সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক

১৭ মার্চ, ২০১৮ ১৬:২২

‘ভদ্রতা শেখানোর জন্য ডেল কার্নেগী আছে, ওটা ক্রিকেটারদের কাজ না’

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের শুক্রবার রাতের খেলার শেষওভারের ওই ঘটনা নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। পরপর দুটি বাউন্স বলকে ওয়াইড বা নো না ডাকায় ক্ষেপে যান বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা। মাঠের বাইরে থাকা দলনেতা সাকিব আল হাসান তখন ক্ষিপ্ত হয়ে ব্যাটসম্যানদের মাঠের বাইরে চলে আসতে বলেন।

সাকিবের এই আচরণ নিয়ে শুক্রবার রাত থেকেই আলোচনা সমালোচনা চলছে। ফেসবুকে কেউ কেউ এই আচরণকে অক্রিকেটীয় দাবি করে সাকিবের সমালোচনা করছেন। আর একে সাহসীকতা দাবি করে সাকিবের প্রশংসাও করছেন অনেকে।

এ প্রসঙ্গে ফেসবুকে এটিএম গোলাম কিবরিয়া লিখেন-

সৌরভ গাঙ্গুলিকে আমি তার অফসাইডের ব্রিলিয়ান্সের জন্য মনে রাখিনাই, সাহারা কাপে অতিমানবীয় পারফরম্যান্সের জন্য মনে রাখিনাই, শর্টবলে নড়বড়ে হওয়ার জন্য মনে রাখিনাই। সৌরভ মানে লর্ডসে আদুল গায়ে জার্সি ওড়ানো মিন মাদাফাকা।

লেইটকাট ছাড়া রানাতুঙ্গার আর কোন শটের কথা মনে পড়ে না, তিরিশের পাশে এভারেজে ঘুরাঘুরি করা একজন অর্ডিনারি ব্যাটসম্যান জাস্ট। কিন্তু শ্রীলংকান ট্রান্সফর্মেশনের শুরু রানাতুঙ্গার হাত ধরে, "আইয়া"র অবদান ছাড়া লংকান ক্রিকেট কল্পনা করা যায়না। রয় ডায়াস, ফার্নান্দেজরা খেলেছেন শ্রীলংকার হয়ে, অথচ আইয়ার সমান উচ্চতায় তারা উঠতে পারেন নাই। কেন?

ভারত বহুদিন ধইরা ক্রিকেট খেলে, গাভাস্কারের মত প্লেয়ার প্রডিউস করছে, শচিন খেলছে ওদের হয়ে। সব ঠিক ছিলো, জাস্ট কিলার ইন্সটিনক্ট ছিলোনা। গাঙ্গুলি ওইটা সংক্রমিত করছে, লর্ডসের মোমেন্টটা ইন্ডিয়ান ক্রিকেটের ডিফাইনিং মোমেন্ট। এরপরে ধোনী, তারপরে কোহলী। এইটা ন্যাচারাল কন্সিকোয়েন্স। কোহলি আমার প্রিয়, কারণ সে বেয়াদব। আমাদের এইরকম বেয়াদব লাগবে।

লেগ আম্পায়ার নো বল কল করছে, আম্পায়ার দেয়নাই। একজাক্টলি কি করতে পারতো সাকিব? এইরকম ক্রুশিয়াল মোমেন্টে আপনার গ্রিভেন্স আপনি কেন শো করবেন না?

সানোয়ার হোসেন আর আজহারুদ্দীন সান্টুরা যখন খেলতো, তখন এইরকম হইলে তারা চাইপা যাইতো, এরা তো যাবেনা। এরা যায় না বলেই বিদেশে টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলতে পারে, অয়ার্ল্ড কাপে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলতে পারে। দেশে জিতবে, বিদেশে জিতবে, কয়েক বছর পরে বিদেশে টেস্ট ও জিতবে। তার আগে হারবে সাউথ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া গিয়ে। ঘরে বাঘ, বাইরে বিড়াল অপবাদ পাবে। একসময় ঠিক ই জিতবে। এইটা ন্যাচারাল প্রোগ্রেস। সাকিব যদি অইরকম না করতো, পরের বলটা ও বাউন্সার দিতো।

"আমাদের সাথে ইনজাস্টিস হচ্ছে" - এই গ্রিভেন্স নিয়ে রিয়াদ ব্যাটিং রিজিউম করছে, খেলায় পজ পড়ার কারনে বোলার ডিজরিয়েন্টেড হইছে এবং ঠিক সেই বলটাই করছে যেইটা চেতন শর্মা শারজায় করছিলো মিয়াদাদকে।

প্লেয়াররা প্রথমত এন্টারটেইনার, পরবর্তীতে আপনাকে রিপ্রেজেন্ট করে। আনডাউটেডলি তাদের একটা দায় আছে কিন্তু সেইটা উইনিং স্যাক্রিফাইস করে না। বডিলাইন সিরিজ যারা জেন্টলম্যান গেইমের প্রোপাগেটর, তারাই করছিলো। আমরা আন্ডারডগ, গ্রেইস ও জেন্টলম্যানশীপ আমাদের এই মুহূর্তের প্রায়োরিটি না। অইটা প্রিভিলেজডরা এফোর্ড করতে পারে।

সাকিবের মাঝে গ্রেইস ঢুকাইতে গেলে ও পারফর্ম করতে পারবে না। দিস ইজ হিম। এইটাই ওর চরিত্র। এই এরোগেন্স, এই কনফিডেন্স বাদ দিলে ও রান পাবে না। বটম হ্যান্ডে খেলে, অফস্টিকে সবসময় ভালনারেবল, শুধু কনফিডেন্স আর উদগ্র জিগিষা দিয়ে ও এতদূর আসছে। টেকনিক্যালি মুশফিকের অর্ধেকও না, অথচ চল্লিশের উপরে টেস্ট গড়, সিম্পলি আনবিলিভেবল। মুমিনুলের মাঝে ফ্লেয়ার যোগ করতে চাইলে ও ফেইল করবে, সাকিবের থেকে ফ্ল্যামবয়েন্স বাদ দিলে ও আর সাকিব থাকবে না।

ভদ্রতা শেখানোর জন্য ডেল কার্নেগী আর শিব খেরা আছে। ওইটা ক্রিকেটারদের কাজ না, জেতাটা যখন রেগুলার হবে, ওইটা আপনাআপনি আসবে। তার আগে গুরুত্তপূর্ণ প্রশ্ন হলো, ব্রায়ান লারা যেটা রিটায়ারমেন্টের পরে জিজ্ঞেস করছিলো দর্শকদের, "ডিড আই এন্টারটেইন ইউ?" দ্যাট ইজ দ্যা কোয়েশ্চেন ইউ মাস্ট আস্ক। ডিড দে এন্টারটেইন ইউ?

শেষ পর্যন্ত অবশ্য সাকিবকে বুঝিয়ে শান্ত করা হয়। মাঠ ছেড়ে বেরোয়নি বাংলাদেশ। বরং জয় নিয়েই বেরিয়েছেন মাহমুদউল্লাহরা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত