জফির সেতু

২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ১৯:২৭

এমসি কলেজে গণধর্ষণ : অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে দরকার শক্ত মেরুদণ্ড

অপরাধ ছাত্রলীগের কর্মীরা করেছে না কে করেছে সেটা দেখা কি খুব প্রয়োজন? আপনাকে প্রকৃত অপরাধীদেরই খুঁজে বের করতে হবে এবং শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এরজন্য প্রয়োজন আপনার পেছনে হমোস্যাপিয়েন্সের একটি শক্ত মেরুদণ্ড! এটি হলেই অপরাধীকে আপনি সহজেই খুঁজে পেতে পারেন; পারেন আইনের আওতায় আনতে; এমনকি শাস্তি দিতেও। একজন দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে এটা আপনার-আমারও ওপরে বর্তায়।

শুধু আপনার জায়গা থেকে অপরাধের বিরুদ্ধে আপনাকে দাঁড়াতে হবে? আপনি যদি সত্যিকার মানুষ হন, কেউ আপনারা ‘কচুটি’ও করতে পারবে না। আপনাকে যদি এজন্য কেউ হত্যাও করে, এতে আপনি হয়ত শারীরিকভাবে মারা যাবেন; কিন্তু মানুষ হিসেবে বেঁচে যাবেন! শুধু উপলব্ধি করুন, ঘটনাটি কী ঘটেছে? একটি ১৯ বছরের সদ্যবিবাহিত মেয়েটিকে স্বামীর কাছ থেকে ছিনতাই করে কলেজসীমানার ভেতর ধর্ষণ করা হয়েছে! একজন নয়, কয়েকজন মিলে।

বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যাচ্ছে এর সঙ্গে কলেজের বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্ররাও জড়িত এবং জানা যাচ্ছে এরা ছাত্রলীগের কর্মীও। ছাত্রলীগের কর্মী হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না এটা কোথাও কেউ বলেছে? প্রধানমন্ত্রী তো স্পষ্ট করে বলেছেন কেউই আইনের উর্ধ্বে নয়, অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে হবে। সবকাজে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ লাগবে কেন? দায়িত্ব তো আপনার ওপরেও দেওয়া আছে! সুতরাং সর্বক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাওয়া মানে প্রধানমন্ত্রীকে বিব্রত করা; সরকারকেও। আইনের শাসনকে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে; আপনি যে সংস্থায়ই কাজ করুন না কেন, আপনার কাজ না করে উপরের নির্দেশের অপেক্ষা করা মানে আইনের বরখেলাপমাত্র। আপনাকে স্পষ্ট  হতে হবে, জুজুর ভয়ের কথা বললে হবে না। ছাত্রলীগ অপরাধ করলে, তাতে যদি আপনি যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন; আর প্রধানমন্ত্রী যদি বলেন ছাত্রলীগকে ছেড়ে দাও; তাহলে তাও দেখিয়ে দিন; প্রকাশ করুন! প্রধানমন্ত্রীকে বলুন; আপনার কথা ও কাজে মিল নেই। দেশে আইনের শাসন এই কারণে প্রতিষ্ঠা করা যাচ্ছে না! আপনি নিজেই তো একটা অথর্ব, একটা মেরুদণ্ডহীন প্রাণী! ইউরোপের ইতিহাস দেখুন রাষ্ট্র যখন পুনর্গঠিত হচ্ছিল, তখন ব্যক্তি, সমাজ, সংস্থা প্রত্যেকেই রাষ্ট্রকে সহযোগিতা দিয়েছিল। পরস্পরের হাত ধরে এগিয়েছিল। আইনের শাসন এভাবেই প্রতিষ্ঠিত করতে হয়; দূর থেকে নীরব থেকে, তৈলমর্দন করে বা হাততালি দিয়েও নয়।

বিজ্ঞাপন



মনে রাখবেন, আপনি মানুষটি যেমন হবেন, আপনার রাষ্ট্রটিও তেমন হবে। কারণ আপনাকে আমাকে নিয়েই রাষ্ট্র। চাটুকার, সুবিধাবাদী বা দর্শকরা কখনও আইনশাসিত রাষ্ট্রগঠন করতে পারে না। অন্তত রাষ্ট্রের ইতিহাস তা-ই বলে।
এখানে একটি ঘটনার উল্লেখ করতে চাই। প্রায় দশ বছর আগের ঘটনা; আমি তখন এমসি কলেজের শিক্ষক। জুনিয়র একজন শিক্ষক, প্রভাষকমাত্র। এক দুপুরে কলেজে একটা মারাত্মক অপরাধ ঘটল। পরীক্ষা-কন্ট্রোলরুমে একজন সিনিয়র শিক্ষককে কয়েকজন ছাত্র শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করল। প্রথমেই চারদিকে রব উঠল, এটা ছাত্রলীগ করেছে।...যেমন হয়, তদন্ত কমিটি গঠিত হলো। আমি শ্রেণিকক্ষের শিক্ষক, শুক্রবারেও ক্লাশ করি। হঠাৎ শুনি, তদন্তকমিটিতে আমার নাম রয়েছে। তিন তা চারসদস্যবিশিষ্ট কমিটির সবচেয়ে নিচের নামটি আমার। আমি অবাক হলাম। এত এত নেতার কলেজ, আমি প্রায় অরাজনৈতিক প্রাণী, আমাকে কেন কমিটিতে রাখা হলো? অন্য সদস্যদের মধ্যে ভাইস-প্রিন্সিপাল, স্টাফ কাউন্সিলের সেক্রেটারি আছেন। এঁরা যে কমিটিতে আছেন, এসব কমিটিতে পদাধিকার বলে রাখতে হয় এই জন্য। এত এত সিনিয়র অধ্যাপকদের কলেজে, আমার মতো প্রভাষককে রাখা হলে আমি ভেবে কূলকিনারা পাই না। প্রত্যাখ্যান করব, সম্ভবত সে সুযোগও সেই। সরকরি চাকরি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, বলা হচ্ছে ছাত্রলীগ ঘটনার নায়ক। কমিটির সঙ্গে কেসটা হাতে নিলাম। আমার দায়িত্বটুকু পালন করতে চাই। তো তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে, দেখি প্রতিদিন এখানে-ওখানে জটলা, গুনগুন। আমি গা করি না। আমার কাজটি করে যাই আমি। অন্যরাও সহযোগ দেন, বা আমি সিরিয়াসলি তাঁদের একজন হয়ে কাজটি করতে চাই। তো, আমি দেখতে পাই, ছাত্রলীগ দৌঁড়ঝাপ করছে চারদিকে, কিন্তু আমার কাছে আসছে না। আমি অবাক হই; ক্লারিকেল কাজগুলো আমি করছি; নোট নিচ্ছি, অন্যের সঙ্গে সাক্ষ্য নিচ্ছি ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারীদের। এসবের ভিত্তিতেই দোষী সাব্যস্ত হবে; শাস্তি হবে। ফাইল আমার বগলে প্রতিদিন, কিন্তু ছাত্রলীগ তো আমার কাছে আসছে না, আসে না! আমার তো সীমাহীন আনন্দ, আমি মুক্তভাবে কাজ করে যাই।

বিজ্ঞাপন



শেষমেষ, যেদিন প্রতিবেদন ফাইনাল হবে বা জমা দেবো, অধ্যক্ষ বরাবরে; আমি প্রিন্সিপাল অফিসে যাচ্ছি, বিভাগ থেকে। তখন ছাত্রলীগের কলেজ শাখার সভাপতি দেখলাম অদূরে; বুঝলাম আমার প্রতীক্ষায় বেচারা প্রহর গুনছে। সে প্রায় দৌঁড়ে আসছিল আমার দিকে; আমি হাঁটার গতি কমালাম। কিন্তু দাঁড়ালাম না। (এটা উল্লেখ করার কারণ হচ্ছে, কলেজে আমি দেখতাম ছাত্রলীগ বা অন্য দলের নেতাদের দেখলে অনেক সিনিয়র অধ্যাপক/শিক্ষক; এমনকি অধ্যক্ষও দাঁড়িয়ে খোশগল্প শুরু করে দিতেন। এটা আমাদের শিক্ষায়তনের অধঃপতনের একটি কারণ। অথবা, আমি জানি ছাত্রনেতারা অনেক প্রিন্সিপাল/ভাইস প্রিন্সিপালের কক্ষে ঢুকে কেক/সিঙারা/কোকাকোলা খায়; আমি নিজেও দেখেছি। এটাও অধঃপতন।) তো সভাপতি অত্যন্ত বিনয় সহকারে বলতে চাইলো; কাজটা ছাত্রলীগের কেউ করেনি। আমি হাঁটতে হাঁটতে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কি তখন ঘটনাস্থলে ছিলে? সে বলল, না, স্যার! আমি বললাম, আমি বা আমরাও কেউ ছিলাম না তাই তো? এখন সাক্ষ্যপ্রমাণে দেখি, শিক্ষকের শরীরে লাথি মেরে কে তাকে অসম্মান করেছে? তুমি কি অপরাধীকে চিহ্নিত করতে চাও না? সে বলল, আমিও চাই, অপরাধী বের হোক! আমি বললাম, তা হলে, অপরাধী চিহ্নিত করে তাকে শাস্তির সুপারিশ করলে তোমার কোনো আপত্তি আছে কিনা, একজন ছাত্রপ্রতিনিধি হিসেবে? সে বলল, না, স্যার। আমি বললাম, তাইলে তো সমস্যা নাই; আমরা সবাই চাই নিরপরাধ কেউ যেন শাস্তি না পায়; প্রকৃত অপরাধী যেন শাস্তি পায়! সে বলল, জি স্যার। আমি বললাম, তোমাকে একটা কথা বলি, অন্তত আমার নিজের কথা; আমি কারও দ্বারা প্রভাবিত হতে শিখিনি; হবোও না। অর্থাৎ সাক্ষ্যপ্রমাণে যে দোষী হবে তাকেই শাস্তির সুপারিশ করা হবে সে যে হোক।

আমার মনে আছে সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে, তদন্তকমিটির সম্মানিত সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি আমিই লিখেছিলাম। এর আগে সাক্ষপ্রমাণ নিতে গিয়ে মর্মন্তুদ অভিজ্ঞতাও সঞ্চয় করেছিলাম, অনেকে (এমনকি সম্মানিত শিক্ষকও আছেন) ঘটনাস্থলে থেকেও সাক্ষ্য দিতে রাজি হনননি। এতবড়ো ঘটনা নিজকক্ষে ঘটে গেলেও কেউ কেউ বলেছেন তাঁরা ব্যাপারটা খেয়াল করেননি; কিংবা কে অধ্যাপকের গায়ে লাথি মেরে ফেলে দিয়েছে তা দেখেননি! এসবই সত্য হতে পারে। হাঁ, তাঁরা তা নাও দেখতে পারেন! সবাই সবকিছু দেখতেও পান না। অথবা ঠিক করে রেখেছেন কে কী দেখবেন, না দেখবেন! কেউ আবার বলেছেন, সাক্ষ্য দিলে, আমার বা আমার পরিবারের নিরাপত্তা কে দেবে? এমন একজনকে বলেছিলাম; তাহলে কমিটির সদস্যদের নিরাপত্তা কে দেবে? সে অন্য প্রসঙ্গ।

প্রতিবেদনটি শেষ করতে করতে সেদিন, মনে আছে এশার আজান পড়ে যায়। মানে অনেক রাত। অধ্যক্ষ মহোদয়ের অফিসে জমা দিয়ে আমাদের তো ফিরতে হবে, আমাকে ফিরতে হবে একা। আমার নিজের গাড়িও নেই! না, আমি বলব; আমি ভয় পাইনি। তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করার আগেই এটা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছিল; অপরাধীটা ছাত্রলীগের এক কর্মী বা নেতা যাই হোক। সবাই জানতেও পারছিল। আমরা সঠিক তদন্ত করেছিলাম; সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমরা প্রকৃত অপরাধীর ঘৃণ্য অপরাধ সাব্যস্ত করে তাকে সর্বোচ্চ শাস্তির সুপারিশ করেছিলাম। তখন কলেজে আমরা কজন আর অধ্যক্ষ মহোদয় ছাড়া কেউ আর নেই; থাকার কথাও নয়। এমনকি পুলিশওনা। অপরাধী ও তার দোসররা কীভাবে জানি টের পেয়েছিল অপরাধীকে চিরজীবনের জন্য ছাত্রত্ব বাতিলসহ অন্য শাস্তির সুরারিশ করা হয়েছে বা হবে! হয়েও ছিল। এটা হওয়া উচিত ছিল।

প্রতিবেদন পেশ করে আমি একাই বাসায় ফিরছিলাম। পেছনের গেইটে নয়; সামনের গেট দিয়ে। তখন রাত ৮/৯টা হবে। কোথাও কেউ ছিল না। একটু এগিয়ে গেলে দেখি টিলাগড় পয়েন্টের একটু আগে; রাজমহল নামক একটি মিষ্টির দোকানের সামনে কয়েকটি হোন্ডা; তার ওপর বা পাশে দাঁড়িয়ে কয়েকজন ছাত্র বা ছাত্রলীগের কেউ হয়ত-বা। সবাই চুপ ছিল; আমি তাদের অতিক্রম করেছিলাম। শুধু আমার পিঠ বরাবর একটা গালি নিক্ষিপ্ত হয়েছিল। আমার মায়ের নাম ধরে; আমি কান খাড়া করলাম। ওই একবারই। আর কিছু শােনতে পেলাম না; হাসির শব্দ ছাড়া। আমি জানি না ওরা কারা ছিল। ওদের মুখ চিনি বা চিনি না।

তদন্তের সময় অনেকে অনেক কথা শুনিয়েছিল; এঁদের মধ্যে আমার সম্মানিত সহকর্মীও ছিলেন; কেউবা মজা নিচ্ছিলেন। বলা হচ্ছিল তদন্তে ছাত্রলীগ বাধা দেবে; ছিনিয়ে নেবে প্রতিবেদন; টিলাগড়ের বড়ো নেতারা তদন্তকারীদের মুখ বন্ধ করে দেবেন; জেলার নেতারাও। কিছুই হবে না! আমাদের সৌভাগ্য কেউ আমাদের ফোন করেননি। আমাদের কাজের বাধা দেনননি। অন্তত আমাকে না। এমনকি ছাত্রলীগের ছেলেটি দোষী সাব্যস্ত হলে ছাত্রলীগ কোনো প্রতিবাদ করেছিল বলে আমার মনে পড়েনা। পরের একদিন ছাত্রলীগ সভাপতির সঙ্গে আমার দেখাও হয়েছে; সে আমাকে বলেছে; স্যার, অপরাধ করলে তো শাস্তি পেতেই হবে!

এই ঘটনার উল্লেখ করার কারণ হচ্ছে; গতকাল যে ঘটনাটি কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতরে ঘটে গেল; এর দায় আমরা কেউই এড়াতে পারি না। কলেজ গেট থেকে একটি মেয়েকে দুর্বৃত্তরা তুলে নিয়ে গেল; আশে পাশে কেউ ছিলনা? এতবড়ো কলেজের গেটে যেহেতু এটি পর্যটনস্পট, বা একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছেও ক্যাম্পাসে, পুলিশ কোথায় ছিল? যেস্থানটিতে ঘটনা ঘটানো হচ্ছিল চারপাশের লোক কোথায় ছিল? ঘটনার এতটাকাল বিলম্বিত হলেও কোনো অপরাধী/সন্দেভাজন অপরাধী কেন ধরা পড়েনি? অপরাধীকে ছাত্রলীগ ছাত্রলীগ বলছেন; তো ছাত্রীলীগ হলে কী? তাদের ধরা যাবে না এরকম আইন কি বাংলাদেশে আছে? পুলিশের ভূমিকাই-বা কী? আবার ছাত্রলীগ মানে কি এই, দলীয়ভাবে এটা ঘটানো হয়েছে? নাকি ছাত্রলীগের পাষণ্ড কয়েকজন ব্যক্তিগতভাবে অপরাধটা করেছে! এটা যদি হয়, তাহলে এইসব কথা উচচ্চারণ করা মানে অপরাধটাকে আড়াল করা; এসব বলে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অপরাধকে আড়াল করা হয়েছে; আইনের শাসনকে ব্যাহত করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকেও প্রভাবিত করা হচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলি, আপনারা তো ছাত্রলীগ-আওয়ামীলীগের চাকরি করেন না! আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী; প্রজারা দেশের মালিক। আপনাদের এঁরাই বেতন দেয়; বিনিময়ে আপনারা সেবা দেন। আপনাদের ওপর প্রজাতন্ত্র কিছু দায়িত্ব অর্পণ করেছে; আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য; আপনারা এদেশের নাগরিকও। তাই বিভিন্ন অপরাধের দায় আপনারাও এড়াতে পারেননা। মানুষ যখন আপনাদের ওপর ভরসা করতে পারে না, তখন বুঝবেন আপনাদের মর্যাদা আপনারা হারিয়ে ফেলেছেন। আইনের শাসন যদি ভেস্তে পড়ে, মনে রাখবেন আপনার পরিবারও রেহাই পাবেনা একদিন!

এই ঘটনায় দায় কলেজ-প্রশাসনকেও নিতে হবে। একটি ঘটনা নয়, অপরাধ আরও সংঘটিত হয়েছে ক্যাম্পাসে। প্রকাশ্যে একটি মেয়েকে কুপানো হয়েছে আগে; ছাত্রাবাস পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, শেষপর্যন্ত ফলাফল কী হয়েছে? অপরাধী তো অপরাধ করে দিব্যি আছে! অপরাধীকে শাস্তির বিধানে না আনলে অপরাধ ঘটবেই; ছারপোকা দৈত্যে পরিণত হবেই। আমরা দেখছি গতকাল যে ছারপোকা ছিল, আজ সে দেব-দানব-ত্রাস হয়ে উঠেছে। ছারপোকাকে ছারপোকা বলে গণ্য করতে হবে। দৈত্যকে বধ করতে হবে; এটাই ধর্মের বিধান; আইনের শাসনেরও।

সিলেটসহ সারা দেশে গতকালের দুটি গণধর্ষণের ঘটনায় মানুষ মানসিকভাবে অসুস্থতা বোধ করছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সারাপৃথিবীতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বাংলাদেশের মানুষ আহাজারি করছেন সুবিচারের জন্য। কিন্তু সুবিচারট করবে কে?

এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটুক চান না কেউই। চান যথাযথ আইনের বিচার। বিচারের নামে মেয়েটি ও মেয়ের পরিবারটিকে হেরাসমেন্ট নয়; প্রকৃত সুবিচার দিতে হবে। প্রকৃত অঅরাধীকে আড়াল করে নীহিদের ধরপাকড় করে যেন লোকদেখানো তামাশার বিচারের অবতারণা করা না হয়? এমন কেন করবেন আপনি? আপনার পেছনে হোমোস্যঅপিয়েন্সের একটা মেরুদ- আছে; ঘাড়ের ওপর একটি মাথা আছে; একটু অনুভব করুন। আপনি কেচু নন, মানুষ!  তাই আপনার কাছে বিভিন্ন সংস্থার কাছে এমন প্রত্যাশা লক্ষ লক্ষ মানুষের। একজন গণমাধ্যম কর্মী ও মুরারিয়ান হিসেবে ভোররাতে দেওয়া স্ট্যাটাসে সাংবাদিক গুলজার আহমেদের মন্তব্যটি দুপুরে আমার নজর কাড়ে। একজন মানুষ ও মুরারিয়ান হিসেবে সমান আর্তি আমারও : ‘মেয়েটাকে যখন দেখলাম তখন খারাপ লাগার অনুভূতি হারিয়ে ফেলেছিলাম, ঘটনার ধামাচাপা দিতে কত লুকোচুরি...ঠিক যেন খাদিজার ঘটনার পুনরাবৃত্তি...ঐ দিন আমি খাদিজার সাথে সাথে মোটরবাইকে হাসপাতাল অবধি পৌঁছি...আজো ধর্ষিতা মেয়েটির পেছ পেছন হাসপাতালে যেতে হলো...কি বড়ো অভাগা কপাল আমার চোখের সামনে যে দৃশ্য ভেসে বেড়ায় তার সমাপ্তি করার সাধ্য নাই। হৃদয়ভাঙ্গা সমাজে মানুষ হয়েও মানুষ নই, মানুষ হলে সকল অপরাধীকে হাতেই পিষতামা।...সদ্য বিাবাহিত ১৯ বছরের লিকলিকে মেয়েটির এবং তার স্বামী, মা, বাবা, শ্বশুড়, শ্বাশুড়ীর মন অভিশাপে ধ্বংস হোক এ রঙ্গশালার মঞ্চ।’

এই লুকোচুর কারা করছে, কেন করছে? এটা খুজে বের করুন। খাদিজা কেন সুবিচার পেল না ভাবুন; ভাবুন এমন একটি ঘটনা আপনার পরিবারে ঘটেছে! আপনার মেয়েকে ওরা তুলে নিয়ে গেছে; বউকে নিয়ে গেছে; বোনকে নিয়ে গেছে! ভাবুন, তারপর সিদ্ধান্ত নিন! দেখুন কী ভূমিকা হবে আপনার তখন? নাকি ভাবছেন, আপনি অমুক, তমুক বলে খুবই নিরাপদ? মোটেই না; বান যখন আসে তৃণকে যেমন, বৃক্ষকেও উপড়ে ফেলে!

সবশেষে গুলজার তাঁর স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘আমি এমসিয়ান আমি লজ্জিত, আমি ক্ষমাপ্রার্থী। শাস্তি চাই সকল নরপান্ডাদের, সাথে শাস্তি চাই কলেজের ধ্বজাধারী কলেজে প্রশাসনের-কারণ ঘটনাটি কলেজের হোস্টেলেই।'
আমি নিজেও একজন মুরারিয়ান হিসেবে দায়টা এড়াতে পারছিনা; পারছিনা বলে কষ্ট পাচ্ছি! এড়াতে পারছিনা দায়, বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবেও; মানুষ হিসেবে তো বটেই। ওরা আমাকের অপরাধী করে ফেলল। কারণ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আমার নিজেরও কিছু ভূমিকা আছে; পালন যে করছি তো মনে হয়না।
সুতরাং আপনাদের সবাইকে বলি, আসুন, শিরদাঁড়া একটু সোজা করে দাঁড়াই! কেঁচোর মতো না-চলি!
নাকি পেছনে শিরদাঁড়ার বদলে নিচের দিকে একটা লেজ ধরে বসে আছেন? দাঁড়ান,  অামারটাও একটু দেখে নিই!

জফির সেতু: কবি, শিক্ষক-শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত