হাসান মোরশেদ

৩১ জুলাই, ২০১৮ ১৪:৫১

সিলেট নিয়ে হতাশাজনিত বিদ্বেষ ছড়াবেন না

একটা প্রবণতা খেয়াল করেছি, গতকাল মধ্যরাতে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর সিলেটের বাইরের আওয়ামী লীগের কিছু নেতা কর্মী সমর্থক সিলেটীদের নিয়ে বিদ্বেষমুলক কথাবার্তা বলছেন। এটা হতাশাজনিত বুঝতে পারি। একই জিনিস করেছেন তারা- এর আগে যেখানে যেখানে আওয়ামী লীগ হেরেছে সেখানকার মানুষদের উদ্দেশ্য করে। এতো উন্নয়ন করছে আওয়ামী লীগ, তবু বিশ্বাসঘাতকতা!

এটা একটা আত্মঘাতি প্রবণতা। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে নির্বাচনের ফলাফল, গণরায়কে নিঃশর্তভাবে সম্মান করতে হবে। অবশ্যই করতে হবে, সেটা আপনার পক্ষে না গেলেও। ঠাণ্ডা মাথায় ফলাফল বিশ্লেষণ করে পরবর্তী কর্ম পরিকল্পনা স্থির করতে হবে।

অন্ধ আক্রোশে ভোটারদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবেন না।

সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের নৌকা প্রতীকে বদরউদ্দিন আহমদ কামরান পেয়েছেন ৮৫ হাজার ভোট। আপনি যখন সিলেট বিদ্বেষী কথা বলবেন এই ৮৫ হাজার মানুষকে অসম্মান করলেন। এই ৮৫ হাজার মানুষের সিংহভাগ নৌকা প্রতীককে ভোট দিয়েছেন- ব্যক্তিকে নয়। আমার আম্মা অসুস্থ অবস্থায় গিয়ে ভোট দিয়েছেন যখন শুনেছেন এবার ভোট হবে প্রতীকে।

জয়ী প্রার্থী মাত্র ৪ হাজার ভোট বেশী পেয়েছেন। এটা খুবই সামান্য পার্থক্য। আরিফুল হক চৌধুরী বিএনপির ধানের শীষের বদলে ব্যক্তি হিসাবে, কাজের মানুষ হিসাবে ভোট পেয়েছেন বেশী- তার নিজের দলে প্রচুর বিরোধিতা ছিলো।

অপরদিকে বদরউদ্দিন আহমদ এতো ভোট পেয়েছেন ব্যক্তি নয় দলীয় প্রার্থী হিসাবে। দলের ভোটের সাথে যদি ব্যক্তিগত ক্যারিশমায় কিছু ভোট যুক্ত হতো তাহলে ফলাফল অন্যরকম হতো নিশ্চিত।

এতো গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে মাত্র ৬২% ভোট কাস্ট হলো কেনো? আওয়ামী লীগের এতো শো-অফ, সারা দেশের নেতাকর্মীদের সিলেট ভ্রমণেও ৩৮% ভোটার ভোটে অনাগ্রহী রয়ে গেলো কেনো?

কাস্ট হওয়া ভোটের ৩৮% পেয়েছেন কামরান, ৪০% আরিফ। ভোটারের সংখ্যা যদি বাড়তো? কে জানে হয়তো ব্যবধান ঘুচিয়ে কামরান এগিয়ে যেতেন।

হতাশাজনিত বিদ্বেষ ছড়াবেন না। সিলেটীরা এমনিতেই নিজেদের আইডেন্টিটি বিষয়ে খুবই সংবেদনশীল। সামনে জাতীয় নির্বাচন। হাওয়ার উপর আবেগ না দেখিয়ে পরিসংখ্যান, ডাটা নিয়ে কাজ করুন। জাতীয় নির্বাচনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে কথিত এই আসনে সঠিক প্রার্থী দিতে না পারলে আবারো একই রকম ঘটনা ঘটবে।

প্রতীক+প্রার্থীর মেলবন্ধনের কোন বিকল্প নেই। নৌকা প্রতীকে কলাগাছ পাশ করার দিন আর নেই, উচিত ও নয়। প্রতিটি ভোট, প্রত্যেক ভোটার মর্যাদাপূর্ণ।

 

  • হাসান মোরশেদ: লেখক।
  • [ফেসবুক থেকে]

আপনার মন্তব্য

আলোচিত