শাবি প্রতিনিধি

১৮ জুন, ২০২০ ০০:১২

শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাবি প্রশাসনের মামলা: সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা নাসিমকে নিয়ে 'কটূক্তি' করার অভিযোগে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থী মাহির চৌধূরীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ মামলা নিয়ে অনলাইনভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের অনেকে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

জানা যায়, মাহির চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের (সেশন ২০১৬-১৭) শিক্ষার্থী। তিনি গত শনিবার নিজের ফেসবুক একাউন্ট থেকে সদ্যপ্রয়াত সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমকে নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন।

স্ট্যাটাসটি ছড়িয়ে পড়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীসহ অনেকে এর সমালোচনা করেন এবং স্ট্যাটাসদাতাকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানান। তবে পরবর্তীতে ওই শিক্ষার্থী স্ট্যাটাসটি মুছে দিয়ে পাল্টা স্ট্যাটাসের মাধ্যমে এবং লাইভে এসে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান।

এরপরও এই স্ট্যাটাসকে কুরুচিপূর্ণ উল্লেখ করে সোমবার (১৫ জুন) দুপুরে ওই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. ইশফাকুল হোসেন বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন।

এনিয়ে জাহাঙ্গীর নোমান নামের শাবির সাবেক এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লিখেন, ''বলছিলাম কি অত্যুৎসাহী হয়ে মামলাটা যে দিলেন তা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন এখতিয়ারে দিলেন? ছাত্রলীগের যারা বিষয়টি আপনাদের হাতে তুলে দিয়েছিল তারাও তো শেষমেশ পিছিয়ে আসলো তা আপনাদের এত আক্রোশ কেন এই পিতৃহারা ছেলেটির প্রতি? স্ট্যাটাস দিয়ে, ভিডিও করে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার পর এতটা ক্ষোভ কেন? নিজেদের তো বলেন, 'আমরা তোমাদের পিতার মতো' কিন্তু কাজটা তো করলেন প্রভুর মতো। একটা কথা মনে রাখলে ভালো হয়, Every sin carries its own punishment.

সে একজন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ স্ট্যাটাস দিয়েছে যা বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ক্ষুন্ন হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ক্ষুন্ন হওয়া মানে রাষ্ট্রের মানহানি হওয়া। আর এ ছেলের বিরুদ্ধে আরো বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। সে কিছুদিন আগে অনলাইন ক্লাস বর্জনের আন্দোলনেও নেতৃত্ব দিয়েছে।

অনলাইন ক্লাস বর্জনে নেতৃত্ব দেওয়ার অপরাধেই তো মামলাটা দিলেন তা সেখানে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে টেনে আনার দরকার কি ছিল? যা করলেন তা খুবই দুঃখজনক কাজ করলেন, একটা শিক্ষার্থীর একাডেমিক লাইফ ধ্বংস করে দিলেন যেখানে তার জীবন গড়ে দেওয়ার কথা ছিল। আর দয়া করে কোন সভা-সেমিনারে বড় গলায় বলবেন না, 'আমরা তোমাদের অভিভাবক। এই করোনাকালেও আপনাদের মানবিকতা জাগ্রত হলো না, তাহলে আর কবে?''

নাফিজ ইমতিয়াজ আদনান নামের আরেকজন লিখেন, "সাবাস বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সাবাস সংশ্লিষ্ট শিক্ষক! মন্ডলী। আপনারা এই ন্যাক্কারজনক অন্যায়ের বিরুদ্ধে যে নজিরবিহীন ভূমিকা নিয়েছেন তা অতুলনীয়। আজ আমি গর্বিত আমি একজন সাসটিয়ান। সকল অন্যায়ের বিষদাঁত ভেঙ্গে দিয়ে, গুড়িয়ে দিয়ে আপনাদের হাত ধরে বিশ্ববিদ্যালয় এইভাবেই সামনে এগিয়ে যাবে, ভালবাসা অবিরাম"।

নুরুল হোসেন লিখেন, "সেই ১৯৫২ সালে সালাম, রফিক, জাব্বারসহ রক্ত দিয়েছিল বাকস্বাধীনতার জন্য অর্থাৎ স্বাধীন ভাবে বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্য। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু ডাক দিয়েছিলেন ন্যায্য অধিকারের জন্য। তাহলে কি ৭১ এ এই বৈষম্য মূলক প্রথা চালু করার জন্য বঙ্গবন্ধু ডাক দিয়ে ছিল! আপনারা বলেন আপনারা বঙ্গবন্ধুর আর্দশ ধারণ করেন তাহলে মাহিরের কেন বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছেন!!! অনলাইন ক্লাস নামে বৈষম্য সৃষ্টি করছেন!!! বঙ্গবন্ধুতো বলেছিলেন কেউ যদি  ন্যায্য কথা বলে আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলে ও মেনে নিব!!! আপনারা যা করতেছেন এইগুলো কি ন্যায্য কথা!!! আজ সত্যি বলতে হচ্ছে  বলতে হয় "স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে, স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন"।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক সাবেক শিক্ষার্থী, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা স্ট্যাটাস দিয়ে, প্রতীকী ছবি এঁকে, প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ মামলার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান। তাছাড়া অবিলম্বে মাহির চৌধুরীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।

এ প্রসঙ্গে ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রাশেদ তালুকদার বলেন, এখনও পর্যন্ত কোন শিক্ষার্থী তাদের দাবি নিয়ে আমার সাথে যোগাযোগ করেনি। তবে শিক্ষক হিসেবে আমি মনে করি একজন শিক্ষার্থীর আলোচনা-সমালোচনা করার অধিকার অবশ্যই আছে। তবে তাকে যে কারও সাথে ছাত্রত্ব সুলভ আচরণও করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ অনলাইনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে বলেন, এটি সম্পূর্ণ বিচারাধীন প্রক্রিয়া। এ বিষয়ে মন্তব্য করা মানে আদালতকে অবমাননা করা। ক্ষমা চাইতে হবে ব্যক্তি মোহাম্মদ নাসিমের কাছেই। তিনি বা তার পরিবার ক্ষমা করে দিলে তা ভিন্ন কথা। অন্যথায় সে যদি দোষী বলে প্রমাণিত হয় তাহলে শাস্তি ভোগ করতে হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত