সিলেটটুডে ডেস্ক

২৮ জুন, ২০১৬ ০২:৪৮

জামায়াত ও ওলামালীগের রাজনীতি বন্ধের দাবিতে জাতিসংঘের সামনে বিক্ষোভ

বাংলাদেশের গুপ্তহত্যা ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদ, খুনিদের গ্রেপ্তার, জামাত-শিবির ও ওলামালীগের রাজনীতি বন্ধের দাবিতে রবিবার (২৬ জুন) দুপুরে নিউইয়র্কের জাতিসংঘের সদর দফতরের সামনে কয়েকটি সংগঠনের সমন্বিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

জাতিসংঘ সদর দপ্তরসংলগ্ন সড়কপথে দুপুর থেকে প্রতিবাদী ব্যানার-ফেস্টুনসহ সমাবেশে সমবেত হতে থাকেন সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা। এ সময় তাঁরা ‘জয় বাংলা’, ‘তুমি কে, আমি কে—বাঙালি বাঙালি', 'একাত্তরের বাংলায়-জঙ্গিবাদের ঠাঁই নাই’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।

এই সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ মাইনরিটি রাইটস মুভমেন্ট, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট সেন্টার, সম্প্রীতি মঞ্চ, সৎসংঘ, গণজাগরণ মঞ্চ, হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ, সৎসঙ্গ ইউএস, চিটাগাং হিল ট্রাকস ফাউন্ডেশন সহ বেশ কয়েকটি সংগঠন।

প্রতিবাদ সমাবেশে সম্মিলিত ঘোষণাপত্র পাঠ করেন কম্যুনিটি এক্টিভিষ্ট শুভ রায়। সঞ্চালনা করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যুক্তরাষ্ট্র  শাখার সভাপতি মিথুন আহমেদ।

ঘোষণাপত্রে বলা হয়, আমরা গভীর আতঙ্ক  ও উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছি-বাংলাদেশের মানচিত্রকে প্রতিনিয়ত রক্তাক্ত করা হচ্ছে। দেশে এখন অসহনীয় আতঙ্ক ও ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মুক্তিযুদ্বের অজর্নকে ধ্বংস, অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে হত্যা, মুক্তিবুদ্ধির দেশকে নিশ্চিহ্ন ও প্রগতীর চাকাকে স্তব্দ করে দেয়ার জন্যই একের পর এক ঘাতকেরা হত্যার হোলি খেলছে। কিন্তু এসব হত্যাকাণ্ডের স্বরূপ উন্মোচন হচ্ছে না। ফলে দীঘর্তর হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল।

গত বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ১০ জুন পযর্ন্ত প্রায় দেড় বছরে এ রকম হত্যাকাণ্ড ঘঠেছে ৪৯ টি। এদেঁর মধ্যে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রীষ্ট ধর্মাবলম্বী যেমন আছেন, তেমনি  আছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকী, সমকামী অধিকার কর্মী জুলহাস ও নাট্যকর্মী মাহবুব তনয়। নিহত ব্যক্তিদের তালিকায় জাপান ও ইতালির দুই নাগরিক, লেখক, প্রকাশক, ব্লগার, পীর, ফকির, সাধু, পুরোহিত, বৌদ্ধ ভিক্ষু, খ্রীষ্টান ধমর্যাজক, শিয়া, লালন ভক্ত, পীরের অনুসারী রয়েছেন। আগাম ঘোষণা দিয়ে দেশব্যাপী জঙ্গী তৎপরতা ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাড়াঁশি অভিযান শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাবনায় একটি আশ্রমের সেবায়েত নিত্যরঞ্জন পান্ডেকে কুপিঁয়ে হত্যা করেছে দুবৃত্তরা ঝিনাইদহে পুরোহিত হত্যার পর পরই এই ঘটনা ঘটেছে । সরকার জঙ্গিবাদের প্রতি তাদের জিরো টলারেন্সের কথা বলছে, অন্যদিকে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার বা বিচারের সম্মুখীন করতে সরকার ব্যর্থ হচ্ছে। তাঁরা বলেন, এখন পর্যন্ত একটি হত্যাকাণ্ডেরও বিশ্বাসযোগ্য সমাধান করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।  

এই সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে সংখ্যালঘু এবং মুক্তমনাদের লক্ষ্য করে আক্রমণ ও হত্যা করা হচ্ছে। একটি খুনের ঘটনা ঘটছে, গনমাধ্যমে তা নিয়ে হৈ চৈ হচ্ছে, পুলিশ প্রশাসন তথা সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ হচ্ছে, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না- ইত্যাদি হুংকার শোনা যাচ্ছে কিন্তু খুন বন্ধ হচ্ছে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই খুনিরা ধরা ছোয়ার বাইরে। একদিকে বাংলাদেশে ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতি নিষিদ্ধ করা এবং মৌলবাদ, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসযোগ্য অবস্থান নেওয়ার জন্য তাঁরা সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।

সমাবেশ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী আওয়ামীলীগের নেতারা সারা বাংলাদেশে সংখালঘু সম্প্রদায়ের উপর ন্যাক্কারজনক ভাবে অত্যাচার, নিপীড়ন, ঘরবাড়ি ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান দখল করতে তৎপর হয়ে উঠেছে।

সমাপনী বক্তব্যে অনুষ্ঠানের সভাপতি, কলামিষ্ট ও মানকাধিকার নেতা শিতাংসু গুহ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে ধ্বংস, অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে হত্যা  ও প্রগতির চাকাকে স্তব্ধ করে দেয়ার জন্যই একের পর এক ঘাতকরা হত্যার হোলি খেলছে।  ৭১এর মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিফলন, ৭২এর সংবিধান পুনঃ প্রতিষ্ঠিত ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তাবায়ন করতে হলে দেশ  থেকে ধর্মীয় রাজনীতি ও জঙ্গীবাদকে আপনার বলিষ্ট্য নেতৃত্বে নির্মূল করতে হবে।

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, জাস্টিস ফর হিন্দুজ'র সভাপতি ভিন্সেন্ট ব্রুনো, ইন্ডিয়ান ইন্টেলেকচুয়াল ফোরামের সভাপতি আরিশ সাহানি, হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি নবেন্দু বিকাশ দত্ত ও সাধারণ সম্পাদক সুশিল সাহা , নিউইয়র্ক গণজাগরণ মঞ্চের গোপাল জয়তুযর্র্ স্যান্যাল,চিটাগাং হিল ট্রাকস ফাউন্ডেশনের কৃষ্ণা চাকমা, সৎসঙ্গ ইউ, এস,'র কৃষেন্দু রুদ্র, দিবাকর রায়,ঝুলন চৌধুরী, বিজয় ভৌমিক, সুভাষ ভৌমিক জয় তূর্য চৌধুরী প্রমুখ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত