সিলেটটুডে ডেস্ক

২৫ জানুয়ারি, ২০২০ ২১:৩৫

দেশে ফিরতে চান চীনে আটকে পড়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা

করোনাভাইরাস

চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৪১ জন প্রাণ হারিয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১ হাজার ৩০০ জন। হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকেই এই ভাইরাস ছড়ানো শুরু হওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এ শহরের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ফলে সেখানকার বাসিন্দারা এক প্রকার আটকা পড়েছেন।

এদিকে উহান শহরে আটকে পড়েছেন অন্তত ৫০০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী।  উহানে আটকে পড়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা জানান, উহানের অধিকাংশ দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এদিকে তাদের মজুতকৃত খাবারও ফুরিয়ে আসছে। ফলে খুব শীঘ্রই তারা খাবারের সংকটে পড়বেন।

উহান শহরে প্রায় ১১ মিলিয়ন মানুষ বসবাস করেন। শহরের অধিবাসীদের শহর না ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ভাইরাসটি যাতে অন্য কোথাও ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সেজন্য উহান শহরের গণপরিবহন ব্যবস্থাও সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দরে সব যাত্রীবাহী বিমান বাতিল করা হয়েছে। শহরের বাইরে যাওয়ার প্রধান সড়কগুলো চেকপয়েন্টের মাধ্যমে বন্ধ করে রাখা হয়েছে।

হুবেই ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির শিক্ষার্থী আসিফ আহমেদ সৌরভ জানান, ভাইরাসটি যাতে অন্য কোথাও ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সেজন্য উহানের আশেপাশের আরও ১০টি শহরেও একইভাবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। প্রায় ৫০০ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এ শহরে আটকা পড়েছেন বলে জানান তিনি।

এদিকে রাকিবিল তূর্য (২৩) নামে একজন শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাহায্য চেয়ে পোস্ট করেছেন। মেকানিক্যাল অ্যান্ড অটোমেশন ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে হুবেই ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে পড়াশোনা করছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, সম্প্রতি চায়নাতে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শহর উহানে আমি বাস করছি। এখানে আমরা প্রায় ৫০০ জনেরও অধিক বাংলাদেশি উহানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর, মাস্টার্স ও পিএইচডি প্রোগ্রামে অধ্যয়নরত। উহান থেকে বহির্গামী সব বাস-ট্রেন এবং বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত অন্তত ২৫ জন মারা গেছে এবং ৬০০-এরও বেশি মানুষ এতে আক্রান্ত হয়েছে। আমরা চাইলেও এখন নিজ দেশে ফিরে যেতে পারছি না।

এমন পোস্ট করার পর বাংলাদেশের একটি জাতীয় দৈনিক তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, দেড় বছর আগে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য উহানে যান। বর্তমানে তিনি মেকানিক্যাল অ্যান্ড অটোমেশন ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে হুবেই ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে পড়াশোনা করছেন।

তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি চললেও তাকে ২৩ জানুয়ারি থেকে হোস্টেলে বন্দিজীবন কাটাতে হচ্ছে। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে তার মতো অন্তত আরও ১৪০ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আটকে পড়েছেন। কিন্তু, বাংলাদেশি দূতাবাস কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কেউই এখন পর্যন্ত তাদেরকে উদ্ধারের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

শুধু তাই না, যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় আমাদের খাবারও ফুরিয়ে আসছে। শিক্ষার্থীরা সবাই আতঙ্কিত এবং চিন্তিত, জানান তূর্য।

তিনি জানান, এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি। কেউ যাতে আক্রান্ত না হতে পারে সেজন্য এমন কঠোর সর্তকতা জারি হয়েছে।

তূর্য আরও বলেন, “এখানে আমাদেরকে অনেক বিধিনিষেধের মধ্য দিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে। কোথায় যাচ্ছি, কেনো যাচ্ছি, এসব কিছু লিখে রেজিস্টার খাতায় স্বাক্ষর করে তবেই আমরা বাইরে যেতে পারছি। আবার সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে। তাই আমরা কোনোভাবেই খাবার সংগ্রহ করতে পারছি না।”

শিক্ষার্থীরা জানান, বেইজিংয়ে বাংলাদেশি দূতাবাসের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করেছিলেন। তবে, দূতাবাস থেকে বলা হয়েছে কেবল কোনো সমস্যায় পড়লে যেনো তাদেরকে জানানো হয়।

এদিকে, ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের কারও সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হয়নি।

চীনে আটকে পড়া শিক্ষার্থীরা হটলাইন নম্বরের (https://www.bdembassybeijing.org/contact-us/) মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারবেন বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত