শাহ শরীফ উদ্দিন

২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০১:১৩

ডাক্তার আছেন-বেতনও নিচ্ছেন, তবু বন্ধ এমসি কলেজ মেডিকেল সেন্টারের কার্যক্রম

ডাক্তার আছেন, বেতনও নিচ্ছেন। তবু কোন সেবা কার্যক্রম নেই সিলেট মুরারী চাঁদ (এমসি) কলেজের মেডিকেল সেন্টারে। কোনো কার্যক্রম না থাকায় মেডিকেল সেন্টারটি এখন কর্মচারীদের শয়ন কক্ষ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।

মেডিকেল সেন্টারের কার্যক্রম না থাকায় শিক্ষার্থী-কর্মচারীদের কেউ অসুস্থ হলে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্যও যেতে হয় বাইরের কোন হাসপাতালে। কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, চিকিৎসক নিয়োগের বিষয়টি কলেজের নিয়ন্ত্রনে থাকলেও তাঁর কাজের বিষয়টি দেখভাল করে সিভিল সার্জন অফিস। তাই সিভিল সার্জনের নির্দেশে এখানকার দায়িত্বরত চিকিৎসক সাময়িক ভাবে অন্যত্র দায়িত্ব পালন করছেন।

অন্যদিকে সিভিল সার্জন অফিস জানিয়েছে- চিকিৎসককে সহযোগিতা করার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ থেকে কোন কর্মচারী নিয়োগ না দেওয়ায় আপাতত চিকিৎসককে অন্যত্র দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সাথে ঔষধপত্রসহ প্রাথমিক চিকিৎসার সকল উপকরণ নিয়ে এটাকে পূণরায় চালু করার প্রক্রিয়া চলছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলেটের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মুরারীচাঁদ কলেজের ছাত্রাবাস প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কলেজের ছাত্রাবাসের ভিতরে শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের সাস্থ্য সেবার জন্য একটি মেডিকেল সেন্টার চালু করা হয়। মেডিকেল সেন্টার চালু করার প্রথম দিকে দুজন চিকিৎসক, সেবিকা ও দশ শয্যা বিশিষ্ট অর্ন্তবিভাগ সেবা কার্যক্রম চালু থাকলেও গত বেশ কয়েক বছর থেকে মাত্র একজন মেডিকেল অফিসার দিয়ে চলছে মেডিকেল সেন্টারের কাজ। বন্ধ রয়েছে অর্ন্তবিভাগের কার্যক্রম এবং ঔষধ প্রদানের ব্যবস্থাও।

আর চলতি বছর থেকে মেডিকেল সেন্টারের সেবাদান কার্যক্রম একেবারে বন্ধ হয়ে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ কর্মকর্তা কর্মচারীরা।

তবে এমসি কলেজ মেডিকেল সেন্টারে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. আব্দুল্লাহ আল আমিন সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২০১৬ সালে আমার নিয়োগের পর আমি কিছু দিন মুরারীচাঁদ কলেজে দায়িত্ব পালন করি। এইসময়কালে সিভিল সার্জন অফিসের নির্দেশে আরও একাধিক জায়গায়ও দায়িত্ব পালন করেছি। তাছাড়া হোস্টেল মেডিকেল সেন্টার ভাঙ্গাচোরা থাকার কারণে কলেজের অধ্যক্ষের নির্দেশে দর্শন বিভাগের পুরাতন ভবনের একটি কক্ষে বসে অনেক দিন রোগী দেখেছি। বর্তমানে সিভিল সার্জন অফিসের নির্দেশনা অনুযায়ী আমি সিলেটের বক্ষ্যব্যাধি হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছি।

এ ব্যাপারে কলেজের মার্স্টাস শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ইয়াকুব আলী বলেন, একটা সময় কোন শিক্ষার্থী অসুস্থ হলে আমাদের কলেজের ভিতরেই প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়া যেতো। কিন্তু এখন কোনরকম সমস্যা হলে বাইরের হাসপাতালে যেতে হয়। কলেজ হোস্টেলের মেডিকেল সেন্টারটি যদি চালু থাকতো তাহলে কষ্ট করে বাইরে যাওয়া লাগতো না। তাছাড়া কলেজে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। যে কেউ যে কোন সময় অসুস্থ হতেই পারে।

মার্স্টাসের আরো এক শিক্ষার্থী সতপা বিশ্বাস পল্লবী বলেন, কলেজ হোস্টেলের মেডিকেল সেন্টার থেকে সেবা গ্রহণ করা আমাদের অধিকার। কিন্তু এটি বন্ধ থাকায় আমরা এই অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। তাই মেডিকেল সেন্টারের র্কাযক্রম চালু করার দাবি জানাচ্ছি।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় সিলেটের মুরারীচাঁদ কলেজের হোস্টেল এর ভিতরে একটি টিন সেডের দু’চালা ঘরের সামনে ‘মেডিকেল সেন্টার, এম.সি, কলেজ, সিলেট’ লেখা সম্বলিত সাইনর্বোড টানানো। এই ঘরের সামনের অংশ জরাজীর্ন ও পিছনের অংশকে কয়েকজন কর্মচারী ব্যবহার করছেন শয়ন কক্ষ হিসেবে।  দীর্ঘদিন কোন সংস্কার না থাকায় অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ  অবস্থায় রয়েছে মেডিকেল সেন্টারটি।

এবিষয়ে মুরারীচাঁদ কলেজের অধ্যক্ষ নিতাই চন্দ্র চন্দ সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ডাক্তার নিয়োগ মুরারীচাঁদ কলেজে থাকলেও এটা নিয়ন্ত্রণ করে সিভিল সার্জন অফিস। তাই সিভিল সার্জনের নির্দেশে আপাতত সাময়িক ভাবে ডাক্তার অন্যত্র দায়িত্ব পালন করছেন। তাছাড়া হোস্টেল মেডিকেল সেন্টার ভাঙ্গাচোরা থাকায় এতোদিন ডাক্তার রোগী দেখেছেন পুরাতন দর্শন বিভাগের একটি কক্ষে। সম্প্রতি হোস্টেলের নতুন ভবন এর একটি কক্ষ ডাক্তার বসার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই পুনরায় এই নতুন ভবনে ডাক্তার বসবেন।

এব্যাপারে সিলেটের সিভিল সার্জন অফিসার ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, মুরারীচাঁদ কলেজে একটা সময় ডাক্তারকে সহযোগিতা করার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ থেকে একজন ফার্মাসিস্ট এবং একজন এম.এল.এস.এস নিয়োগ দেওয়া ছিলো। কিন্তু এখন ডাক্তার ছাড়া আর কেউ না থাকায় আপাতত ডাক্তারকে সিলেটের বক্ষ্যব্যাধি হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। তবে আমি চেষ্টা করছি যাতে এখানে ঔষধ থেকে শুরু করে প্রাথমিক সেবাদানের সকল উপকরণ সহ পুনরায় এটিকে চালু করা যায়। আশা করি শিঘ্রই এটি পুনরায় চালু করা সম্ভব হবে। 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত