এস এম নাদিম মাহমুদ

২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ১৫:১৬

শেখ হাসিনার নোবেল মনোনয়ন ও মিথ্যা প্রচারণা

গত বছর জাপানে চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পেয়েছিলেন অধ্যাপক সাতোশি ওমুরা। নোবেল কমিটি যখন সংবাদ মাধ্যমে তার নাম প্রচার করবে ঠিক তার ঘণ্টাখানেক আগে তাকে টেলিফোন করে নোবেল প্রাপ্তির বিষয়ে জানায়। এর আগে তিনি স্বপ্নেও ভাবেনি কিংবা জাপানের কেউ ভাবেনি তিনি নোবেল পুরস্কার পাচ্ছেন। আর সম্ভবত যারা নোবেল পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হোন, তারা কখনোই কোন সূত্রে বিষয়টি জানতে পারে না।

অথচ, সপ্তাহ খানেক ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির সম্ভাব্যতা নিয়ে বেশ কিছু পোস্ট দেখতে পেয়েছি। যেখানে শিক্ষিত ও উচ্চশিক্ষিত সবাই উল্লাসিত। আর এমন খবরটি বেশ কয়েকটি টেলিভিশনের অনলাইন ও নিউজ পোর্টালে সংবাদ হতেও দেখেছি। অনেকে আবার এই সম্ভব্যতার নিয়ে মতামত লিখেছেন। সর্বশেষ নোবেল পুরস্কারের চূড়ান্ত তালিকায় শেখ হাসিনা, জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মার্কেলসহ তিনজনের নাম নিয়ে কয়েকজন সংবাদকর্মী পর্যন্ত এমন তথ্য শেয়ার করেছন।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে হোক আর ব্যক্তি শেখ হাসিনা হিসেবেই হোক যদি সত্যিই তিনি এবার নোবেল পুরস্কার জন্য মনোনিত হয়েও থাকেন তাহলে এইটুকু নিশ্চিত থাকুন আপনাদের এই অতি উৎসাহী আলোচনা-সমালোচনা সেই প্রাপ্তির অন্তরায় হিসেবে দাঁড়িয়েছে।

আমার মাথায় কিছুইতে আসছে না, আমরা কিভাবে এই গুজব ছড়িয়ে পুরো দেশে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছি? কিভাবে এই আধুনিক যুগে তথ্য যাচাই না করে সংবাদ মাধ্যমগুলো এই নিয়ে সংবাদ করছে?

তারা কি একবারও www.nobelprize.org ওয়েব সাইটে ঢুকবার প্রয়োজনবোধ করে না? হিট কামানোর আসায় হোক আর অতি উৎসাহী দলীয় প্রীতিই হোক, এমন গুজব ছড়িয়ে যে ক্ষতিটা আপনারা করলেন, তার মূল্য দিতে পারবেন?

আপনারা কি দেখেছেন নোবেল পুরস্কার জন্য আবেদন করার ক্রাইটেরিয়া? কোথায় থেকে জানলেন, এইসব উদ্ভট তথ্য?

নোবেল কমিটি সরাসরি শান্তিতে নোবেল পাওয়ার নির্দেশিকায় জানিয়ে দিয়েছে, The statutes of the Nobel Foundation restrict disclosure of information about the nominations, whether publicly or privately, for 50 years। অর্থাৎ পঞ্চাশ বছরের ভিতর কারা কারা এই পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হলো কিংবা কারা কারা নির্বাচক ছিলো, তা কখনো জনসম্মুখে প্রকাশ করা যাবে না।

কঠোরতার মধ্যে যে পুরস্কারটি নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয় সেখানে আমরা কিভাবে অনায়াসে প্রধানমন্ত্রীর নাম উচ্চারণ করে তাকে ও তার সম্মানকে বিভ্রান্ত করছি একবার ভেবেছেন কি?

আর রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য নোবেল পাচ্ছেন বলে যারা চিৎকার করছেন, প্লিজ একবার ভাবুন, নোবেল পুরস্কারের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া বছরের শুরুতে অর্থাৎ জানুয়ারিতেই শেষ হয়ে যায়, অথচ রোহিঙ্গা সমস্যা দূরীকরণে বাংলাদেশ সরকারের উদারতা প্রকাশ পেয়েছে অগাস্টে। তাই এই ধারনাটা খুবই ভিত্তিহীন।

বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে হোক কিংবা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হিসেবে হোক, নোবেল পুরস্কার তার দরকার আছে কি? এমনিতে তিনি নারী শাসক হিসেবে সারা বিশ্বে সমাদৃত, তাকে এই বিতর্কিত পুরস্কার চাওয়ার হেতুটা কি? সু চি তো নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, তিনি কি আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে টপকাতে পেরেছেন? নাকি বিশ্বনেতাদের কাছে,অং সান সু চি কোন জনপ্রিয় নেত্রী? সেটা যদি বিশ্বাস করেন, তাহলে অতি উৎসাহী হয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচারণা কেন করবেন? এর চেয়ে, তিনি যে ভাল কাজ করছেন, তার জন্য প্রশংসা করুন। তিনি যে মন্দ কাজ করেছেন, তা ধরে দিয়ে দেশটাকে সামনের পথে এগিয়ে নেন। নেতার নেতৃত্ব থাকে মানুষের মনে, পদকের পদাঙ্কে নয়।

যাদের আগ্রহ আছে, তারা নোবেল পুরস্কারের বিস্তারিত তথ্য এখান থেকে জেনে নিতে পারেন, https://www.nobelprize.org/nomination/peace/

আপনার মন্তব্য

আলোচিত