নিজস্ব প্রতিবেদক

২০ অক্টোবর, ২০২৩ ০৯:৩৯

‘লবণ চা’ প্রদর্শনীতে মূর্ত চা-শ্রমিকের যাপিত জীবন

চা শ্রমিকদের দিনের শুরু হয় ‘লবণ চা’ পান করে। এই ‘লবণ চা’ বুঝায় চা শ্রমিকরা কতটা বঞ্চিত শোষিত। চা শ্রমিকদের যাপিত জীবন ও দীর্ঘদিনের জমে থাকা আঘাতের কথা তুলে ধরেছেন আলোকচিত্রী রেজোয়ানা চৌধুরী জিনিয়া।

বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) বিকাল পাঁচটায় সিলেটের খাদিম চা বাগানের বুরজান চা কারখানার খাদিমনগর, পূজামণ্ডপে রেজোয়ানা চৌধুরী জিনিয়ার প্রথম একক আলোকচিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন হয়। সাধারণ চা শ্রমিকদের দিয়ে এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়।

প্রদর্শনীতে ৪১টি ছবি নিয়ে প্রদর্শিত হয়েছে। প্রদর্শনীটি সবার জন্য উন্মুক্ত চলবে ১৯ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত। প্রদর্শনীর ডিজাইন করেছে কালী কালেক্টিভ এবং এর পোস্টার ডিজাইন করেছেন সব্যসাচী হাজরা।

এদিকে এই প্রদর্শনীকে ঘিরে চা শ্রমিক ও তাদের সন্তানদের মধ্যে বেশ উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায়। বাগানের বস্তি লেনের বাসিন্দা চা শ্রমিক সেবা ছত্রী বলেন, সব সময়তো সবাই ছবি তোলে। কিন্তু কেউতে ছবি দেখায় না। শুনেছি এখানে চা শ্রমিকদের ছবি দেখাচ্ছে। তাই কাজ থেকে এসেই এখানে চলে আসছি। খুব ভাল লাগছে ছবিগুলো দেখে।

সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী আঁখি রানী ছত্রী এসেছেন তার ছোট ভাইকে নিয়ে। আঁখি বলে, এরকম ছবি আর কোনোদিন দেখিনি। এখানে আমাদের পরিচিত অনেকের ছবি আছে। ওই ছবিটা আমাদের বুরজান ফ্যাক্টরি মণ্ডপে তোলা।

আলোকচিত্রী রেজোয়ানা চৌধুরী জিনিয়া বলেন, আমি প্রায় এক দশক ধরে এই ছবিগুলো তুলেছি। সিলেট অঞ্চলে বিভিন্ন জনপদে, ভিন্ন ভিন্ন চা বাগানে ছবিগুলি তোলা। ছবি তোলার বড় একটা সময় খাদিম নগর ও বুরজান চা ফ্যাক্টরির আওতায়, ছড়া গান, বুরজান, কালাগুল, গুলনি চা বাগানে এবং শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন চা বাগানে কাজ করেছি।

প্রদর্শনীর নামকরণ নিয়ে তিনি বলেন, বিলাসী চা এর দুনিয়ায় খুব সম্ভবত সবচেয়ে নিম্ন স্বাদের চা "লবণ চা"। এই চা শুধু স্বাদ নয়, সমাজে শ্রেণিও নির্ণয় করে। চিনি, দুধসহ যাবতীয় চায়ের উপকরণ যাদের সামর্থ্যের বাইরে তারাই খান লবণ চা। লবণ চা খাওয়ায় ইতিহাসও চা শ্রমিকদের জীবনীর মতোই দীর্ঘ। দুইশত বছরের সুপরিকল্পিত শোষণ কি ভীষণ শিকড় গেড়েছে শ্রমিকের জীবনবোধ এ! যা সাদা চোখে দেখে বোঝা কঠিন। এখানে শ্রমিকদের ঘাতে- প্রতিঘাতে- সংঘাতে বেঁচে থাকার লড়াইটাই শুধু আসল। চা শ্রমিকদের দিনের শুরু হয় লবণ চা পান করে। এইসব কারণে লবণ চা শিরোনাম করেছি।

রেজোয়ানা চৌধুরী জিনিয়া বলেন, সবাই ঢাকাতেই প্রদর্শনী করে, কিন্তু আমার চিন্তা ছিল যাদের নিয়ে কাজ তাদের মাঝেই প্রথম প্রদর্শনী করার। আমি চাই যে চা শ্রমিকরাই তাদের কাজটা প্রথমে দেখুক। আর আমিও কাজ করার সময় তাদেরকে বলেছিলাম যে তাদেরকে কাজটা দেখাব। এই চিন্তা ভাবনা থেকেই সিলেটে প্রদর্শনী করা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত