোয়ার আর আরেক হাতে দাঁড়িপাল্লা।

দাঁড়িপাল্লা হলো ন্যায়বিচারের প্রতীক। যাতে বোঝানো হয়, আইন সবাইকে সমভাবে বিচার করবে। চোখ কালো কাপড়ে ঢাকা থাকার কারণ যাতে বোঝানো হয় যে , আইন অন্ধ। চোখে দেখলে যাতে পক্ষপাতিত্ব সৃষ্টি হতে না পারে, সেই কারণেই আইনের চোখ কালো কাপড়ে ঢাকা থাকে, যাতে পক্ষপাতদুষ্ট না হয়ে বিচার করা যায়। আর হাতে খোলা তলোয়ার থাকার মানে হলো , আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনে আইন শক্তি প্রয়োগ ও করতে পারে।

বিশ্বজুড়েই ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে ন্যায়পরায়ণতার দেবী থেমিসের এই মূর্তি। কিন্তু আজ আমাদের বাংলাদেশে ওলামালীগ নামের এই ভুঁইফোড় সংগঠনটি এবার ধর্মীয় অনুভূতির ধুয়া তুলে নিষিদ্ধ করার দাবী করে বসলো এটিকে।

সবকিছুতেই ধর্মীয় অনুভূতির ধুয়া তোলা এই সংগঠনগুলোর ক্রমশঃই একটি মারাত্মক মুদ্রাদোষে পরিণত হচ্ছে। তাদের অনেকেরই প্রিয় রাষ্ট্র পাকিস্তানের আদালতে ও যে দেবী থেমিসের এই প্রতীক ব্যবহৃত হয়ে থাকে , তা সম্ভবত জানা নেই এদের।

এভাবে একের পর এক সফলতা পেতে পেতে দিন দিন এক ভয়ঙ্কর ফ্রাঙ্কেস্টাইনে পরিণত হচ্ছে এরা। হয়তো এরপর একদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপরাজেয় বাংলা বা রাজু ভাস্কর্য ও সরিয়ে ফেলার দাবী তুলতে পারে এরা ধর্মীয় অনুভূতির জুজু তুলে। কারণ এগুলো দেখেই একজন নবীন শিক্ষার্থী জানতে চাইবে একাত্তরের রক্তভেজা ইতিহাস।

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়েও ধর্ম রক্ষার জুজু তুলে খুন ,ধর্ষণ আর লুটতরাজের রাজত্ব কায়েম করেছিলো রাজাকার আলবদররা। ১৬ই ডিসেম্বর তাদের সেই স্বপ্ন ভেঙে পড়েছিলো তাসের ঘরের মতোই। আর বিগত ৪৫ বছর ধরেই সেই জ্বালা বয়ে বেড়াচ্ছে তারা। আর তাই বিগত চারদশক ধরেই ধীরে ধীরে সুকৌশলে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে তারা প্রবেশ করিয়েছে ধর্মান্ধতা আর উগ্র সাম্প্রদায়িকতা।

আর সেই অপকৌশলের অংশ হিসেবেই টার্গেট করেছে এমাটির আবহমানকালের সংস্কৃতি , সঙ্গীত , শিল্পকলা , সাহিত্য সবকিছুকেই। আর ভাষ্কর্যতো তাদের অনেক পুরনো টার্গেট। একারণেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পূজার প্রতিমা থেকে শুরু করে বিমানবন্দরের লালন ফকিরের ভাস্কর্য পর্যন্ত সবকিছুই তাদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাড়ায় প্রতিনিয়ত।

অবাক হবোনা , যদি কিছুদিন পরে শহীদ মিনার বা জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত ধর্মীয় অনুভূতির অজুহাত দেখিয়ে ধ্বংস করে ফেলার দাবী তোলেন তারা কোনদিন। আর জাতীয় সংগীত পরিবর্তন করার দাবীতো তাদের অনেক পুরনোই। কারণ এই “আমার সোনার বাংলা ” একদিন মুছে দিয়েছিলো তাদের সাধের “পাক সার জমিন সাদ বাদ”

সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এভাবেই ধর্মীয় অনুভূতির অপব্যবহার করে প্রাণপণে চেষ্টা করা হচ্ছে পাকিস্তানবাদ পুনর্প্রবর্তনের। শুরু হয়ে গেছে উল্টো পথে যাত্রার এক মসিলিপ্ত পথচলা। হুমায়ূন আজাদের ভাষায় বলতে হয়- ‘পুত্রের ঔরসে জন্ম হচ্ছে পিতামহের’

-ফেসবুক থেকে

আপনার মন্তব্য

আলোচিত