শাখাওয়াত লিটন

২১ আগস্ট, ২০১৭ ২২:১৫

প্রধান বিচারপতিকে আরও ধৈর্য ধরতে হবে!

নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথকীকরণের মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এখন পর্যন্ত কতটা সুরক্ষিত হয়েছে তা এক বাক্যে বলতে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের "কেউ কথা রাখেনি" কবিতার প্রথম লাইনে একটু সংশোধন করে নিলেই চলবে--কেউ কথা রাখেনি, ৪৫ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখেনি।

১৯৭২ সালের সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্র নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ নিশ্চিত করবে। সংবিধানের ১৫০ অনুচ্ছেদে আরও বলা হয়েছে, বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ যত শিগগির সম্ভব নিশ্চিত করা হবে।

সংবিধান প্রণয়নের পর থেকে গত ৪৫ বছরে যতগুলো সরকার দেশ পরিচালনা করেছে তাদের সবার দায়িত্ব ছিল সংবিধানের বিধান মোতাবেক নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ নিশ্চিত করা। কিন্তু ৪৫ বছরে কেউ কথা রাখেনি। সবাই চেয়েছে নিম্ন আদালতের উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে।

সংবিধানের বিধান অনুযায়ী বিচার বিভাগের পৃথকীকরণের জন্য ১৯৯৯ সালে সুপ্রিম কোর্ট ১২ দফা নির্দেশনা দেয়। তারপরেও শুরু হয় গড়িমসি। দফায় দফায় সময় নেয় বিগত সরকারগুলো।

রাজনৈতিক দলীয় সরকারগুলোর জন্য করুণা হয় এই ভেবে, যে কাজ তারা দশকের পর দশক সময় নিয়েও করতে পারেনি সেই কাজ করে গত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালের নভেম্বরে। নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ করা হয়। কিন্তু সে সরকার সব কাজ সমাপ্ত করে যেতে পারেনি। কিছু বিধিমালা প্রণয়ন বাকি থাকে। সেই বিধি প্রণয়ন করতে এখন সরকার দফায় দফায় সময় নিচ্ছে।

গত রোববার সরকার যখন আবার সময়ের আবেদন করে। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে বাইরে সরকারের লোকজন ঝড় তুলেছে। প্রধান বিচারপতি আইনমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করতে চেয়েছিলেন বিধিমালা চূড়ান্ত করতে। তিনি বৈঠক করতে পারেননি। কেননা আইনমন্ত্রীকে পাওয়া যায়নি। এমন প্রেক্ষাপটে পুনরায় সময় বাড়ানোর আবেদন।

সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তার সাথে কথোপকথনের এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ''বিচার বিভাগ অনেক ধৈর্য ধরেছে। যথেষ্ট ধৈর্য ধরছি।''

তাইতো, সেই ১৯৭২ সাল থেকে বিচার বিভাগ ধৈর্য ধরে আছে। মাঝে সংবিধান সংশোধন করে বিচার বিভাগের অনেক ক্ষমতা কর্তন করা হয়েছে। নির্বাহী বিভাগের খবরদারি বেড়েছে। তারপরেও বিচার বিভাগ ধৈর্য ধরেছে। বিচার বিভাগকে আরও কত বছর ধৈর্য ধারণ করতে হবে?

রাজনীতিবিদদের প্রিয় শব্দ সংবিধান, সেই সংবিধানের বিধানকে তারা সত্যিকারভাবে শ্রদ্ধা করবে যেদিন সেদিন বিচার বিভাগের ধৈর্যর অবসান ঘটবে। সেদিন বলা যাবে অবশেষে কেউ কথা রাখল। কিন্তু সে দিন কবে আসবে?

  • শাখাওয়াত লিটন: সাংবাদিক।
  • ফেসবুক থেকে

আপনার মন্তব্য

আলোচিত