শাহ শরীফ উদ্দিন

২৪ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:৪২

অবশেষে সচল হল এমসি কলেজের মেডিকেল সেন্টার

অচলাবস্থা নিয়ে সিলেটটুডেতে প্রতিবেদন প্রকাশের পর সেবা কার্যক্রম শুরু

অবশেষে শুরু হয়েছে এমসি কলেজ মেডিকেল সেন্টার এর সেবা কার্যক্রম। দীর্ঘদিন অচল অবস্থায় পড়ে থাকার পর ফের সচল হয়েছে এই মেডিকেল সেন্টারটি।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর এই মেডিকেল সেন্টারের অচলাবস্থা নিয়ে 'ডাক্তার আছেন বেতনও নিচ্ছেন কিন্তু নেই সেবা কার্যক্রম ' শিরোনামে সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকম-একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ সংবাদ প্রকাশের পর টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। দীর্ঘদিন সেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর পুনরায় চালু হয়েছে মেডিকেল সেন্টারের সেবা কার্যক্রম।

সিলেটের ঐতিহ্যবাহি এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে শুরুর সময় থেকেই কলেজের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য একটি মেডিকেল সেন্টার চালু ছিল। মেডিকেল সেন্টারে দুজন ডাক্তার, একজন ফার্মাসিস্ট ও একজন এম.এল.এস.এসসহ দশ শয্যাবিশিষ্ট আন্তঃ বিভাগ চালু ছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষরে উদাসীনাতায় দীর্ঘদিন থেকে একজন ডাক্তার দিয়ে চলছিল মেডিকেল সেন্টারের কার্যক্রম। চলতি বছরের শুরু থেকে একেবারেই বন্ধ হয়ে যায় মেডিকেল সেন্টারের কার্যক্রম। ফলে বিপাকে পড়েন কলেজের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা।

এবিষয়ে গত ২৫ সেপ্টেম্বর সেপ্টেম্বর সিলেটটুডে-তে সংবাদ পত্রিকাশের পর কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। পুনরায় চালু করা হয়েছে মেডিকেল সেন্টারের কার্যক্রম।

সংবাদ প্রকাশের পর তড়িঘড়ি করে কলেজ কর্তৃপক্ষ ছাত্রাবাসের নবনির্মিত ভবনের একটি কক্ষে অস্থায়ী ভাবে শুরু হয়েছে মেডিকেল সেন্টারের কার্যক্রম। প্রায় দু সপ্তাহ থেকে পুনরায় শুরু হয়েছে মেডিকেল সেন্টারের কার্যক্রম। শনি, সোম, বুধবার সপ্তাহে এই তিনদিন এখানে চিকিৎসক বসেন। চিকিৎসককে সহযোগিতা করার জন্য একজন এম.এল.এস.এসও রয়েছেন। তবে মেডিকেল সেন্টারের কার্যক্রম শুরু হলেও সেখান থেকে কোনো ঔষুধ দেয়া হচ্ছে না। ঔষধ প্রদানের ব্যবস্থা করা ও মেডিকেল সেন্টারের স্থায়ী ভবন সংস্কারের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

সোমবার সরেজমিনে দেখা যায় মেডিকেল সেন্টারে দীর্ঘদিন কোন সংস্কার না থাকায় অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পরিণত হয়েছে। তাছাড়া মেডিকেল সেন্টারের পিছনের অংশ ব্যবহার হচ্ছে কর্মচারীদের শয়ন কক্ষ হিসেবে। তাই কলেজ ছাত্রাবাসের নবনির্মিত ভবনের নিচ তলায় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষে বসে চিকিৎসক রোগী দেখছেন।

এসময় কথা হয় কর্তব্যরত চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল আমীন এর সাথে। তিনি বলেন মেডিকেল সেন্টার এর ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় কলেজ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আপাতত ছাত্রাবাসের নবনির্মিত ভবনে বসে রোগী দেখছি। সপ্তাহে তিন দিন আমি এখানে বসি আর তিন দিন সিভিল সার্জন অফিসের নির্দেশে ব্যক্ষব্যাধি হাসপাতালে রোগী দেখি।

এমসি কলেজ মেডিকেল সেন্টারে প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০ জন রোগী আসেন বলে তিনি জানান।

স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে আসা এমসি কলেজের অনার্স ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী বিদ্যুৎ সরকার, অনার্স ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আনোয়ার হোসেন, অনার্স ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী জাকির হোসেন সহ একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, মেডিকেল সেন্টারের কার্যক্রম পুনরায় শুরু হওয়ায় আমরা সন্তুষ্ট। তবে মেডিকেল সেন্টারের স্থায়ী ভবনটি সংস্কার করা বা পুননির্মান করে ঔষধ প্রদানের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

আরও পড়ুন : ডাক্তার আছেন-বেতনও নিচ্ছেন, তবু বন্ধ এমসি কলেজ মেডিকেল সেন্টারের কার্যক্রম

এমসি কলেজের অধ্যক্ষ নিতাই চন্দ্র চন্দ ঔষধ প্রদানের বিধান নেই জানিয়ে বলেন, এখানে শুধু রোগী দেখার বিধান রয়েছে। কোন ঔষধ প্রদানের বিধান নেই। রোগী দেখে ডাক্তার তাদেরকে ঔষধ লিখে দিবেন। শিক্ষার্থীরা ঔষধ কিনে খাবে। তাছাড়া মেডিকেল সেন্টার সংস্কারের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। তবে মেডিকেল সেন্টারের কার্যক্রম আগে পুরনো দর্শন বিভাগে থাকলেও প্রতিবন্ধী কোন শিক্ষার্থী না থাকায় এখন ছাত্রাবাসের নতুন ভবনের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষে সাময়িক ভাবে মেডিকেল সেন্টারের কার্যক্রম চলছে বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে সিলেটের সিভিল সার্জন অফিসার ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, আপাতত অস্থায়ী কক্ষে বসেই ডাক্তার রোগী দেখা শুরু করেছেন। ডাক্তার এর বিষয়টি সিভিল সার্জন অফিসের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ঔষধ প্রদানসহ বাদ বাকি সব কিছুই কলেজ কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে। একটা সময় এখানে ঔষধ প্রদানসহ সকল ধরণের কার্যক্রম থাকলেও এখন তা নেই। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ চাইলে ঔষধ প্রদানের ব্যবস্থাও করতে পারবে। তাছাড়া যদিও ব্যক্ষব্যাধি হাসপাতালে ডাক্তার সংকটের কারণে আপাতত ডাক্তার ৩দিন ব্যক্ষব্যাধি হাসপাতালে ও ৩দিন এমসি কলেজে রোগী দেখেন তবে তা কলেজ অধ্যক্ষের অনুমতি নিয়েই করা হয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষ চাইলে সপ্তাহে ছয়দিনই ডাক্তার এমসি কলেজেই রোগী দেখবেন বলে জানান তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত