শফিকুল ইসলাম, রাবি প্রতিনিধি

১০ জুলাই, ২০১৭ ১৩:০৩

বাস ভাঙচুরের ছবি তোলায় রাবিতে সাংবাদিককে ছাত্রলীগের মারধর

বাস ভাঙচুরের সময় ছবি তোলায় ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রতিনিধি আরাফাত রহমানকে বেধড়ক মারধর করেছে ছাত্রলীগ।

সোমবার (১০ জুলাই) বেলা ১১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর অবস্থায় প্রথমে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নেওয়ার পর তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মারধরের শিকার আরাফাত বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং রাবি রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যনির্বাহী সদস্য।

মারধরকারী ছাত্রলীগ নেতা আহমেদ সজীব বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী, সাইফুল ইসলাম বিজয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এবং আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী, আবিদ আল হাসান লাবন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সোমবার সকালে চট্টগ্রাম থেকে রাজশাহীগামী দেশ ট্রাভেলসের একটি বাসে ক্যাম্পাসে আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বিজয়। কুমিল্লায় ভাড়া নিয়ে বাসের সুপারভাইজারের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। পরে বাসে বিজয় সিগারেট খাওয়া নিয়ে ফের সুপারভাইজারের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়।

বিষয়টি জানতে পেরে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে জড়ো হন ছাত্রলীগের ১৫-১৬ জন নেতাকর্মী। বাসটি সেখানে আসলে ভাঙচুর শুরু করেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এসময় সাংবাদিক আরাফাত তার মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে ভাঙচুরের ছবি তুলতে গেলে তাকে বাধা দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্র্মীরা। কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে বেধড়ক মারধর করেন ৭-৮ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। আহমেদ সজীব, হাসান লাবন ও বিজয় মারধরে নেতৃত্ব দেয় বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।

পরে মেইন গেটে দায়িত্বরত পুলিশ আরাফাতকে উদ্ধার করে। আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হয়। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। তিনি এখন হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন।

দেশ ট্রাভেলস’র রাজশাহী কাউন্টারের ইনচার্জ মাসুদ রানা বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে রাজশাহী আসার জন্য বিজয় আমাদের গাড়িতে ওঠেন। তিনি বাসের এফ-১ সিটের যাত্রী ছিলেন। গাড়ির মধ্যে ধূমপান করতে গেলে যাত্রীদের কথা ভেবে তাকে বাধা দেয় সুপারভাইজার। এসময় তার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় বিজয়ের। এতে ক্ষুব্ধ হন বিজয়। গাড়িটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে পৌঁছালে, তারা গাড়িটি থামিয়ে ভাঙচুর করে।

অভিযোগ অস্বীকার করে আহমেদ সজীব, হাসান লাবণ ও বিজয় বলেন, আমরা মারধর বা ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত ছিলাম না। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থীর সঙ্গে বাসের সুপারভাইজারের ঝামেলা হয়েছিল। আমি ও সভাপতি ঘটনাটি জানার সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে গিয়ে খোঁজ-খবর নিয়েছি।

সাংবাদিককে মারধরের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওখানে সিভিল ড্রেসে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্য তাকে মারধর করেছে বলে শুনেছি। আমাদের ছাত্রলীগের কেউ তাকে মারধর করেনি। আর যদি মারধরের সঙ্গে ছাত্রলীগের কেও জড়িত থাকে তবে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিষয়ে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী বাসটিতে হালকা ভাঙচুর করেছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক।

সাংবাদিককে মারধরের বিষয়ে তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে সিভিল ড্রেসে কোন পুলিশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। আর পুলিশ কেন তাকে মারধর করতে যাবে? বরং একজনকে মারধর করতে দেখে পুলিশ সদস্যরাই তাকে উদ্ধার করেছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত