মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান

১৩ জুলাই, ২০২৩ ১২:০৭

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রতিরোধ: ইসলামী আইন ও তার প্রতিকার

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির পদতলে জনজীবন পিষ্ট। দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়া ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে তো ছুটছেই। এর মুখে লাগাম দেয়া যাচ্ছে না। জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার কারণে দৈনন্দিন পারিবারিক চাহিদা মেটাতে পরিবার প্রধানদের উঠছে নাভিশ্বাস। ‘কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ (ক্যাব)-এর বার্ষিক প্রতিবেদন, জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ৬ শতাংশ। একই সঙ্গে পণ্য ও সেবার মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ৫ দশমিক ১৯ শতাংশ। গত বছর সব ধরনের চালের গড় মূল্য বেড়েছে ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ, মাছের দাম সাড়ে ১৩ শতাংশ, শাকসবজিতে ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ, তরল দুধে ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, গোশতে ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ, ডিমে বেড়েছে ৭ দশমিক ৭১ শতাংশ। দুই কক্ষ বিশিষ্ট বাড়ী ভাড়া বেড়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির অন্যতম কারণ হলো মজুতদারি। ব্যবসায়ীদের কারসাজিতেই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।

ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহ.) এ প্রসঙ্গে বলেন, মূল্যবৃদ্ধি বা মূল্যহ্রাস এ দু’টি ঐ সকল ঘটনার অন্যতম, যার স্রষ্টা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ নন। তাঁর ইচ্ছা ও ক্ষমতা ছাড়া এর কিছুই সংঘটিত হয় না। তবে আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা কখনো কখনো কতিপয় বান্দার কর্মকে কিছু ঘটনা ঘটার কারণ হিসাবে নির্ধারণ করেছেন। যেমন হত্যাকারীর হত্যাকে নিহত ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ করেছেন। বান্দাদের জুলুমের কারণে তিনি কখনো মূল্যবৃদ্ধি করেন এবং কখনো কিছু মানুষের ইহসানের কারণে মূল্যহ্রাস করেন’।

পণ্য সরবরাহ ও ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী ইসলাম বাজার ব্যবস্থা ও দ্রব্যমূল্যকে স্বাভাবিক গতিতে চলতে দিতে চায়। সমাজতন্ত্রের মত বাজার প্রক্রিয়াকে সমূলে উচ্ছেদ করে ‘মূল্য নির্ধারণ কমিশন গঠন’ করে সরকার কর্তৃক দ্রব্যের দাম নির্ধারণ করা ইসলামে নিষেধ। ইসলামী অর্থনীতিতে দামকে মানবিক প্রেক্ষিতেই বিবেচনা করা হয়। ইসলামী অর্থনীতির দাম নীতি বাস্তবসম্মত দাম নীতি"! স্বাভাবিক বাজার দর অনুযায়ী পণ্যের মূল্য নির্ধারিত হবে এটাই ইসলামের কাম্য।

হাদিসে এসেছে, আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সা.) দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। অতএব আপনি আমাদের জন্য মূল্য নির্ধারণ করুন! তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ দ্রব্যমূল্যের গতি নির্ধারণকারী, তিনিই একমাত্র সংকীর্ণতা ও প্রশস্ততা আনয়নকারী এবং তিনি রিজিকদাতা। আমি আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করতে চাই যেন তোমাদের কেউ আমার বিরুদ্ধে তার জান ও মালের ব্যাপারে জুলুমের অভিযোগ উত্থাপন করতে না পারে’।

ড. ইউসুফ আল-কারযাভ ‘এই হাদিসের মাধ্যমে ইসলামের নবী ঘোষণা দিচ্ছেন যে, বিনা প্রয়োজনে ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা জুলুম। রাসূল (সা.) জুলুমের দায়-দায়িত্ব থেকে মুক্ত থেকে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করতে পছন্দ করেন। কিন্তু বাজারে যখন অস্বাভাবিক কার্যকারণ অনুপ্রবেশ করবে যেমন কতিপয় ব্যবসায়ীর পণ্য মজুতকরণ এবং তাদের মূল্য কারসাজি, তখন কতিপয় ব্যক্তির স্বাধীনতার উপর সামষ্টিক স্বার্থ প্রাধান্য লাভ করবে। এমতাবস্থায় সমাজের প্রয়োজনীয়তা বা চাহিদা পূরণার্থে এবং লোভী সুবিধাভোগীদের থেকে সমাজকে রক্ষাকল্পে মূল্য নির্ধারণ করা জায়েজ। তাদের অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে না দেয়ার জন্য এ নীতি স্বতঃসিদ্ধ’।

অন্য হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, একজন লোক এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সা.) দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করে দিন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, বরং আমি (আল্লাহর কাছে) দো‘আ করব। অতঃপর অপর এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করুন! তখন তিনি বললেন, ‘বরং আল্লাহই দ্রব্যমূল্যের হ্রাস-বৃদ্ধি করেন। আমি এমন অবস্থায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করার আশা করি, যেন আমার বিরুদ্ধে কারো প্রতি জুলুম করার অভিযোগের সুযোগ না থাকে’।

হাদিস দু’টি থেকে বুঝা গেল যে, দ্রব্যমূল্যের হ্রাস-বৃদ্ধি আল্লাহর হুকুমেই ঘটে থাকে। এজন্য কতিপয় বিদ্বান অভিমত প্রকাশ করেছেন যে, আল্লাহর একটি গুণবাচক নাম।

শায়খ উছায়মীন (রহ.) বলেন, ‘আমার অভিমত হলো, এটি সংবাদ প্রদানের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে; আল্লাহর নাম বর্ণনা করার জন্য নয়’। তিনি আরও বলেন, আমার মতে, এটি আল্লাহর কর্মবাচক গুণ। অর্থাৎ নিশ্চয়ই আল্লাহ জিনিসের মূল্য কম-বেশি করেন। তাই আমার মতে এটি আল্লাহর নাম নয়। আল্লাহ সর্বাধিক অবগত’।এ মতটিই সঠিক বলে প্রতিভাত হয়।

ইবনু কুদামা (রহ.) বলেন, আনাস (রা.) বর্ণিত হাদিস দ্বারা দু’দিক থেকে দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ বৈধ না হওয়ার দলীল সাব্যস্ত হয়। এক. লোকেরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট দ্রব্যমূল্য নির্ধারণের আহবান জানালেও তা তিনি করেননি। যদি সেটি জায়েজ হতো, তাহলে তিনি তাদের আহবানে সাড়া দিতেন। দুই. দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ না করার কারণ হিসাবে তিনি বলেছেন, এটি জুলুম। আর জুলুম হারাম। তাছাড়া তা বিক্রেতার মাল। সুতরাং ক্রেতা-বিক্রেতা ঐক্যমত্য পোষণ করলে বিক্রেতাকে তার মাল বিক্রি করা থেকে নিষেধ করা জায়েজ নয়’।

ইমাম শাওকানী (রহ.) বলেন, ‘আনাস (রা.)-এর হাদিস ও একই মর্মে বর্ণিত অন্য হাদিসগুলো দ্বারা মূল্য নির্ধারণ হারাম ও জুলুম হওয়ার পক্ষে দলীল পেশ করা হয়েছে। এর কারণ হলো, মানুষ তাদের মালের উপর কর্তৃত্বশীল। অথচ তাস‘ঈর তাদের জন্য প্রতিবন্ধক। আর রাষ্ট্রপ্রধান মুসলমানদের স্বার্থ সংরক্ষণে আদিষ্ট। বর্ধিত মূল্যে বিক্রির ব্যাপারে বিক্রেতার স্বার্থ দেখার চেয়ে সস্তা দামে ক্রয়ের ব্যাপারে ক্রেতার স্বার্থের প্রতি দৃকপাত করা রাষ্ট্রপ্রধানের জন্য উত্তম নয়। আর পণ্যের মালিককে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য করা আল্লাহর বাণী ‘তবে ব্যবসা যদি হয় ক্রেতা-বিক্রেতার পারস্পরিক সন্তুষ্টির ভিত্তিতে তবে ভিন্ন কথা’ এর বিরোধী। অধিকাংশ বিদ্বান এ মতের প্রবক্তা’। তাস‘ঈর হ’ল সরকার অথবা তার প্রতিনিধি কর্তৃক পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয়া’।

হাম্বলী ফকীহ ইবনু হামিদ আল-অর্রাক (মৃ. ৪০৩ হি./১০১২ খ্রি.) বলেন,মানুষের উপর দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করা রাষ্ট্রপ্রধানের জন্য উচিত নয়। বরং মানুষ তাদের স্বাধীনতা অনুযায়ী পণ্য বিক্রি করবে’।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ফকীহ আল-মাওয়ার্দী (৩৭৪-৪৫০ হি.) বলেন,‘মূল্য হ্রাস বা মূল্য বৃদ্ধির সময় মানুষের উপর খাদ্যদ্রব্য বা অন্য জিনিসের মূল্য নির্ধারণ করা তার জন্য জায়েজ নয়। ইমাম মালেক মূল্যবৃদ্ধির সময় খাদ্যদ্রব্যের মূল্য নির্ধারণ জায়েজ বলেছেন’।

তাছাড়া যারা সরকার কর্তৃক দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করা বৈধ নয় মনে করেন তাদের আরেকটি দলীল হচ্ছে মহান আল্লাহর বাণী, হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা একে অপরের মাল অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না..। কারণ বিক্রেতার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার উপর সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্য চাপিয়ে দেয়া জুলুম, যা অন্যায়ভাবে কারো সম্পদ ভক্ষণ করার পর্যায়ে পড়ে।

কতিপয় হাম্বলী ফকীহ মনে করেন, সরকার কর্তৃক দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ। কেননা যখন আমদানিকারকদের কাছে দ্রব্যমূল্য নির্ধারণের খবর পৌঁছবে, তখন তারা এমন শহরে তাদের পণ্য নিয়ে আসবে না যেখানে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তা বিক্রি করতে বাধ্য করা হবে। ফলে যার কাছে পণ্য রয়েছে সে তা বিক্রি করা হতে বিরত থাকবে এবং লুকিয়ে ফেলবে। আর ভোক্তারা তা চাইবে, কিন্তু যৎসামান্য বৈ পাবে না। তখন দ্রব্যসামগ্রী সংগ্রহের জন্য তারা উচ্চমূল্য প্রদান করবে। এতে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাবে এবং বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয় পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিক্রেতা পক্ষকে তাদের মাল বিক্রি করা থেকে নিষেধ করার কারণে এবং ক্রেতাকে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে নিষেধ করার কারণে। ফলে তা হারাম হবে’।

আলোচনা থেকে বুঝা গেল যে, স্বাভাবিক অবস্থায় দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করা বৈধ নয়। তবে যদি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজিতে অন্যায়ভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেয়া হয়, তবে সরকারকে অবশ্যই বাজার ব্যবস্থাপনায় হস্তক্ষেপ করে দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করে দিতে হবে।

ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহ.) এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘মূল্য নির্ধারণ যদি মানুষের প্রতি জুলুম করা এবং তাদেরকে অন্যায়ভাবে এমন মূল্যে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য করাকে শামিল করে, যাতে তারা সন্তুষ্ট নয় অথবা আল্লাহ তাদের জন্য যা বৈধ করেছেন তা থেকে শাসক নিষেধ করেন, তাহলে দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ হারাম। কিন্তু মানুষের মাঝে ন্যায়বিচারের উদ্দেশ্যে যদি মূল্য নির্ধারণ করা হয় যেমন, বাজারের প্রচলিত দামে তাদেরকে বিক্রি করতে বাধ্য করা এবং প্রচলিত বিনিময় মূল্যের অধিক গ্রহণ করা থেকে শাসক তাদেরকে নিষেধ করেন, তাহ’লে তা শুধু জায়েযই নয়; রবং ওয়াজিব’।

তিনি আরও বলেন, মানুষেরা যখন প্রচলিত নিয়মে কোন রকম জুলুম ছাড়াই তাদের পণ্যসামগ্রী বিক্রি করবে আর পণ্যদ্রব্যের স্বল্পতা বা জনসংখ্যার আধিক্যের কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাবে, তখন তা আল্লাহর নিকট ন্যস্ত করতে হবে। এরূপ পরিস্থিতিতে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে জনগণকে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য করা অন্যায় বা বাড়াবাড়ি বৈ কিছুই নয়’। তাঁর মতে, তবে মানুষের চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা সত্ত্বেও পণ্যের মালিকগণ যদি প্রচলিত দামের চেয়ে বেশি দাম গ্রহণ ছাড়া পণ্য বিক্রি করা হতে বিরত থাকে, তখন তাদেরকে প্রচলিত দামে বিক্রি করতে বাধ্য করা ওয়াজিব’।

তদীয় ছাত্র ইবনুল ক্বাইয়িম (রহ.) মোটকথা, মূল্য নির্ধারণ ব্যতীত যদি মানুষের কল্যাণ পরিপূর্ণতা লাভ না করে, তাহলে শাসক তাদের জন্য ন্যায়সঙ্গত মূল্য নির্ধারণ করবেন। কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করা বা কারো প্রতি অন্যায় করা যাবে না। আর মূল্য নির্ধারণ ছাড়াই যদি তাদের প্রয়োজন পূরণ হয়ে যায় এবং কল্যাণ সাধিত হয়, তাহলে রাষ্ট্রপ্রধান মূল্য নির্ধারণ করবেন না’।

‘আল-হেদায়া’ প্রণেতা বলেন, লোকদের জন্য দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করা শাসকের উচিত নয়। তবে খাদ্যদ্রব্যের মালিকরা যদি বাজার নিয়ন্ত্রণ করে এবং দামের ক্ষেত্রে প্রচণ্ড সীমালঙ্ঘন করে (মাত্রাতিরিক্ত দাম নেয়) আর বিচারক দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ ছাড়া মুসলমানদের অধিকার সংরক্ষণ করতে অপারগ হন, তখন জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিদের পরামর্শে মূল্য নির্ধারণ করাতে কোন দোষ নেই’।

সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদের এক ফতওয়ায় বলা হয়েছে, যখন বিক্রেতারা তথা ব্যবসায়ী ও অন্যরা তাদের নিজেদের কাছে যে পণ্য আছে তার দাম তাদের ইচ্ছামত বৃদ্ধি করার ব্যাপারে ঐক্যমত্য পোষণ করবে, তখন ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মাঝে ন্যায়-নীতি প্রতিষ্ঠা এবং জনসাধারণের কল্যাণ করা ও ফিতনা-ফাসাদ দূর করার সাধারণ নিয়মের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপ্রধান বিক্রেয় দ্রব্যের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ করবেন। আর যদি তাদের মধ্যে ঐক্যমত্য না হয়; বরং কোন প্রকার প্রতারণা ছাড়াই পর্যাপ্ত চাহিদা ও পণ্যসামগ্রীর সরবরাহ কম হওয়ার কারণে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়, তাহলে রাষ্ট্রপ্রধানের জন্য মূল্য নির্ধারণ করা উচিত নয়। বরং তিনি প্রজাদেরকে এমনভাবে ছেড়ে দেবেন যে, আল্লাহ তাদের কারো দ্বারা কাউকে রিজিক দিবেন’।

শায়খ ছালেহ ফাওযান বলেন, ‘পণ্যের স্বল্পতা ও সরবরাহ কম হওয়ার কারণে যদি মূল্য বৃদ্ধি পায়, তাহলে এতে কারো কিছুই করার নেই। তবে ব্যবসায়ীদেরকে বলা হবে, মানুষেরা যে দামে বিক্রি করছে সে বাজার মূল্যে তোমরা বিক্রি করো। মানুষকে কষ্ট দিয়ো না। পক্ষান্তরে মাল গুদামজাত করার কারণে ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে যদি মূল্য বৃদ্ধি পায় এবং বাজারে পণ্যের ঘাটতি হেতু তারা বেশি দামে মাল বিক্রি করে, তাহ’লে শাসক এতে হস্তক্ষেপ করবেন। মানুষেরা যে দামে বিক্রি করছে সে দামে বিক্রি করতে তিনি তাদেরকে বাধ্য করবেন। এটাই আদল বা ন্যায়-নীতি’।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণ
মজুতদারি
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির অন্যতম প্রধান কারণ মজুতদারি। একশ্রেণির মুনাফালোভী সুযোগসন্ধানী অসৎ ব্যবসায়ী সস্তা দামে পণ্য ক্রয় করে এবং ভবিষ্যতে চড়া দামে বিক্রয় করার মানসে তা মজুদ করে রাখে। ফলে বাজারে দুষ্প্রাপ্যতার দরুন পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায় এবং পণ্যমূল্য হু হু করে বেড়ে যায়। ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহ.) বলেন, কেননা মজুতদার মানুষের প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করে মজুদ করে রাখে এবং তাদের নিকট চড়া দামে বিক্রি করতে চায়। ক্রেতা সাধারণের উপর সে জুলুমকারী। এজন্য শাসক মানুষের প্রয়োজন দেখা দিলে তাদের নিকট মজুদকৃত জিনিস প্রকৃত মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য করতে পারেন। যেমন, কারো নিকট এমন খাদ্য মজুদ আছে যার প্রয়োজন তার নেই। আর এমতাবস্থায় মানুষ ক্ষুধার্ত থাকে। তবে তাকে প্রচলিত বাজার মূল্যে মানুষের কাছে তা বিক্রি করতে বাধ্য করা হবে’।

মজুতদারির অশুভ প্রভাব সম্পর্কে ইতিহাসের পাতা উল্টালে আমরা দেখতে পাই, বাংলা-বিহার-উড়িষ্যায় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ফসলের পরিবর্তে মুদ্রা রাজস্ব আদায়ের একমাত্র মাধ্যমে পরিণত হয়। ফলে খাজনার টাকা সংগ্রহের জন্য কৃষককে তার সারা বছরের খাদ্য ফসল বিক্রি করতে হতো। এই সুযোগে ইংরেজ ব্যবসায়ীরা বাংলা-বিহারের বিভিন্ন স্থানে ধান-চাল ক্রয়ের জন্য ক্রয়কেন্দ্র খুলে বসে। শুধু তাই নয়, বেশি মুনাফা লাভের আশায় এসব ক্রয়কৃত খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করা শুরু করে। পরে সুযোগ-সুবিধামতো এসব খাদ্যই চড়া মূল্যে সেই চাষিদের নিকট আবার বিক্রি করত। ফলে খাদ্য গুদামজাতকরণের মাধ্যমে কৃত্রিম অভাব সৃষ্টির কারণেই এর অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হিসাবে দুর্ভিক্ষ ঘনিয়ে এল। ১৭৬৯ সালে ক্রয়কৃত সমস্ত ফসল কোম্পানির লোকেরা ১৭৭০ সালেই বেশি দামে হতভাগ্য চাষিদের নিকট বিক্রি করতে লাগল। বাংলার চাষি তা ক্রয় করতে ব্যর্থ হয়ে নজিরবিহীন দুর্ভিক্ষের শিকার হলো। মারা গেল কয়েক লক্ষ বনু আদম। বাংলা ১১৭৬ (১৭৬৯-৭০ খৃ.) সালের এই দুর্ভিক্ষই ‘ছিয়াত্তরের মন্বন্তর’ নামে ইতিহাসে খ্যাত।

প্রত্যক্ষদর্শী ইংরেজ ঐতিহাসিক ইয়ং হাসব্যান্ড এর ভাষায়, ‘তাদের (ইংরেজ বণিকদের) মুনাফার পরবর্তী উপায় ছিল চাল কিনে গুদামজাত করে রাখা। তারা নিশ্চিত ছিল যে, জীবনধারণের পক্ষে অপরিহার্য এ দ্রব্যটির জন্য তারা যে মূল্যই চাইবে, তা পাবে। ...চাষিরা তাদের প্রাণপাত করা পরিশ্রমের ফল অপরের গুদামে মজুদ থাকতে দেখে চাষ-বাস সম্পর্কে এক রকম উদাসীন হয়ে পড়ল। ফলে দেখা দিল ভয়ানক খাদ্যাভাব। দেশে যেসব খাদ্য ছিল, তা ইংরেজ বণিকদের দখলে। খাদ্যের পরিমাণ যত কমতে থাকল, ততই দাম বাড়তে লাগল। শ্রমজীবী দরিদ্র জনগণের চির দুঃখময় জীবনের ওপর পতিত হলো এই পুঞ্জীভূত দুর্যোগের প্রথম আঘাত। কিন্তু এটা এক অশ্রুতপূর্ব বিপর্যয়ের আরম্ভ মাত্র।

এই হতভাগ্য দেশে দুর্ভিক্ষ কোন অজ্ঞাতপূর্ব ঘটনা নয়। কিন্তু দেশীয় জনশত্রুদের সহযোগিতায় একচেটিয়া শোষণের বর্বরসুলভ মনোবৃত্তির অনিবার্য পরিণতিস্বরূপ যে অভূতপূর্ব বিভীষিকাময় দৃশ্য দেখা দিল, তা ভারতবাসীরাও আর কোনদিন চোখে দেখেনি বা কানে শোনেনি। চরম খাদ্যাভাবের এক ভয়াবহ ইঙ্গিত নিয়ে দেখা দিল ১৭৬৯ সাল। সঙ্গে সঙ্গে বাংলা-বিহারের সমস্ত ইংরেজ বণিক তাদের সকল আমলা, গোমস্তা, রাজস্ব বিভাগের সকল কর্মচারী, যে যেখানে নিযুক্ত ছিল সেখানেই দিবারাত্র অক্লান্ত পরিশ্রমে ধান-চাল কিনতে লাগল। এই জঘন্যতম ব্যবসায়ে মুনাফা এত শীঘ্র ও এত বিপুল পরিমাণ ছিল যে, মুর্শিদাবাদের নবাব দরবারে নিযুক্ত একজন কপর্দকশূন্য ভদ্রলোক এ ব্যবসা করে দুর্ভিক্ষ শেষ হওয়ার সাথে সাথে প্রায় ৬০ হাজার পাউন্ড (দেড় লক্ষাধিক টাকা) দেশে পাঠিয়েছিল

ডব্লিউ. ডব্লিউ. হান্টারের বর্ণনানুযায়ী এই দুর্ভিক্ষের ফলে মানুষজন তাদের গরু-বাছুর, লাঙ্গল-জোঁয়াল বিক্রি করে ফেলে এবং বীজধান খেয়ে অবশেষে ছেলে-মেয়ে বেচতে শুরু করে । এমনকি এক পর্যায়ে ক্ষুধার তাড়নায় জীবিত মানুষ মরা মানুষের গোশত পর্যন্ত খেতে শুরু করে!

প্রাকৃতিক দুর্যোগ
অনেক সময় মহান আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য কিংবা তাদের কৃতকর্মের দরুন শাস্তি দানের উদ্দেশ্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, খরা প্রভৃতি নাযিল করেন। এ সম্পর্কে মহ (আখেরাতে) কঠিন শাস্তির পূর্বে (দুনিয়াতে) আমরা তাদের লঘু শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করাবো। যাতে তারা (আল্লাহর পথে) ফিরে আসে’। তিনি আরও বলেন, আর অবশ্যই আমরা তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, ধন ও প্রাণের ক্ষতির মাধ্যমে এবং ফল-শস্যাদি বিনষ্টের মাধ্যমে ... মানুষের পাপের কারণেই এমনটি হয়ে থাকে। যেমন আল্লাহ বলেন,‘স্থলে ও সমুদ্রে সর্বত্র বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে মানুষের কৃতকর্মের ফল হিসাবে। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাদের কর্মের কিছু শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা (পাপ ছেড়ে আল্লাহর দিকে) ফিরে আসে’। ফলে উক্ত পরিস্থিতিতে জনগণের চাহিদা অনুযায়ী দ্রব্যসামগ্রী কম উৎপাদন হেতু মূল্যস্ফীতি দেখা দেয়।

প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠলেও একশ্রেণির ব্যবসায়ী এটিকে মুনাফা লাভের মওকা হিসাবে গ্রহণ করে। দেশের একটি অঞ্চলের বন্যা যেন সারা দেশে দাম বাড়ানোর মোক্ষম সুযোগ ও হাতিয়ার হিসাবে কাজ করে। বন্যা কমে গেলেও একবার বেড়ে যাওয়া পণ্যের দাম কমতে চায় না। মজার ব্যাপার হলো, বন্যার অজুহাতে বিদেশ থেকে আমদানি করা পণ্য কিংবা যেসব পণ্য বন্যাকবলিত এলাকার বাইরে উৎপন্ন হয় সেগুলিরও দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়। বন্যার সময় বাংলাদেশের এটি চিরচেনা চিত্র।

সুদ
সুদের ফলে দ্রব্যমূল্য ক্রমেই বৃদ্ধি পায়। সুদবিহীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ী উৎপাদন খরচের উপর পরিবহন খরচ, শুল্ক (যদি থাকে), অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় এবং স্বাভাবিক মুনাফা যোগ করে পণ্যদ্রব্যের বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করে থাকে। কিন্তু সুদভিত্তিক অর্থনীতিতে দ্রব্যের এই স্বাভাবিক মূল্যের উপর উপর্যুপরি সুদ যোগ করা হয়। দ্রব্য বিশেষের উপর তিন থেকে চার বা তার চেয়েও বেশি সুদ যুক্ত হয়ে থাকে। ফলে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঘোড়ার পদতলে পিষ্ট হয় সাধারণ মানুষ। নিরুপায় ভোক্তাকে বাধ্য হয়েই সুদের জন্য সৃষ্ট এই চড়ামূল্য দিতে হয়। সুদনির্ভর অর্থনীতিতে এছাড়া তার গত্যন্তর নেই।

মধ্যস্বত্বভোগীদের অনৈতিক হস্তক্ষেপ
অধিকাংশ ভোগ্যপণ্যের ক্ষেত্রে দেখা যায়, উৎপাদন ক্ষেত্র থেকে যে মূল্যে ব্যবসায়ী ও মধ্যস্বত্বভোগীরা তা ক্রয় করে থাকে কিংবা সেখানে যে মূল্যে সে দ্রব্য বিক্রি হয়, বাজারে তা বিক্রি করে চড়া দামে। মধ্যস্বত্বভোগীদের অত্যধিক মুনাফা লাভের এ হীন মানসিকতার ফলে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়। অনেক সময় পাইকারি বাজারে পণ্যের দাম ১০ শতাংশ বাড়লে খুচরা বাজারে সেটি ২০-৩০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়া হয়। আবার পাইকারি বাজারে কোন পণ্যের দাম ২০ শতাংশ কমলে খুচরা বাজারে সেটি ১০ শতাংশও কমে না।

কালো টাকার দৌরাত্ম্য
কালো টাকার মালিকদের কালো টাকার একটা নেতিবাচক প্রভাব বাজারে পড়ে। অবৈধ উপায়ে অর্জিত বলে তারা ২০ টাকার জিনিস ৪০ টাকায় ক্রয় করতে দ্বিধা করে না। আর সে কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর দাম বেড়ে যায়।

চাঁদাবাজি ও অতিরিক্ত পরিবহন ভাড়া
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো চাঁদাবাজি ও অতিরিক্ত পরিবহন খরচ। শিল্প মালিক, উদ্যোক্তা, উৎপাদক ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজরা মোটা অংকের চাঁদা আদায় করে। তারা এর ক্ষতি পুষিয়ে নিতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে। আর এর বলি হন সাধারণ জনগণ। তাছাড়া অতিরিক্ত পরিবহন ভাড়ার ফলেও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়। কারণ দ্রব্যসামগ্রীর পরিবহন খরচ বেশি এ অজুহাতেও ব্যবসায়ীরা দফায় দফায় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয়।

সম্প্রতি পত্রিকায় প্রকাশিত এক রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমা লের মানুষের যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনের গুরুত্বপূর্ণ রুট মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে দৈনিক চার লাখ টাকা চাঁদা আদায় হয়। পণ্যবাহী ট্রাকচালক ও তাদের সহকারীরা এ চাঁদাবাজির শিকার হন। গাবতলি পশুর হাটে চাঁদাবাজি বন্ধ করা গেলে গোশতের দাম কিছুটা হলেও কমবে।

ব্যাংক কর্মকর্তা ও আমদানিকারকদের অশুভ আঁতাত
আমদানিকারকরা যেসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিদেশ থেকে আনেন সেগুলির কোটেশন অনেক বেশি করে দেন। আর এভাবেই ওভার ইনভয়েসিং (চালানপত্রে পণ্যের দাম বেশি দেখানো) হয়। শুল্ক হার কমিয়ে বেশি মুনাফা অর্জন করতেই ওভার ইনভয়েসিং করা হয়। এই ওভার ইনভয়েসিং-এর মাধ্যমে অসাধু আমদানিকারকরা একদিকে বেশি করে ব্যাংক থেকে ঋণ নেন, অন্যদিকে পণ্যমূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে বৃদ্ধি পেয়েছে এ দোহাই পেড়ে বেশি দামে আমদানিকৃত পণ্য বাজারে ছাড়েন। এর ফলে স্থানীয় বাজারে জিনিসপত্রের দাম ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং পরিণতিতে মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠে। তাছাড়া ওভার ইনভয়েসিংয়ের কারণে আমদানির নামে পণ্যের প্রকৃত দামের চেয়ে বেশি পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে যায়। অনেক সময় আন্তর্জাতিক বাজারে কোন পণ্যের দাম বৃদ্ধির ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে তার প্রভাব পড়ে এবং পণ্যের দাম বেড়ে যায়।

পণ্যের স্বল্পতা
অনেক সময় পণ্যের স্বল্পতা বা কতিপয় নাগরিকের পণ্য মজুদের প্রবণতার কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়। সম্পদশালী ব্যক্তিরা বাজারে আসে এবং পণ্য ক্রয় করে জমা করে রাখে। এদিকে বাজারে পণ্যের স্বল্পতার দরুন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়। চাই সে ব্যক্তি নিজের জন্য পণ্য সংগ্রহ করুক বা পরবর্তীতে চড়া দামে বিক্রির লক্ষ্যে মজুতদারির উদ্দেশ্যে সংগ্রহ করুক। মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রফেসর শায়খ আতিইয়া সালিম বলেন, ‘এটাই হল দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ’।

বিলাসিতা
বিলাসিতা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। বিলাসী ব্যক্তিরা তাদের চাহিদা পূরণের জন্য যেকোনো মূল্যে পণ্য কিনতে তৎপর ও উৎসাহী থাকে। এজন্য ইসলাম আমাদেরকে বিলাসিতা থেকে কঠোরভাবে সতর্ক করেছে। কারণ বিলাসিতার কারণে পূর্ববর্তী বহু জাতি ধ্বংস হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতএব তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতগুলির মধ্যে এমন দূরদর্শী লোক কেন হলো না, যারা জনপদে বিপর্যয় সৃষ্টিতে বাধা দিত? তবে অল্প কিছু লোক ব্যতীত, যাদেরকে আমরা তাদের মধ্য হতে (আযাব থেকে) রক্ষা করেছিলাম। অথচ জালেমরা তো ভোগ-বিলাসের পিছনে পড়ে ছিল। আর তারা ছিল মহা পাপী। আর তোমার প্রতিপালক এমন নন যে, সেখানকার অধিবাসীরা সৎকর্মশীল হওয়া সত্ত্বেও জনপদ সমূহকে অন্যায়ভাবে ধ্বংস করে দিবেন’! মু‘আয বিন জাবাল (রা.)-কে ইয়েমেনে প্রেরণের সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছিলেন, তুমি বিলাসিতা থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ আল্লাহর বান্দারা বিলাসী নন’।

যাকাত প্রদান না করা
সম্পদের যাকাত প্রদান না করা বালা-মুসিবত ও মূল্যবৃদ্ধির একটি কারণ। যাকাত প্রদান করলে সম্পদে বরকত বৃদ্ধি পায় এবং ধনী-গরীব নির্বিশেষে সমাজের মানুষের মধ্যে ভালবাসা ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন অটুট থাকে।

দালালি
ক্রেতা ও বিক্রেতার মাঝে দালালের অনুপ্রবেশ ঘটলে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়। এজন্য রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোন শহুরে যেন গ্রাম্য লোকের পণ্য বিক্রি না করে। তোমরা লোকদের ছেড়ে দাও। আল্লাহ তাদের কারো দ্বারা কাউকে রিজিক প্রদান করবেন’।

উক্ত হাদিসের প্রকৃত তাৎপর্য সম্পর্কে তাউস (রহ.) ইবনু আব্বাস (রা.)-কে জিজ্ঞেস কোন শহুরে গ্রাম্য লোকের পক্ষে পণ্য বিক্রি করবে না, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর একথার অর্থ কী? তিনি বললেন, ‘সে যেন তার জন্য দালালের ভূমিকা পালন না করে’।

ইবনু কুদামা (রহ.) বলেন, ‘হাদিসের মর্মার্থ হলো, গ্রাম্যলোককে যখন তার পণ্য বিক্রি করার সুযোগ দেয়া হবে, তখন মানুষ তা সস্তা দামে ক্রয় করতে পারবে এবং বিক্রেতাও তাদের কাছে কম দামে বিক্রি করতে পারবে। কিন্তু শহুরে (দালাল) যখন সেই পণ্য বিক্রি করার দায়িত্ব গ্রহণ করবে এবং শহরের প্রচলিত দামে ছাড়া পণ্য বিক্রি করতে অসম্মত হবে, তখন নগরবাসীর জন্য তা কষ্টসাধ্য হবে’।

সহিহ ফিক্বহুস সুন্নাহ প্রণেতা বলেন, এ ধরনের ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ হওয়ার কারণে এটি হারাম ক্রয়-বিক্রয়ের অন্তর্ভুক্ত। আর নিষেধ ক্রয়-বিক্রয় বাতিলের দাবি করে। অনুরূপভাবে মুসলমানদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করার কারণেও এটি নিষিদ্ধ। কারণ গ্রাম্য ব্যক্তি শহরে এসে তার পণ্য বিক্রি করতে পারলে হালাল কামাই করতে পারবে এবং মানুষেরাও তাদের প্রয়োজন পূরণ করতে পারবে। কিন্তু দালাল যদি তার জন্য পণ্যমূল্য নির্ধারণের দায়িত্ব পালন করে, যে মানুষের প্রয়োজন ও তাদের দরিদ্রতা সম্পর্কে সম্যক অবগত, তখন সে লাভসহ এমনভাবে মূল্য বৃদ্ধি করে দিবে যে, কখনো তা দ্বিগুণ-বহুগুণে গিয়ে ঠেকতে পারে। এটি ইসলামের উদারতা ও শরীআত প্রণেতার সহজতার বিরোধী। এজন্যই হাদিসে এসেছে, ‘তোমরা লোকদের ছেড়ে দাও। আল্লাহ তাদের কারো দ্বারা কাউকে রিজিক দিবেন’।

আনাস (রা.) বলেছেন, ‘কোন শহরবাসী (দালাল) যেন গ্রামবাসীর পণ্য বিক্রি না করে- এ বিষয়ে আমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে। যদিও সে ব্যক্তি তার নিজের ভাই বা পিতা হয়’।

তালাক্কী
গ্রামের কৃষকরা পণ্য নিয়ে শহরের বাজারে প্রবেশ করার পূর্বেই তাদের কাছ থেকে পাইকারিভাবে তা ক্রয় করে নেয়াকে তালাক্কী বলে। আব্দুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন ‘আমরা ব্যবসায়ী দলের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের নিকট থেকে খাদ্য ক্রয় করতাম। নবী করীম (সা.) খাদ্যের বাজারে পৌঁছানোর পূর্বে আমাদের তা ক্রয় করতে নিষেধ করলেন’। ইবনু ওমর (রা.) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা পণ্য ক্রয় করো না তা বাজারে হাজির না করা পর্যন্ত’। ইমাম বুখারী (রহ.) বলেন,‘অনুচ্ছেদ : সস্তায় পণ্য ক্রয় করার মানসে অগ্রসর হয়ে কাফেলার সঙ্গে মিলিত হয়ে কিছু ক্রয় করার প্রতি নিষেধাজ্ঞা। এ ধরনের ক্রয় প্রত্যাখ্যাত। কেননা জেনেশুনে এমন ক্রয় সম্পাদনকারী ব্যক্তি অবাধ্য ও পাপী। এটা ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ধোঁকা প্রদান করা। আর ধোঁকা দেয়া জায়েজ নয়’।

এভাবে পাইকাররা কৃষকদের কাছ থেকে পণ্যসামগ্রী ক্রয় করে বাজারে একচেটিয়া প্রভাব সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দিতে পারে। সেজন্য রাসূলুল্লাহ (সা.) এরূপ ক্রয়-বিক্রয়কে নিষিদ্ধ করে বলেন, ‘তোমরা (পণ্যবাহী) কাফেলার সাথে (শহরে প্রবেশের পূর্বে) সাক্ষাৎ করবে না’।

একজন ক্রেতা যখন কোন দ্রব্য কেনার জন্য বিক্রেতার সাথে দর-দাম করে, তখন অন্য কেউ যদি তার দামের উপর দাম বলে তাহলে বিক্রেতা দ্রব্যের চাহিদা দেখে অনেক সময় দাম বাড়িয়ে দেয়।

পণ্যদ্রব্য বিদেশে পাচার
আমাদের দেশের একশ্রেণির মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা অর্জনের আশায় সীমান্ত দিয়ে প্রতিবেশী দেশে তেল, চামড়াসহ অন্যান্য দ্রব্য পাচার করে। ফলে দেশে সেসব পণ্যের ঘাটতি পড়ে এবং মূল্য বেড়ে যায়। বিভিন্ন পণ্যের উপর আরোপিত আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির কারণেও অনেক সময় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রতিরোধে করণীয়
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মজুদ কিংবা যোগান বন্ধ করে মূল্য বৃদ্ধির সাথে জড়িত ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে গোয়েন্দা সংস্থা ও জনগণের সহযোগিতায় শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা। যাতে কেউ পরবর্তীতে এ ধরনের অপকর্ম করার দুঃসাহস না দেখায়।
বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, খরা প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় জনগণের কষ্ট লাঘবের জন্য যথাযথ কর্মসূচি হাতে নেওয়া।
সুদভিত্তিক অর্থনীতির কবর রচনা করে ন্যায় ও ইনসাফপূর্ণ ইসলামী অর্থনীতি চালু করা।
মধ্যস্বত্বভোগীরা যাতে অত্যধিক মুনাফা লাভের মানসে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করতে না পারে সেজন্য কার্যকর নিয়ম-নীতি প্রণয়ন ও দণ্ডবিধির ব্যবস্থা করা।
হালাল উপায়ে উপার্জনের বন্দোবস্ত করা। অন্যদিকে অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা এবং সরকার কর্তৃক জনগণের সম্পদের হিসাব গ্রহণ করা।
সকল প্রকারের চাঁদাবাজি বন্ধ করা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা, যাতে পণ্য আমদানি ও পরিবহনের খরচ কমে যায়।
নাজাশ ও তালাক্কী জাতীয় প্রতারণামূলক ক্রয়-বিক্রয় যাতে না চলে সেজন্য বাজার তদারকির ব্যবস্থা করা।

একজন ক্রেতা কোন জিনিসের দাম করলে তার উপর দাম না বলা। কারণ রাসূল (সা.) এরূপ করতে নিষেধ করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোন ব্যক্তি তার মুসলমান ভাইয়ের ক্রয়-বিক্রয়ের উপর ক্রয়-বিক্রয় করবে না এবং তার ভাইয়ের দামের উপর দাম বলবে না’। তিনি আরও বলেন, কোন ব্যক্তি যেন তার ভাইয়ের ক্রয়-বিক্রয়ের উপর ক্রয়-বিক্রয় না করে এবং কেউ যেন তার ভাইয়ের বিবাহের প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব না দেয়। তবে তাকে অনুমতি দিলে ভিন্ন কথা’। ইবনু ওমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোন ব্যক্তি তার মুসলমান ভাইয়ের ক্রয়-বিক্রয়ের প্রস্তাবের উপর বেচাকেনার প্রস্তাব দেবে না, যতক্ষণ না সে ক্রয় করে বা ছেড়ে যায়’। পণ্যের মালিক ও ক্রেতা কোন জিনিস ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যাপারে ঐক্যমত্য পোষণ করল, কিন্তু তা সম্পাদিত হলো না। এমন সময় অন্য আরেকজন এসে বিক্রেতাকে বলল, আমি এটি ক্রয় করব। মূল্য নির্ধারণের পর এটি হারাম। পক্ষান্তরে বিক্রিত পণ্যের দাম যে বেশি বলবে তার কাছে পণ্য বিক্রি করা হারাম নয়।

কোন দ্রব্যের উৎপাদন-সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিলে বা ঘাটতির আশংকা দেখা দিলে আমদানি উৎসাহিত করতে সরকার কর্তৃক শুল্ক কমিয়ে দেয়া এবং জনগণের মৌলিক প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বেশি বেশি আমদানি করা।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির আশংকা দেখা দিলে সরকার কর্তৃক পণ্যদ্রব্যের মূল্য নির্ধারণ করা। এ লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি জাতীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও নির্ধারণ কমিটি গঠন করা যেতে পারে। জাতীয় কমিটির অধীনে প্রতিটি মহানগরে বিভাগীয় কমিশনারকে এবং জেলায় জেলা প্রশাসককে প্রধান করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও নির্ধারণ কমিটি গঠিত হবে।

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য জেলায় জেলায় যে টাস্কফোর্স আছে তাকে সক্রিয় করতে হবে এবং পণ্য সরবরাহ মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে।

দেশে কৃষিপণ্যের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিশাল মার্কেট গড়ে তুলতে হবে।

রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ফসলাদি সংগ্রহ করা। যাতে উৎপাদনকারীরা ন্যায্যমূল্য পায় এবং বাজারের স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। যেমন এবার ধানের দাম পড়ে গেলে কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল। এ সময় জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ও এমপি মাশরাফি বিন মুর্তজা নড়াইলে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার জন্য ডিসিকে নির্দেশ দেন। তাঁর নির্দেশমত নড়াইলে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা হয়। এতে ফড়িয়া ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমে যায়। কৃষকও লাভবান হয়। এ দৃষ্টান্ত অন্যরাও অনুসরণ করতে পারে।

ব্যাংকগুলোতে এলসি বা ঋণপত্রের অর্থ পরিশোধের সময়সীমা কমিয়ে এক মাসের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। তাহলে আমদানিকারকরা মজুদের সময় পাবে না এবং আমদানির সাথে সাথে আমদানিকৃত পণ্যদ্রব্য বাজারে চলে যাবে এবং সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে।

সীমান্ত এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করে চামড়া, তেলসহ অন্যান্য পণ্যসামগ্রী ভারতে পাচার রোধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সীমান্ত এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ফিলিং স্টেশনগুলো বন্ধ করতে হবে, যাতে সেগুলো থেকে ভারতে তেল পাচার না হয়।

উৎপাদনকারীরা যাতে অধিক পরিমাণে পণ্য উৎপন্ন করে সেজন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করা এবং উৎসাহ দেয়া দরকার।

খাদ্যশস্য ও অন্যান্য আবশ্যকীয় ভোগ্যপণ্য ভর্তুকি সহকারে রেশনিং পদ্ধতিতে বিতরণ করা।

রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনার আওতায় ব্যাপকভাবে ভোগ্যপণ্য উৎপাদন ও বণ্টনের সুব্যবস্থা গ্রহণ করা।

অসৎ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে সরকারীভাবে খোলা বাজারে ন্যায্যমূল্যে পণ্যসামগ্রী বিক্রি করার ব্যবস্থা করতে হবে। এ লক্ষ্যে পূর্ব থেকেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরকার মজুদ করে রাখবেন।

মূল্যবৃদ্ধির সময় শারঈ দৃষ্টিতে কিছু করণীয়
দোআ ও তওবা-ইস্তিগফার
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিঃসন্দেহে সমাজের মানুষের উপর অর্পিত একটি বিপদ। এথেকে মুক্তি লাভের জন্য অবশ্যই আল্লাহর দরবারে কাকুতি-মিনতিসহ দোআ করতে হবে এবং বেশি বেশি তওবা-ইস্তেগফার করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি তাদের বলেছি, তোমরা তোমাদের প্রভুর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই তিনি অতীব ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য আকাশ থেকে প্রচুর বারি বর্ষণ করবেন। তিনি তোমাদের মাল-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিবেন এবং তোমাদের জন্য বাগিচাসমূহ সৃষ্টি করবেন ও নদীসমূহ প্রবাহিত করবেন’ ।

ইবনু ছাবীহ বলেন, এক ব্যক্তি হাসান বাছরী (রহ.)-এর নিকটে এসে অনুর্বরতার অভিযোগ করল। তখন তিনি তাকে বললেন, তুমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাও’। অন্য আরেকজন এসে দরিদ্রতার অভিযোগ করলে তিনি বললেন, ‘আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাও’। আরেকজন এসে বলল, আল্লাহর কাছে দোআ করুন, তিনি যেন আমাকে একটি সন্তান দান করেন। তিনি তাকে বললেন, ‘আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাও’। অপর এক ব্যক্তি তার বাগান শুকিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করলে তিনি তাকেও বললেন, ‘আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাও’। আমরা এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমি নিজের পক্ষ থেকে কিছুই বলিনি। আল্লাহ তাআলা সূরা নূহে একথাগুলিই বলেছেন। এরপর তিনি উক্ত আয়াতগুলো পাঠ করলেন।

মহান আল্লাহ আরও বলেন, ‘আমরা তোমার পূর্বেকার সম্প্রদায়সমূহের নিকট রাসূল পাঠিয়েছিলাম। অতঃপর (তাদের অবিশ্বাসের কারণে) আমরা তাদেরকে অভাব-অনটন ও রোগ-ব্যাধি দ্বারা পাকড়াও করেছিলাম। যাতে তারা কাকুতি-মিনতিসহ আল্লাহর প্রতি বিনীত হয়। যখন তাদের কাছে আমাদের শাস্তি এসে গেল, তখন কেন তারা বিনীত হলো না? বরং তাদের অন্তরসমূহ শক্ত হয়ে গেল এবং শয়তান তাদের কাজগুলিকে তাদের নিকটে সুশোভিত করে দেখালো’ । হাফেয ইবনু কাছীর (রহ.)-এর ব্যাখ্যায় বলেন, আল্লাহর নিকটে দোআ করে, তাঁর নিকটে কাকুতি-মিনতি করে এবং বিনীত হয়’।

জনৈক পূর্বসূরি বিদ্বানকে বলা হলো, দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেছে। তখন তিনি বললেন, ‘তোমরা ইস্তিগফারের মাধ্যমে এর মূল্য হ্রাস করে দাও’। এর প্রমাণে তিনি সূরা নূহের ১০-১২ আয়াত তেলাওয়াত করলেন।

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে একজন ব্যক্তি এসে তাঁকে মূল্য নির্ধারণের আবেদন জানালেন। তখন তিনি বললেন, বরং আমি আল্লাহর কাছে দোআ করব’। এ হাদিস থেকেও ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে আল্লাহর নিকট মূল্য হ্রাসের জন্য বেশি বেশি দোআ করতে হবে। এ সময় নিম্নোক্ত দোআগুলি পড়া যায় (হে আল্লাহ!) তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি পবিত্র। আমি সীমালংঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত’। হে আল্লাহ! আমি তোমার রহমত কামনা করি। তুমি আমাকে এক মুহূর্তের জন্যও আমার নিজের হাতে ছেড়ে দিও না। বরং তুমি স্বয়ং আমার সমস্ত ব্যাপার ঠিক করে দাও। তুমি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই’। সহনশীল মহান আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, যিনি মহান আরশের অধিপতি। আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, যিনি আসমান সমূহ ও জমিনের রব এবং মহান আরশের রব’।

অপচয় পরিহার
অপচয় যেকোনো সময় পরিত্যাজ্য। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সময় এটি আরও বেশি পরিত্যাজ্য। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা খাও ও পান কর। কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীদের ভালবাসেন না’ । নবী করীম (সা.) বলেন, তোমরা খাও, পান করো, পরিধান করো এবং অপচয় ও অহংকার ছাড়াই দান করো’।

অল্পে তুষ্টি মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমার ভাগ্যে আল্লাহ যা নির্ধারণ করে রেখেছেন তাতে খুশি থাকলে তুমি সবচেয়ে সুখী মানুষ বলে গণ্য হবে’। তিনি আরও বলেন, যে ইসলাম গ্রহণ করেছে, তাকে প্রয়োজন পরিমাণ রিজিক দেয়া হয়েছে এবং আল্লাহ তাকে যে সম্পদ দিয়েছেন তাতে পরিতৃপ্ত হওয়ার শক্তি দিয়েছেন, সেই সফলতা লাভ করেছে’।

বর্ধিত মূল্যের জিনিস পরিহার
ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রা.)-এর যুগে লোকেরা তাঁর নিকটে এসে বলল, আমরা আপনার নিকটে গোশতের মূল্য বৃদ্ধির অভিযোগ করছি। অতএব আপনি আমাদের জন্য এর মূল্য নির্ধারণ করে দিন। তখন তিনি বললেন, তোমরাই এর মূল্য হ্রাস করে দাও । তখন তারা বলল, আমরা মূল্যবৃদ্ধির অভিযোগ করছি। গোশত কসাইদের নিকটে আছে এবং আমরা এর প্রয়োজন অনুভব করছি। আর আপনি কি-না বলছেন, তোমরা নিজেরাই এর মূল্য হ্রাস করে দাও? আমরা কি গোশতের মালিক যে, এর মূল্য কমিয়ে দিব? যে জিনিস আমাদের হাতে নেই, তার মূল্য আমরা কিভাবে হ্রাস করব? তখন তিনি তার সেই মূল্যবান উক্তিটি করলেন, ‘তাদের নিকট থেকে গোশত কেনা ছেড়ে দাও’।

আলে আব্বাস-এর মুক্তদাস রাযীন বিন আল-আ‘রাজ বলেন, মক্কায় কিশমিশের দাম বৃদ্ধি পেলে আমরা বিষয়টি লিখিতভাবে আলী (রা.)-কে জানালাম। তখন তিনি জবাবে লিখলেন, তোমরা খেজুর দ্বারা এর মূল্য হ্রাস করে দাও। অর্থাৎ তোমরা কিশমিশের পরিবর্তে খেজুর ক্রয় করো। যেটি হিজাযে পর্যাপ্ত ছিল এবং তার মূল্যও কম ছিল। এতে কিশমিশের চাহিদা কমে যাবে এবং তা সস্তা হয়ে যাবে।

আববাসীয় কবি মাহমুদ আল-অর্রাক (মৃ. ৮৪৪ খৃ.) বলেন,যখন আমার উপর কোন জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি পায়, তখন আমি তা ক্রয় করা পরিহার করি। তখন মূল্যবৃদ্ধির সময় তা সস্তায় পরিণত হয়’।

আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ করা
যেকোনো বিপদ-আপদ আল্লাহর নিকট সোপর্দ করলে এবং তাঁর সম্পর্কে সুধারণা পোষণ করলে আল্লাহ তা আমাদের জন্য সহজ করে দেন। মহান আল্লাহ বলেন,যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্যে উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন। আর তাকে তার ধারণাতীত উৎস থেকে রিজিক দান করবেন’!

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সময় আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণের ক্ষেত্রে যে বিষয় লক্ষণীয়
আল্লাহর প্রতি কেউ সুধারণা পোষণ করলে আল্লাহ তাকে সেই জিনিসটি দান করেন। আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ বলেন, আমি সে রকমই, যে রকম আমার প্রতি বান্দা ধারণা রাখে’।

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রা.) বলেন, যিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই সেই সত্তার কসম করে বলছি, মহান আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণের চেয়ে উত্তম কোন জিনিস মুমিন বান্দাকে প্রদান করা হয়নি। যিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই তার কসম করে বলছি, কোন বান্দা যদি আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ করে তাহলে আল্লাহ তাকে তার ধারণাকৃত জিনিসটি প্রদান করেন। এ কারণে যে, যাবতীয় কল্যাণ আল্লাহর হাতে রয়েছে’। আল্লাহ কষ্টের পর সহজতার ওয়াদা করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, অতঃপর নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে। নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে’! আল্লাহর চেয়ে বান্দার প্রতি অধিক দয়ালু আর কেউ নেই। আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ যখন সৃষ্টির কাজ শেষ করলেন, তখন তিনি তাঁর কিতাবে (লওহে মাহফূযে) লিখেন, যা আরশের ওপর তাঁর নিকট আছে। ‘নিশ্চয়ই আমার রহমত আমার ক্রোধের উপর প্রবল’। আল্লাহ প্রত্যেকের জন্য রিজিক লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি বা অন্য কিছু আপনার ও রিজিকের মধ্যে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারবে না। মহান আল্লাহ বলেন, আর ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী এমন কোন প্রাণি নেই যার রিজিক আল্লাহর জিম্মায় নেই। আর তিনি জানেন তার অবস্থানস্থল ও সমর্পণস্থল। সবকিছুই সুস্পষ্ট কিতাবে (লওহে মাহফূযে) লিপিবদ্ধ রয়েছে’। তিনি আরও বলেন, এমন কত প্রাণি আছে যারা (আগামীকালের জন্য) তাদের খাদ্য সঞ্চয় করে না। আল্লাহ তাদের রিজিক দেন এবং তোমাদেরকেও দেন। তিনি সবকিছু শোনেন ও জানেন’ । আল্লাহ আরও বলেন, ‘আর আকাশে রয়েছে তোমাদের রিজিক এবং তোমাদের প্রতিশ্রুত বিষয়সমূহ’ । রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন ‘আদম সন্তান যদি তার রিজিক থেকে পলায়ন করত, যেমন সে মৃত্যু থেকে পলায়ন করে, তবুও তার রিজিক তার নাগাল পেয়ে যেত, যেভাবে মৃত্যু তার নাগাল পায়’।

রিজিকে বরকত বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণ
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য রিজিক বৃদ্ধি হয় এমন কর্ম সমূহ সম্পাদনে মনোযোগী হতে হবে। কারণ সম্পদ বেশি হওয়াটা মুখ্য নয়; বরং মুখ্য হলো তাতে বরকত লাভ। রিজিকে বরকত বৃদ্ধির মৌলিক কয়েকটি উপায় হলো: আত্মীয়তার বন্ধন অক্ষুণ্ণ রাখা

নবী করীম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি চায় যে, তার রিজিক প্রশস্ত হোক এবং আয়ু বর্ধিত হোক, সে যেন তার আত্মীয়তার বন্ধন অক্ষুণ্ণ রাখে’।

বরকতের দোআ করা
নবী করীম (সা.) দোআ করতেন, হে আল্লাহ! আমাদের ছা-য়ে বরকত দান করুন! হে আল্লাহ! আমাদের মুদে বরকত দান করুন! হে আল্লাহ! আমাদের মদিনায় বরকত দান করুন! হে আল্লাহ! বরকতের সাথে আরও দু’টি বরকত দান করুন’।

আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা
প্রত্যেক দিন সকালে দানশীল ব্যক্তির জন্য ফেরেশতা দোআ করেন,‘হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন’!

ঋণ পরিশোধ করা
আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, যে তার ঋণ পরিশোধের নিয়ত করে, সে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য লাভ করে এবং আল্লাহ তার জন্য রিজিকের ব্যবস্থা করে দেন’।

দুর্বল ও অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো
দুর্বল, অসহায় ও গরীব-দুঃখীদের সাহায্য-সহযোগিতা করা এবং বিপদে তাদের পাশে দাঁড়ানো দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও অন্যান্য বালা-মুসিবত থেকে মুক্তির উপায়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ বান্দার সাহায্যে অতক্ষণ থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে থাকে’। আবু দারদা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা দুর্বলদের মধ্যে আমাকে অনুসন্ধান করো। কারণ তোমরা তোমাদের মধ্যকার দুর্বলদের কারণেই রিজিক এবং সাহায্য প্রাপ্ত হয়ে থাক’।

ইবাদতে মনোযোগী হওয়া
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সময় রিজিকের চিন্তায় বিভোর হয়ে আল্লাহর ইবাদত থেকে গাফেল থাকা যাবে না। বরং ছবর ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করত রিজিকের অনুসন্ধানে ব্যাপৃত থাকতে হবে। জনৈক পূর্বসূরি বিদ্বানের যুগে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেল। তাকে এ খবর জানানো হলে তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কসম! যবের দানার মূল্য যদি এক দীনারও হয় তাতে কুছ পরোয়া নেই। আমার কর্তব্য হলো আল্লাহ আমাকে যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন সেভাবে তাঁর ইবাদত করা আর আল্লাহর কর্তব্য হলো তাঁর ওয়াদা মোতাবেক আমাকে রিজিক দেওয়া’।

লেনদেনে সহজতা অবলম্বন
সহজতা ইসলামী শরী‘আতের অনন্য বৈশিষ্ট্য। দৈনন্দিন লেনদেনের ক্ষেত্রে মানুষেরা সহজতার প্রয়োজন বেশী অনুভব করে। বিশেষত মুসলিম উম্মাহর উপর অর্পিত সংকটের সময়। এজন্য সৎ ব্যবসায়ীর বৈশিষ্ট্য হ’ল তার সাথে যারা লেনদেন করে তাদের সাথে সহজতা অবলম্বন করা। উক্ববা বিন আমের (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ সম্পদ দান করেছিলেন তাঁর এমন এক বান্দাকে কিয়ামতের দিন উপস্থিত করে বলবেন, তুমি দুনিয়ায় কি আমল করেছ? সে বলবেন, প্রভু হে! আমি কোন আমল করিনি। তবে আপনি আমাকে সম্পদ দান করেছিলেন। আমি মানুষের নিকট কেনাবেচা করতাম। আমার বৈশিষ্ট্য ছিল, আমি সচ্ছল ব্যক্তির জন্য সহজতা অবলম্বন করতাম এবং গরীব ব্যক্তিদের অবকাশ দিতাম। আল্লাহ বলেন, তোমার চেয়ে আমিই এর অধিক হকদার। তোমরা আমার বান্দার দোষ-ত্রুটি এড়িয়ে যাও’।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মহান আল্লাহ এমন একজন ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যে ক্রেতা, বিক্রেতা, বিচারক ও বিচারপ্রার্থী অবস্থায় সহজতা অবলম্বনকারী ছিল’। আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্রয়, বিক্রয় ও বিচারের ক্ষেত্রে উদারতাকে পছন্দ করেন’।

তাকওয়া অবলম্বন করা
সর্বোপরি তাকওয়া অবলম্বন করা একান্ত কর্তব্য। কারণ তাকওয়াই রিজিকে বরকত ও প্রশস্ততা আনয়ন করে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘জনপদের অধিবাসীরা যদি বিশ্বাস স্থাপন করত ও আল্লাহভীরু হতো, তাহলে আমরা তাদের উপর আকাশ ও পৃথিবীর বরকতের দুয়ারসমূহ খুলে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যারোপ করল। ফলে তাদের কৃতকর্মের দরুন আমরা তাদেরকে পাকড়াও করলাম’ । তিনি আরও বলেন, ‘যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্যে উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন। আর তাকে তার ধারণাতীত উৎস থেকে রিজিক দান করবেন’

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। বিভিন্ন দেশের জনগণ এতে নাকানি-চুবানি খাচ্ছে। এটি আমাদের উপর মুসিবত হিসাবে অর্পিত হয়েছে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য ব্যবসায়ীদের মধ্যে নৈতিকতাবোধের উজ্জীবন ঘটাতে হবে। এর দুনিয়াবি প্রতিকারের সাথে সাথে শারঈ যেসব করণীয় উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলি পরিপালন করতে হবে। বেশি বেশি দোআ ও তওবা-ইস্তিগফার পাঠ করতে হবে। সর্বোপরি মৃত্যুকে স্মরণ করতে হবে। তাহলে সব চিন্তা, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা দূর হয়ে যাবে। বিশর ইবনুল হারিছ যথার্থই বলেছেন, তুমি যখন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য উদ্বিগ্ন হবে তখন মৃত্যুকে স্মরণ করবে। কারণ মৃত্যুকে স্মরণ তোমার মন থেকে মূল্যবৃদ্ধির দুশ্চিন্তা দূরীভূত করে দেবে’।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত