মাঈনুল ইসলাম নাসিম

২৬ জুন, ২০১৬ ০৯:০৫

‘দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ভালো থাকায় ব্রেক্সিটে বাংলাদেশ উদ্বিগ্ন নয়’

 ব্রেক্সিট গণভোটের পরিণতিতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের প্রস্থান স্বত্বেও দেশটির সাথে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সম্পর্কে তেমন কোন প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন গত ৭ বছর ব্রাসেলসে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালনকারী বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইসমাত জাহান। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সবচাইতে সিনিয়র এই নারী কূটনীতিককে ইতিমধ্যে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় যুক্তরাজ্যে নতুন হাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। চলতি গ্রীষ্মেই লন্ডনে তাঁর নতুন দায়িত্বে যোগ দেবার কথা রয়েছে। ইইউ থেকে ইউকে’র বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় বাংলাদেশের স্বার্থ কীভাবে রক্ষিত হবে তা নিয়ে এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে বেশ আস্থার সাথেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন পেশাদার কূটনীতিক ইসমাত জাহান।
 
জাতিসংঘের Committee on Elimination of Discrimination against Women (CEDAW)-এর প্রভাবশালী সদস্য রাষ্ট্রদূত ইসমাত জাহান বলেন, “যুক্তরাজ্যের গণভোট সেটা তাদের জনগণের ব্যাপার, রাজনৈতিকভাবে এখানে আমাদের কিছু বলার নেই। কিন্তু বাংলাদেশের স্বার্থের দিকটা দেখতে হলে বলবো, আমরা এখনো বিষয়টি দেখছি, পর্যবেক্ষণ করছি। কারণ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে আমাদের যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে অর্থাৎ ‘এভরিথিং বাট আর্মস’ ইবিএ সুবিধা নিয়ে শুল্ক ও কোটামুক্ত পণ্য রপ্তানির, এখন আমাদের সেটা দেখতে হবে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সে ধরনের কিছু নতুন করে করতে হবে নাকি অন্য কিছু আমাদের ভাবতে হবে। আসলে সবকিছুই এখনো প্রাথমিক অবস্থায় থাকায় এখনই সবকিছু স্পষ্ট নয়”।
 
“এটা সত্য যে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মাধ্যমেই যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিলো, তথাপি আমরা যেহেতু কমনওয়েলথের মেম্বার যুক্তরাজ্যের সঙ্গে, সেই ক্ষেত্রে আমার মনে হয় না বাংলাদেশের ওপর তেমন কোন বিরূপ কিছু হবে। যদিও কমনওয়েলথ এখন আর আগের মতো কোন জোরদার সংস্থা নয়, তবে যুক্তরাজ্য কমনওয়েলথের লিডার হওয়ায় তারা হয়তো চেষ্টা করবে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সাথে নতুন করে বিশেষ কিছু চিন্তাভাবনা করতে। বলতে দ্বিধা নেই, যুক্তরাজ্যের গণভোটের ফলাফল হতবাক করেছে পুরো পৃথিবীকে। অনেকেই ভেবেছিলেন ঠিক এরকম কিছু হয়তো হবে না, কিন্তু এখন যেহেতু হয়েই গিয়েছে তাই বাংলাদেশের তরফ থেকে আমরা অবশ্যই এখন পর্যালোচনা করেও  ইইউ’র মাধ্যমে ইউকে’র সঙ্গে আমাদের যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিলো সেটা”।
 
সিনিয়র কূটনীতিক ইসমাত জাহান জানান, “আশার কথা হচ্ছে, ইউকে’র সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কিন্তু বেশ ভালো, তা আপনি আমি আমরা সবাই জানি। বিশেষ করে যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ ‘ট্র্যাডিশনাল টাই’ বা ঐতিহাসিক সম্পর্ক যেটা ছিলো এবং আছে তা তো থাকবেই, একই সাথে আমাদের চেষ্টা থাকবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো উন্নত করতে। এখানটায় আমি আবারো সেই ট্রেডের বিষয়টিকেই হাইলাইট করতে চাই কারণ বাংলাদেশ থেকে চিংড়ি মাছ সহ হিমায়িত খাদ্য ইউকে’র মাধ্যমে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলোতে পৌঁছায়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে টোটাল বিষয়টি আমরা কীভাবে মোকাবেলা করবো তা এখনই সবকিছু বলা যাচ্ছে না”।
 
রাষ্ট্রদূত জানান, “যেহেতু অক্টোবরে যুক্তরাজ্যে নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণ করবেন তাই নতুন সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কটাকে আরো উন্নত করার চেষ্টা করবো আমরা। আমাদের অনেক বাংলাদেশী আছেন যুক্তরাজ্যে, তাদের স্বার্থের বিষয়টাও আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ছাড়াই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত্তিতে যুক্তরাজ্য আগে থেকেই আমাদের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী দেশ। রেফারেন্ডাম ইস্যুতে যুক্তরাজ্যের জনগণ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমাদেরকে অবশ্যই সেটাকে সম্মান দেখাতে হবে”।
 
২০০৯ থেকে ২০১৬ ব্রাসেলসে সফল রাষ্ট্রদূত ইসমাত জাহান এমন এক সময়ে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে যোগ দিতে যাচ্ছেন যখন সরকার পরিবর্তনের তোড়জোড় যুক্তরাজ্যে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশের এই ঝানু কূটনীতিক অতীতের মতো এবারও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সফল হলেই বিলেতে স্বার্থ রক্ষা হবে বাংলাদেশের।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত