ইমতিয়াজ মাহমুদ

২৭ জুন, ২০১৮ ১০:৫১

অপরাধের বোঝা বাড়তে থাকে জননীর কাছে!

তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা মাথায় নিয়ে। রাষ্ট্রদ্রোহিতা। যে রাষ্ট্রের জন্মের জন্যে তিনি নিজের কলজে কেটে দিয়েছেন, অনায়াসে বলেছেন প্রিয়তম পুত্রকে, 'যা তোকে দেশের জন্যে কোরবানি দিলাম', সেই রাষ্ট্র তাঁকে লাঠিপেটা করেছে রাস্তায়। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে।

যখন তাঁকে হাই কোর্ট থেকে জামিন দিয়েছে, এই রাষ্ট্র আপিলেট ডিভিশনে গেছে। দেশের এটর্নি জেনারেল ছিলেন তখন এডভোকেট আমিনুল হক। তিনি ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হকের ভাই। তিনি এই মামলা পরিচালনা করতে অস্বীকার করলেন। না, তিনি শহীদ জননীর জামিনের বিরোধিতা করতে পাবেন না। আমাদের এই রাষ্ট্র তখন বিশেষভাবে এই মামলাটার জন্যে নিয়োগ দিয়েছে এডভোকেট টিএইচ খানকে।

কে এই টিএইচ খান। তিনি ছিলেন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রসিকিউটর। আপিলেট ডিভিশনে দাঁড়িয়ে তিনি বিষোদগার করেছেন আম্মার বিরুদ্ধে। তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ মাথায় নিয়ে। সেই রাষ্ট্র, নিজের প্রাণাধিক পুত্র প্রাণের দামে পেয়েছেন যে রাষ্ট্র।

জননীর কাছে অপরাধের বোঝা বেড়ে যায়। সেইসব তস্করদের দেখি এখন আমাদের বন্ধুদের সারিতে মুখব্যাদান দাঁত বিকশিত ওদের হাস্য। আমাদের অপরাধের বোঝা বেড়ে যায়।

গতকাল ছিল তাঁর মৃত্যু বার্ষিকী। রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ মাথায় নিয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। সেই রাষ্ট্র- জরায়ু ছিঁড়ে সন্তান জন্মদানের যে কষ্ট, তাঁর চেয়ে অধিক কষ্টে যে রাষ্ট্রের জন্ম। আমি এইসব ফুটবল ইত্যাদিতে ভুলে যাই।

অসহনীয় বেদনার মধ্যে ছিলেন শেষ দিনগুলিতে। কোন বেদনাই তাঁর নিষ্পাপ দেবতুল্য শিশুসুলভ হাসিকে ম্লান করেনি। সন্তানদের প্রতি আস্থা ছিল অবিচল- বলেছেন 'জয় আমাদের হবেই'।

  • ইমতিয়াজ মাহমুদ: এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।
  • [ফেসবুক থেকে]

আপনার মন্তব্য

আলোচিত