রাবি প্রতিনিধি

১৯ অক্টোবর, ২০১৭ ১৮:৫৩

রাবি শিক্ষার্থী লিপু হত্যার এক বছরেও শনাক্ত হয়নি আসামি!

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মোতালেব হোসেন লিপুর হত্যার এক বছরেও হত্যা মামলার আসামি শনাক্ত করতে পারেনি তদন্তকারী কর্মকর্তারা।

২০১৬ সালের ২০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আব্দুল লতিফ হলের ড্রেন থেকে লিপুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

লাশ উদ্ধারের দিন মহানগর পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম, পিবিআই, র‌্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। লিপুকে হত্যা করা হয়েছিল বলে ওই সময় পুলিশ ও ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

ওইদিন বিকেলে লিপুর চাচা বশীর বাদী হয়ে নগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন।

এ হত্যাকাণ্ডের এক বছর পেরিয়ে গেলেও হত্যাকারীদের শনাক্তে কোন ক্লু উদ্ধার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তিনবার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হলেও পরিবর্তন হয়নি মামলার অবস্থার। ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলে এখন সৃষ্টিকর্তার কাছে বিচার চাইছে পরিবার।

পুলিশ ও সহপাঠী সূত্রে জানা গেছে, ওই সময় প্রক্সি জালিয়াত চক্রের বিষয়টি গণমাধ্যমে আসে। এমনকি লিপুর চাচা বশীর বলেছিল, প্রক্সি দিতে গিয়ে ধরা পড়ার পর থেকে তাকে হুমকি-ধামকি দেওয়া হতো। হত্যাকাণ্ডের প্রায় এক বছর আগে রাজশাহীতে একটি চাকরি পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে গিয়ে ধরা পড়ে লিপু। এতে তার তিনমাস জেলও হয়েছিল।

লাশ উদ্ধারের দিন লিপুর রুমমেট মনিরুল ইসলামকে আটক করা হলেও তিনদিন পর হত্যা মামলায় মনিরুলকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। কিন্তু ৮ নভেম্বর জজকোর্ট থেকে মনিরুল জামিন পায়। জামিনের আগে মনিরুলকে চারদিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমান্ডে মনিরুলের দেওয়া তথ্যে হত্যার রহস্য উদঘাটন সম্ভব বলে তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা অশোক চৌহান দাবি করেছিলেন।

এরপর মামলার তদন্তভার পান নতুন তদন্ত কর্মকর্তা মাহবুব আলম। এরপর আবার জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে পরিবর্তন হয়ে মামলার দায়িত্ব পায় সিআইডি।

এদিকে লিপু হত্যার বিচার দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে বিভাগের সামনে মানববন্ধন করেছে বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

এ সময় বিভাগের সভাপতি ড. প্রদীপ কুমার পাণ্ডে বলেন, ‘আমরা দুঃখিত, ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ। আমরা এক বছরেও লিপু হত্যাকাণ্ডের কোন কারণ জানতে পারিনি। আমরা লিপুর মা-বাবার কোন প্রশ্নের  উত্তর দিতে পারিনি।  যারা তদন্তের দায়িত্বে আছেন তাদের বলতে চাই তদন্তের নামে তালবাহানা বন্ধ করুন। পুলিশ প্রশাসনকে বলতে চাই অবিলম্বের এ হত্যাকাণ্ড সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসুন।’

বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রাশেদ রিন্টুর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন, চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান রুবেল, তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আলী ইউনুস হৃদয়, দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাব্বিউল ইসলাম রাতুল ও তওফিক তাজ এবং প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নুরুজ্জামান।

মানববন্ধনে বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবিএম সাইফুল ইসলামসহ শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

ছেলে হত্যার বিচারের ধীরগতিতে হতাশা প্রকাশ করে লিপুর বাবা বদরউদ্দিন বলেন, ‘কালকে এক বছর হবে আমার ছেলে মারা গেছে। আমরা পুলিশের ওপর আর আস্থা রাখতে পারছি না। এখন বিচার চাই সৃষ্টিকর্তার কাছে। তিনিই আমার ছেলে হত্যার বিচার করবেন।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসমাউল হক বলেন, ‘লিপু হত্যার তদন্তে এখনো কোন অগ্রগতি নেই। আসামি শনাক্ত কার যায়নি এখনো। আমরা তদন্ত করছি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত