আ স ম মাসুম

১৭ মে, ২০১৬ ০১:৫৩

বাংলা মিডিয়ার শতবর্ষ

পৃথিবীর যে প্রান্তেই বাঙালি যাবে প্রথম কাজ হচ্ছে সেখানে একটি বৈশাখী মেলা চালু করা। দ্বিতীয় কাজটি হলো একটি পত্রিকা বের করে ফেলা। এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা ব্রিটেন প্রবাসী বাংলাদেশিদের। মিডিয়াবাজ হিসেবে এই বিলেতেও বেশ নামডাক রয়েছে বাংলাদেশি কমিউনিটির।

বলা হয়ে থাকে ১ মিলিয়ন বাঙালি রয়েছে ব্রিটেনজুড়ে। এর মধ্যে হয়তো পাঁচ লাখ বাঙালি বাংলায় পড়তে ও লিখতে জানেন। এই পাঁচ লাখ বাংলাদেশির জন্য ব্রিটেনে রয়েছে অন্তত ২৫টি নিয়মিত সাপ্তাহিক, মাসিক ও পাক্ষিক পত্রিকা! অন্তত ১০টি অনলাইন পত্রিকার সঙ্গে রয়েছে ২৪ ঘণ্টার একটি রেডিওসহ আরও বেশকিছু কমিউনিটি রেডিওতে বাংলা অনুষ্ঠান।

ব্রিটেনে চালু রয়েছে সাতটি বাংলা টেলিভিশন। ১৯৯৮ সালে দেশের বাইরে প্রথম চালু হওয়া বাংলা টিভি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। এরপর ২০০৪ সালে চ্যানেল এস আসলে সেই জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ে। এরপর ক্রমান্বয়ে চ্যানেল আই, এটিএন বাংলা, এনটিভি, ইক্বরা বাংলার সঙ্গে নতুন সংযোজিত হয়েছে টিভি ওয়ান।

ইক্বরা বাংলা টেলিভিশনের হেড অব প্রোগ্রাম হাসান হাফিজুর রহমান বলেন, যেহেতু ব্রিটেনে পত্রিকার ডিক্লারেশন বা টেলিভিশনের লাইসেন্স নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের মতো তেমন ঝক্কি নেই, শুধু লিমিটেড কোম্পানি করেই চালু করা যায়, তাই এখানে মিডিয়ার আধিক্য বেশি। তবে এখানে মিডিয়া রেগুলারিটি বডি খুবই শক্তিশালী।

নিয়মতান্ত্রিকভাবে মিডিয়া না চললে বড় অঙ্কের জরিমানা গুনতে হয়। এটাই বাংলাদেশ আর ব্রিটেনের মধ্যে পার্থক্য। ব্রিটেনে রয়েছে অনেকগুলো বাংলা প্রেসক্লাব। রয়েছে দলাদলি। লন্ডন থেকে পরিচালিত লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব ২০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হলেও ২০১৩ সালে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইউকে-বাংলা নামে আরেকটি প্রেসক্লাব হয়। দুটি প্রেসক্লাবের সঙ্গে জড়িত আছেন প্রায় ৩০০ সংবাদকর্মী। সেই সঙ্গে ব্রিটেনের বিভিন্ন শহরে রয়েছে স্থানীয় প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রেসক্লাব।

ব্রিটেনের শতবর্ষের বাংলা সাংবাদিকতা নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করে ফারুক আহমদের লেখা বই বিলেতের বাংলা সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা সূত্রে জানা গেছে, ব্রিটেন থেকে ১৯০৮ সালে স্বরাজ নামে পত্রিকা বের করেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের পুরোধা বিপিনচন্দ্র পালের ছেলে নিরঞ্জন পাল। এই নিরঞ্জন পাল আবার বিখ্যাত সিনেমা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোম্বে টকিজ-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন! এরপর ১৯১৬ সালে পাক্ষিক সত্যবাণী ও ১৯৪০ সালে সাপ্তাহিক জগত্বার্তা বের হয়।

গবেষক ও সাংবাদিক ফারুক আহমদ বলেন, মূলত ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের মুখপত্র হিসেবে তখনকার সময়ে পত্রিকা বের করার একটি রেওয়াজ ছিল। ১৯৭১ সালেও বিভিন্ন শহর থেকে হাতে লেখা পত্রিকা বের করা হতো মুক্তিযুদ্ধের খবর নিয়ে। সেই ঐতিহ্য এখনো ধরে রেখেছেন বাংলাদেশিরা।

তবে ফারুক আহমদ বলেন, এখন ইতিহাস নতুন করে লেখার সময় এসেছে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অন্তত ১০ জন আছেন ব্রিটেনের মূলধারার মিডিয়াতে। এর মধ্যে সর্বশেষ সংযোজন বিশ্বের অন্যতম বড় সংবাদ মাধ্যম স্কাই নিউজের পলিটিক্যাল এডিটর ফয়সল ইসলাম। ব্রিটেনের প্রধান বাংলা পত্রিকার মধ্যে সাপ্তাহিক জনমত, সুরমা, পত্রিকা, বাংলা টাইমস, দেশ উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সাপ্তাহিক জনমত প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালে।

সাপ্তাহিক জনমতের সম্পাদক নবাব উদ্দিন বলেন, ব্রিটেনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে সংঘবদ্ধ করতে পত্রিকাটি প্রকাশ করা হয় এবং আজ পর্যন্ত টিকে আছে স্বগৌরবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত