১৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১৩:৪৯
দেশের অন্যতম সবুজ ও পরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাস হিসেবে পরিচিত সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)। বর্তমানে বড় ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিভিন্ন একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন ও আবাসিক হল নির্মাণের কাজ একযোগে চলায় ক্যাম্পাসজুড়ে এখন চলছে ভারী যানবাহনের চলাচল, মাটি খোঁড়াখুঁড়ি ও ধুলাবালুর উৎপাত। ফলে এক সময়ের ‘গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন ক্যাম্পাস’ এখন পরিণত হচ্ছে ধুলায় ঢেকে যাওয়া একটি ‘বায়ুদূষণের কারখানায়’।
ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে শাবিপ্রবিতে একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। নতুন একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, শিক্ষার্থীদের জন্য দুইটি আবাসিক হল নির্মাণসহ বিভিন্ন রাস্তা সংস্কার কাজ চলছে। এই উন্নয়ন কার্যক্রমের মাধ্যমে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ক্যাম্পাসের অবকাঠামো আধুনিক রূপ নেবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে এই উন্নয়ন কার্যক্রমের কারণে নষ্ট হচ্ছে ক্যাম্পাসের পরিবেশ। খানাখন্দে ভরে যাচ্ছে সড়ক। ভারী ট্রাক, মিক্সার, ডাম্পার এবং নির্মাণ সামগ্রীর কারণে দিনরাত ধুলায় ঢেকে যাচ্ছে রাস্তাঘাট, ভবন ও গাছপালা। কিলোরোডসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় দেখা যাচ্ছে ধোঁয়াটে বাতাস।
একাধিক বিভাগের অন্তত ১০জন শিক্ষার্থীর সাথে কথা হলে তারা জানান, “এখন ক্যাম্পাসে হাঁটলেই চোখ-মুখে ধুলা লাগে, শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। আগে বাতাসে ছিল সতেজতা, এখন সেই জায়গা নিয়েছে ধুলা। মনে হয় আর ক্যাম্পাসে নয়, কোনো নির্মাণসাইটে হাঁটছি।”
সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী আলী আব্বাস শাহীন বলেন, “আমাদের শাবিপ্রবির ক্যাম্পাস বরাবরই পরিচিত ছিল তার সবুজ আর নির্মল পরিবেশের জন্য। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পুরো ক্যাম্পাসই যেন ধুলা-বালিতে ঢেকে যাচ্ছে। নির্মাণকাজের কারণে বাতাসে উড়ছে ধুলার মেঘ, যা শুধু সৌন্দর্যই নষ্ট করছে না, বরং শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীদের স্বাস্থ্যের জন্যও বড় ঝুঁকি তৈরি করছে। কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। রাস্তা সংস্কার, জল ছিটানো, এবং পরিবেশবান্ধব নির্মাণ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। আমরা সবাই চাই শাবিপ্রবি আবার ফিরে পাক তার আগের সেই পরিচ্ছন্ন, সবুজ, প্রাণবন্ত রূপে।”
স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা উল্লেখ করে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী জাকিয়া সুলতানা বলেন, “নির্মাণ কার্যক্রম বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস। সিমেন্ট, বালি ও মাটি থেকে উৎপন্ন ধুলা শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা, অ্যালার্জি, এমনকি ফুসফুসের রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। উন্নয়ন কাজ অবশ্যই দরকার, তবে তার সঙ্গে পরিবেশ সুরক্ষা ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিদিন এই পরিমাণ ধুলোবালি উড়লে শিক্ষার্থী ও আশেপাশের জীববৈচিত্র্য উভয়েরই ক্ষতি হবে।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ এছাক মিয়া বলেন, নির্মাণকাজ ও রাস্তা সংস্কার কাজ চলমান থাকায় ধুলোবালির উৎপন্ন হচ্ছে। বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে এই ধুলোবালি বেড়ে যাচ্ছে। এই ধুলোবালির জন্য শিক্ষার্থীদের অসুবিধা হচ্ছে। ধুলোবালি কমাতে প্রশাসনের সাথে কথা বলবো, এই সমস্যার দ্রুত সমাধান করা লাগবে।
এ ব্যাপারে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী মো. জয়নাল ইসলাম চৌধুরীকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন ধরেননি।
আপনার মন্তব্য