একুশ তাপাদার, কলকাতা থেকে

০২ মে, ২০১৬ ২৩:২৫

পথের পাঁচালী : ৬০ বছর পেরিয়ে

লাঠিতে ভর দিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে এক প্রৌঢ় সিনেমা হলে ঢুকছেন। নতুন কোন সিনেমা দেখতে নয়। বহু পুরনো আর চিরনতুন এক সিনেমায় লাইন দিয়েছেন তিনি। আলাপে জানালেন তাঁর বয়স যখন ছিল ২৫, সেসময় বন্ধুদের সাথে প্রথমবার দেখেছিলেন পথের পাঁচালী । ৬০ বছর পেরিয়ে ৮৫'র কোটায় দাঁড়ানো  সুনির্মল বিশ্বাস এবার নাতনীর সাথে এসেছেন সেই পুরনো রোমাঞ্চ নিয়ে।


ছবি:পথের পাঁচালীর চিত্রায়নে ব্যবহৃত মিচেল ক্যামেরা

এই ৬০ বছরে অনেকে এমন প্রৌঢ় হয়েছেন কিংবা জীবনের পাট চুকিয়েছেন কিন্তু  অপু, দুর্গা, সর্বজয়া, হরিহর, আর ইন্দির ঠাকুরন ৬০ বছর পেরিয়েও রয়ে গেছেন একই বয়সে স্থির, দীপ্যমান, জলজ্যান্ত! আর বিভূতিভূষণের গল্প থেকে এদের ফ্রেম বন্দি করার স্রষ্টা হিসেবে হাতে পাইপ ধরে একইভাবে তাকিয়ে রয়েছেন সত্যজিৎ।
 
আজও অপুর 'রাজপুত্তুর' সাজার দৃশ্যে বরাবরের মতই হেসে উঠেন হলভর্তি দর্শক। অপু-দুর্গার কাশবন পেরিয়ে ট্রেন দেখার দৃশ্য ঘর থেকে বেরিয়ে পৃথিবীটাকে দেখার আকাঙ্খা একইরকমভাবে বাড়িয়ে দেয়। ইন্দির ঠাকুরনের মৃত্যু দৃশ্যের পর ব্যাকগ্রাউন্ডে বৃদ্ধার কণ্ঠে বেজে উঠা- "হরি দিন তো হেল সন্ধ্যা হল পার কর আমারে"  মৃত্যুর করুনরসে আসক্ত করে মানুষকে। যেমন করে আসক্ত করে আসছে বিগত ৬০ বছর।

২ মে অস্কারজয়ী বাংলা চলচ্চিত্রের দিকপাল সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিন উপলক্ষে কলকাতার নন্দন থিয়েটার হলে আয়োজিত হয় "অপু ট্রিলজির" বিশেষ প্রদর্শনী ও সত্যজিতের চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত ক্যামেরা, ছবি চলাকালীন সময়ের নানান আলোকচিত্র, সত্যজিতের হাতের লেখা স্ক্রিপ্ট ইত্যাদির প্রদর্শনী।

ছবি; সত্যজিতের হাতের লেখা পথের পাঁচালীর স্ক্রিপ্ট

পথের পাঁচালীতে কাজ করার সুযোগ পেয়েই নিজেকে সম্মানিত মনে করতেন পণ্ডিত রবিশংকর।  কথার বাইরে সুরের মূর্ছনা আর দৃশ্যায়ন যে কতটা মর্মস্পর্শী হতে পারে, দুর্গার মৃত্যু সংবাদ স্বামীকে বলবার সময় সর্বজয়ার সেই দৃশ্যে দর্শকরা বারবার টের পান। সিনেমার পর্দা থেকে বেরিয়ে বাস্তবের সামনে এসে বারবার হাহাকার তৈরি করেন সর্বজয়া। সিনেমা শেষে শুরু হওয়া প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে পন্ডিত রবীশংকর সহ এই চলচ্চিত্রে কাজ করা বহুগুণীজনের সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতার কথা।



ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে  ২ মে (সোমবার) বিকেল ৪টায় উদ্বোধন করা হয় "পথের পাঁচালি: ৬০ বছর পেরিয়ে" বিশেষ প্রদর্শনীর। এই প্রদর্শনীতে রাখা হয়েছে পথের পাঁচালির চিত্রগ্রহণে ব্যবহৃত মিচেল ক্যামেরা। সেইসময় সিনেমাটি দেখে বিশিষ্টজনদের বাঁধাই করা প্রতিক্রিয়া। যার মধ্যে ঋত্বিক কুমার ঘটক, মৃণাল সেন, প্রতিভা বসুর করা ভাবনার খোরাক জাগানো কথাবার্তায় বারবার চোখ চলে যায়। ছিল সত্যজিতের নিজের হাতে লেখা পথের পাঁচালীর প্রথম স্ক্রিপ্ট। ছিল সত্যজিতের অনেক অভিজ্ঞতার কথা, অনেক প্রশ্নের জবাবও। 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত