নিজস্ব প্রতিবেদক

১৬ জানুয়ারি, ২০২২ ১৭:২২

এখনও অবরুদ্ধ শাবি উপাচার্য, ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন

এখনও অবরুদ্ধ রয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। রোববার (১৬ জানুয়ারি) এ প্রতিবেদন লিখা পর্যন্ত বেলা ৩টা থেকে উপাচার্য এম এ ওয়াজেদ মিয়া ভবনে (আইসিটি) অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায়  ক্যাম্পাসে বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মো. আজবাহার আলী শেখ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিকাল ৪টায় আইসিটি ভবনের সামনে উপাচার্যকে মুক্ত করতে পুলিশ উপস্থিত হয়। সেসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। ‘ক্যাম্পাসে পুলিশ কেন? প্রশাসন জবাব চাই’ স্লোগানে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা।

এর আগে, দুপুর আড়াইটার দিকে একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং শেষে রেজিস্ট্রার ভবন থেকে বের হলে উপাচার্যের পিছু নেই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে এম এ ওয়াজেদ মিয়া ভবনে এসে আশ্রয় নেন উপাচার্য। পুলিশও সেখানেই অবস্থান করছে।

কিছুক্ষণ আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ উপদেষ্টা অধ্যাপক রাশেদ তালুকদারসহ অন্যান্যরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ থেকে মুক্ত করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবার ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি মেনে না নেওয়ার আগ পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য সকল বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনও করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

আজও চতুর্থবারের মতো আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। সকালে তারা ক্যাম্পাসের গোল চত্বরে জড়ো হয়ে আন্দোলন শুরু করেন। এ সময় ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষকদের পরিবহন প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাত থেকে প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে বিক্ষোভ করছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের আবাসিক ছাত্রীরা। দফায় দফায় তাদের এই আন্দোলন চলছে। তাদের সঙ্গে আরও শিক্ষার্থী একাত্মতা পোষণ করে আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়েছেন।

গতকাল শনিবার (১৫ জানুয়ারি) আন্দোলন চলাকালে ছাত্রলীগের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এরপরে রাতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

আন্দোলনরত সিরাজুন্নেছা চৌধুরী হলের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, হলের প্রভোস্টের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম শেষ হওয়ার পর শনিবার (১৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টার দিকে শিক্ষার্থীরা ফের আন্দোলনে নামে। এ সময় তারা ক্যাম্পাসের গোলচত্বর এলাকায় অবস্থান নেন। আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে কিছু সংখ্যক ছাত্রও এসে কর্মসূচিতে যোগ দেন। এই অবস্থায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অ্যাম্বুলেন্স শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভস্থলে আটকা পড়ে। এ সময় ছাত্রলীগ কর্মীরা এসে আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়।

শিক্ষার্থীরা জানান, ক্যাম্পাসের গোল চত্বরে ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ এবং প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. আলমগীর কবির এসময় উপস্থিত ছিলেন।

এ ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে। তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ কর্মীরা। ছাত্রলীগ নেতা আশরাফ কামাল আরিফসহ কয়েকজন জানিয়েছেন, অ্যাম্বুলেন্সকে পথ করে দিতে গেলে তারা (আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা) বাধা দেয়। তখন এ নিয়ে আমাদের সঙ্গে তাদের হাতাহাতি হয়।

এর আগে, শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) তিন দফা দাবিতে উপাচার্য ভবনের সামনে অবস্থান নেয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। হল প্রভোস্টের পদত্যাগ, হলের ভেতরের অব্যবস্থাপনা দূর করা ও অবিলম্বে ছাত্রীবান্ধব হল প্রভোস্ট নিয়োগের দাবিতে তারা এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।

এদিন দুপুরের পর থেকে এই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন শাবিপ্রবির নারী শিক্ষার্থীরা।

এর আগে, বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) রাতে বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রীহলের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান ও হল প্রভোস্ট সহযোগী অধ্যাপক জাফরিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেন তারা।

বেগম সিরাজুন্নেছা চৌধুরী হলের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে দিবাগত রাত ৩টা পর্যন্ত তারা বিক্ষোভ করলেও হল প্রভোস্টসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের কোনো দাবি-দাওয়া আমলে নেয়নি। শিক্ষার্থীদের নিয়ে তারা বিন্দুমাত্র ভ্রূক্ষেপ করছেন না।

এখনও অবরুদ্ধ শাবি উপাচার্য, ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন

আপনার মন্তব্য

আলোচিত