মাঈনুল ইসলাম নাসিম

২৫ জুন, ২০১৬ ১১:০৫

বাংলাদেশ-স্লোভেনিয়া : মধু ও কয়লা আমদানি-রপ্তানির সুযোগ

বাংলাদেশ থেকে মধু আমদানি করতে আগ্রহী স্লোভেনিয়া, একইসাথে তারা নিজস্ব খনি থেকে আহরিত কয়লা বাংলাদেশে রপ্তানির চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন স্লোভেনিয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম আবু জাফর। প্রতিবেশী দেশ অস্ট্রিয়া থেকে দেখা হয়ে থাকে স্লোভেনিয়া। রাজধানী ভিয়েনাতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও স্থায়ী মিশনের মাধ্যমে অস্ট্রিয়ার পাশাপাশি হাঙ্গেরি ও স্লোভেনিয়ার দায়িত্ব পালন করছেন পেশাদার কূটনীতিক এম আবু জাফর। স্লোভেনিয়া-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি সম্প্রতি উঠে আসে এই প্রতিবেদকের সাথে তার একান্ত আলাপচারিতায়।
 
রাষ্ট্রদূত এম আবু জাফর জানান, “অস্ট্রিয়া ও হাঙ্গেরির মতো স্লোভেনিয়ার সাথেও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ভিত্তি ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। মার্শাল টিটোর নেতৃত্বে সাবেক যুগোস্লাভিয়া তখন বাংলাদেশকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছিল এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে যুগোস্লাভিয়া সফর করেন। ইতিহাসের পথ পরিক্রমায় তারই উত্তরসূরি স্লোভেনিয়া আজ একটি প্রজাতন্ত্র, যার লোকসংখ্যা মাত্র ২০ লাখ। বাংলাদেশের সঙ্গে স্লোভেনিয়ার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বছরে প্রায় ৩৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার। রপ্তানির ভারসাম্য বাংলাদেশের অণুকুলে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি তাদের সাথে সম্পর্ক সম্প্রসারণের”।
 
রাষ্ট্রদূত বলেন, “স্লোভেনিয়া বাংলাদেশ থেকে মধু আমদানির চেষ্টা করছে। আমরা তাদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি কীভাবে এটি করতে হবে। স্লোভেনিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি আছে স্লোভেনিয়াতে এবং এর সভাপতি হিসেবে যিনি দায়িত্ব পালন করছেন তার কিছু ব্যবসা ও বিনিয়োগ রয়েছে বাংলাদেশের স্টক মার্কেটে। এছাড়া তারা চেষ্টা চালাচ্ছে এগ্রিকালচার সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে বাণিজ্য সম্প্রসারণের। এমনকি স্লোভেনিয়াতে যেহেতু কয়লাখনি আছে, তাই তারা চেষ্টা করছে বাংলাদেশে কয়লা রপ্তানি করতে। শিক্ষা-গবেষণা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ-স্লোভেনিয়া আরো নিবিড়ভাবে কাজ করার একটা অপার সম্ভাবনা রয়েছে”।
 
দেশটিতে উচ্চশিক্ষার সুযোগ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত এম আবু জাফর জানান, “হাঙ্গেরির মতো স্লোভেনিয়াতেও তুলনামূলক অনেক স্বল্পমূল্যে বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চাইতেও কম খরচের টিউশন ফি দিয়ে এখানে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে। দরখাস্ত করলেই তারা এখানে ভর্তি হতে পারেন। স্লোভেনিয়ার শিক্ষাগত মানও অনেক ভালো। আমি আশা করবো আমাদের দেশ থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা যারা এখানে পড়তে আসতে আগ্রহী তারা এই সুযোগটা নিতে পারেন। স্লোভেনিয়ার সাথে আমাদের রাজনৈতিক সম্পর্ক অত্যন্ত বন্ধুপ্রতীম। অতি সম্প্রতি স্লোভেনিয়া তাদের কূটনীতির ২৫ বছর উদযাপন করেছে এবং সেখানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে আমাকে নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল। আমি তাদের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছি বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে”।
 
রাষ্ট্রদূত আরো জানান, “স্লোভেনিয়াদের বেশ পজিটিভ মনোভাব রয়েছে বাংলাদেশের ব্যাপারে এবং তারা চায় দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরো ভালো হোক, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিভিন্ন ক্ষেত্র আরো সম্প্রসারিত হোক বিশেষ করে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রগুলো। এসব বিষয়ে তারা সজাগ রয়েছে”। এদিকে ২৫ বছর আগে স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর স্লোভেনিয়াতে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের মন্ত্রীসভার সদস্য হিসেবে বর্তমানে স্লোভেনিয়া সফরে রয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম। দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে যাতে এখন থেকে নিয়মিত ফরেন অফিস কনসাল্টেশন (এফওসি) অনুষ্ঠিত হয়, তার জন্য একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে ২৪ জুন। একইদিন স্লোভেনিয়া ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধি দল দেখা করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সাথে। কয়েক মাস পর তাদের বাংলাদেশ সফরের কথা রয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত