নিজস্ব প্রতিবেদক

০৭ জানুয়ারি, ২০২৩ ২৩:২৮

যে কারণে সিকৃবিতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ

আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্বে শুক্রবার বিকেলে সংঘর্ষে জড়ায় সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি) ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ। এ সংঘর্ষে অন্তত ৬ জন আহত হন। এরমধ্যে গুরুতর আহত ওমর ফারুককে শুক্রবার রাতেই ঢাকায় প্রেরণ করা হয়।

জানা যায়, গত বছরের ২৯ জুলাই আশিকুর রহমান আশিককে সভাপতি ও মো. এমাদুল হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ২০ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।

এই কমিটি ঘোষণার পর থেকেই সিকৃবতি ছাত্রলীগ দুটি ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়ে।

সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরোধীবলয়ের নেতাদের অভিযোগ, সিকৃবি ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে শুক্রবার কর্মীসভার আয়োজন করেন। এর জের ধরেই শুক্রবার ক্যাম্পাসে দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে দাবি তাদের। যদিও এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সিকৃবি ছাত্রলীগের সভাপতি।

ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের গঠণতন্ত্র লঙ্ঘনের কারণের শুক্রবারের সংঘাতের ঘটনা ঘটে এমন অভিযোগ এনে সিকৃবি ছাত্রলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক প্রান্থ রহমান বলেন, ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা আংশিক কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ না করেই একটি বিভাগের কর্মীসভার আয়োজন করেন। যা গঠনতন্ত্রের লঙ্ঘন। এছাড়া সাধারণ সভা না ডেকেই নিজেদের ইচ্ছেমত তারা এই কর্মীসভা আহ্বান করেন।

প্রান্থ বলেন, কর্মীসভার খবর পেয়ে শুক্রবার আমরা বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তনে গেলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা আমাদের উপর হামলা চালায়।

তবে গঠতন্ত্র অঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার সিকৃবি ছাত্রলীগের সভাপতি আশিকুর রহমান আশিক বলেন, আমরা গঠনতন্ত্র মেনেই কার্যক্রম চালাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার কাজ চলছে। এছাড়া ইউনিট কমিটিগুলোও চাঙ্গা করার চেষ্টা করছি। সে লক্ষ্যেই কর্মীসভা ডাকা হয়েছিলো।

সাধারণ সভায় কর্মীসভায় সিদ্ধান্ত হয়নি স্বীকার করে তিনি বলেন, সাধারণ সভা ডাকা না হলেও কমিটির সব সদস্যকে কর্মী সভার বিষয়টি জানানো হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও অনুমতি নেওয়া হয়েছে।

কিছু বিশৃঙ্খলকারী শুক্রবার কর্মী সভায় হামলা চালায় অভিযোগ করে তিনি বলেন, তারা চায় না বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ শক্তিশালী হোক। এর পেছনে বাইরের অনেকেরও ইন্ধন রয়েছে।

ওমর ফারুককে ঢাকায় প্রেরণ

এদিকে, ছাত্রলীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে গুরুতর আহত ওমর ফারুকের চোখে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার দুপুরে ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটে তার অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। এর আগে শুক্রবার রাতেই তাকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়।

এ তথ্য জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মনিরুল ইসলাম বলেন, ওমর ফারুককে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে তার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় রাতেই ঢাকায় জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটে প্রেরণ করা হয়। সেখানে শনিবার দুপুরে তার অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। সে এখন চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে আছে। আমরা তার নিয়মিত খোঁজ খবর রাখছি।

সংঘর্ষে অপর আহতদের আঘাত গুরুতর নয় জানিয়ে তিনি বলেন, একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সংঘর্ষের কারণ খুঁজে বের করা হবে এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শনিবার ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলেও জানান প্রক্টর।

আহত ওমর ফারুকের একাধিক সহপাঠী জানান, ওমর ফারুক বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র এবং ছাত্রলীগ কর্মী।

তারা জানান, শুক্রবার সংঘর্ষকালে ইটের টুকরো ওমর ফারুকের চোখে এসে পড়ে। এতে তার চোখের মনি ফেটে যায়।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে কৃষি অর্থনীতি ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ ছাত্রলীগের কর্মীসভার আয়োজন করা হয়। তবে ছাত্রলীগের একাংশের নেতারা এতে আপত্তি জানান। শুক্রবার বেলা ৩ টার দিকে বিরোধী বলয়ের নেতাকর্মীরা কর্মীসভাস্থলের দিকে গেলে দুই পক্ষে সংঘর্ষ বেধে যায়। দুপক্ষই দেশিয় অস্ত্র নিয়ে পরস্পরকে ধাওয়া করে। এতে ৬ জন আহত হন।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আশিকুর রহমান অভিযোগ করেন, কোন ধরণের উস্কানি ছাড়াই ছাত্রলীগের সহ সভাপতি শরীফ হোসাইন, সাব্বির মোল্লা ও সাংগঠনিক সম্পাদক আরমান হোসেন ও আকাশ ভূঁইয়ার নেতৃত্বে কর্মীসভায় হামলা করা হয়েছে। পরে ছাত্রলীগ কর্মীরা তাদের প্রতিহত করে।

এদিকে, ক্যাম্পাসে সংঘর্ষ চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলেও আতংক ছড়িয়ে পড়ে। দুপক্ষেই হলে সশস্ত্র অবস্থান নিতে দেখা যায়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত