মিহিরকান্তি চৌধুরী

২৭ জুলাই, ২০২৩ ১৮:৩৬

দ্য প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান : ব্যতিক্রমধর্মী এক প্রতিষ্ঠান

কখনও কখনও, একজন ব্যক্তি তাঁর চিন্তার বহুমুখী মাত্রা, তাঁর চরিত্রের ব্যাপ্তি ও গভীরতা এবং সমাজ, সভ্যতা, দেশ এমনকি ব্যক্তির প্রতি তাঁর বৃহত্তর দায়বদ্ধতা নিয়ে একটি প্রতিষ্ঠানে রূপ নিতে পারেন, পারেন অবস্থান গ্রহণ করতে। এধরনের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে তো বটেই, পুরো উপমহাদেশে সচরাচর দেখা যায় না। এধরনের প্রতিষ্ঠান কারও সুবিধামতো সময়ে বা পরিস্থিতিতে দেখা যাবে না। তাঁদের ঐতিহ্যগত চরিত্রের সঙ্গে মৌলিক মানবিক প্রবৃত্তিগুলো তাঁদেরই মধ্যে বিস্ময়করভাবে উপস্থিত, সম্পূর্ণরূপে বিকশিত। তাঁরা সমাজ ও দেশের সম্পদ। আমরা তাঁদের অনুসরণ করি, করি অনুকরণ এবং আশা করি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাঁদের অনুসরণ ও অনুকরণ করবে। তাঁরা সর্বজনশ্রদ্ধেয়, অনেক সম্মানী ব্যক্তি নিজ অঞ্চলে, সারা দেশে, দেশ ছাড়িয়ে সারা বিশ্বে। তাঁদের অবদান ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে ছিল না, হয়ও না। তাঁরা পুরো সমাজ, দেশ ও মানবজাতির কল্যাণে কাজ করেছেন। এমনই বিরল প্রতিভার একজন মহান ব্যক্তি হলেন সিলেট তথা বাংলাদেশের গৌরব ও অহংকার, এক সময়ের কৃতী ছাত্র পরবর্তীকালে মনস্বী অধ্যাপক, ভাইস চ্যান্সেলর, সমাজ বিজ্ঞানী, সমাজ সংস্কারক, লেখক, গবেষক ও শিক্ষাবিদ প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান।

প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ছিলেন একজন সমাজ হিতৈষী আদর্শ শিক্ষক। নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষা প্রশাসক ও মৃদুভাষী সমাজ সংস্কারক। আপাদমস্তক প্রগতিশীল, খাঁটি অসাম্প্রদায়িক নিপাট এক ভদ্রলোক। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন ভাইস চ্যান্সেলর, লেখক, গবেষক, সমাজ বিজ্ঞানী ও বহুমাত্রিক প্রতিভা ও পরিচয়ের অধিকারী প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান শুধুু এক ব্যক্তির নাম নয়, যুগপৎ একটি প্রতিষ্ঠানের নাম। ্এজন্যই প্রবন্ধকার বর্তমান প্রবন্ধের শিরোণাম রেখেছেন ‘দ্য প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান : ব্যতিক্রমধর্মী এক প্রতিষ্ঠান’ । এই নামকরণে ‘দ্য’ শব্দের এই অর্থে তাৎপর্য আছে যে, ইংরেজি ভাষার ব্যাকরণ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের নামের পূর্বে ‘দ্য’ বসে। আজ ২৭ জুলাই ২০২৩, খ্যাতিমান এই শিক্ষাবিদের ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি ও তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি।

জন্ম, বাল্যকাল ও প্রখম পর্যায়ের শিক্ষা
প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান হবিগঞ্জ জেলার নবিগঞ্জ উপজেলার কলকলিয়া (স্থানীয়ভাবে ‘কলকলি’) নদীর তীরবর্তী চানপুর গ্রামে ১৯৪২ সালের ১লা জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। জানা যায়, মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের পূর্বপুরুষের নিবাস ছিল সিলেট জেলার বর্তমান বালাগঞ্জ উপজেলার হাজিপুর অঞ্চল। ওখান থেকে তাঁরা বর্তমান হবিগঞ্জ জেলাধীন নবীগঞ্জ উপজেলার হরিধরপুর গ্রামে বসতি স্থাপন করেন । এখান থেকে তাঁর পিতামহ বর্তমান চানপুর গ্রামে বসতি গড়ে তোলেন। তাঁর পিতার নাম মোহাম্মদ মহব্বত মিয়া ও মায়ের নাম মোসাম্মাৎ জিরা খাতুন। দাদার নাম আশ্বদ উল্লাহ। গ্রামের পাঠশালায় তিনি তাঁর পড়াশোনা শুরু করেন। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত তিনি এ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেন। তিনি ১৯৫৮ সালে নবীগঞ্জ যুগল কিশোর হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। সিলেট মুরারিচাঁদ কলেজে ভর্তি হলেও কিছুদিন পর চলে যান হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজে। সেখান থেকে আইএ পাশ করেন।

উচ্চশিক্ষা ও কর্মজীবন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ভর্তি হলেও সেখানে মন টেকেনি। শেষ পর্যন্ত ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকল্যাণ বিষয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। একই সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগে প্রভাষক পদে যোগ দেন। ১৯৬৫ সালের মাঝামাঝি সহকারী অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। এই পদে ছিলেন প্রায় বারো বছর। ইতোমধ্যে ১৯৬৮ সালে স্কটল্যান্ডের এডিনবরা ইউনিভার্সিটি থেকে কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট ও ইয়ুথ স্টাডিজ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা অর্জন করেন। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ পর্যন্ত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের উপ-পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮১ সালে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। ১৯৮৯ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর হিসেবে পদোন্নতি লাভ করে বিভাগে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৯ থেকে ১৯৯২ সাল পযর্šÍ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শেরে বাংলা হলে প্রভোস্টের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। ১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বরে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। এখানে নানা পদে থাকার পর প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, তারপর ভাইস চ্যান্সেলর হয়েছেন এবং সব শেষে বিভাগে প্রফেসর পদে ফিরে যান।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পর্ব
প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ১৯৯২ সালে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকর্ম বিভাগের প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৪ সালে থেকে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন এর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এছাড়াও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান, পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের বিভাগীয় প্রধানেরও দায়িত্ব পালন করেন প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ সমাজকর্ম শিক্ষক সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে বিশেষত ১৯৯২-৯৩ সালে তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা এবং ১৯৯১-১৯৯৩ পর্যন্ত শাবিপ্রবির রেজিস্ট্রারের দায়িত্বও পালন করেন।

১৯৯৬ সালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। ১৯৯৭ সালের ২০ জুলাই শাবিপ্রবির তৃতীয় ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯ জুলাই ২০০১ সালে ভাইস-চ্যান্সেলরের মেয়াদ শেষ করে এ বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রফেসর হিসেবে কাজ করে যান। ২০০২ সালে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরগ্রহণ করেন।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর থাকাকালীন প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান প্রগতিশীল চিন্তাচেতনা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুমাত্রিক গুণগত মানের উন্নয়ন ঘটিয়েছিলেন। বিগত শতকের নব্বইয়ের দশকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণবিরোধী আন্দোলনের সময় বহুমুখী রাজনৈতিক চাপ তাঁকে হার মানাতে পারেনি। কতটা সাহসী হলে সেই উত্তাল দিনগুলোতে ক্যাম্পাসের বাসভবনে পরিবার পরিজন নিয়ে থেকেছেন তা সহজেই অনুমেয়। বিরুদ্ধবাদীরা তাঁকে নাস্তিক-মুরতাদ আখ্যা দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এমনকি তারা তাঁর বাসভবনে বোমা হামলা চালায়। কিন্তু কোনও চাপই তাঁকে দমাতে  পারেনি। শেষ পর্যন্ত মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদ নামকরণসংক্রান্ত সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত স্থগিত ঘোষণা করেন।

ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের কীর্তিময় জীবনের স্মারক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের সুদৃশ্য কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার। এ শহিদ মিনার প্রতিষ্ঠার পেছনে তাঁর ঐকান্তিক ইচ্ছা এবং শাবি শিক্ষক সমিতিসহ প্রফেসর মুহম্মদ জাফর ইকবালের সার্বিক প্রচেষ্টা কার্যকর ছিল। শিল্পী নিতুন কু-ুকে দিয়ে ডিজাইন তৈরির মাধ্যমে এ শহিদ মিনার নির্মিত হয়। তাঁর সময়ে পাঠদান পদ্ধতি, পরীক্ষা পদ্ধতিসহ অন্যান্য বিষয়ে যুগান্তকারী পরিবর্তন লক্ষ করা যায় । সুদৃশ্য লাইব্রেরি ভবনসহ দুটি একাডেমিক ভবন, ছাত্রহল, শিক্ষকদের ডরমেটরি, গেস্ট হাউস, তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারীদের বাসস্থান, ছাত্রী হল বর্ধিতকরণ এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল প্রতিষ্ঠা তাঁর ব্যতিক্রমধর্মী কর্মপ্রয়াসের অমর স্মারক। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে চ্যান্সেলর হিসেবে রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদ অংশগ্রহণ করেন। এ অনুষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এক আলোকময় অনুষ্ঠান । এ সফল কর্মযজ্ঞের নেতৃত্বে¡ ছিলেন ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। তিনি ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক, দক্ষ প্রশাসক ও সাদামনের চমৎকার মানুষ। ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থরক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতেন। এজন্য অনেক সময় তাকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। আন্দোলন সংগ্রামের মুখেও তিনি তাঁর নীতি-আদর্শ থেকে সরে আসতেন না।

মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি পর্ব
২০০৩ সালে সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ও ডিন হিসেবে যোগদান করেন। ২০০৫ সালে মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে নিযুক্ত হন। এখানেও তিনি বিদ্যায়তনিক অনেক চিন্তাচেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছিলেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন। মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের মান্যবর চেয়ারম্যান ড. তৌফিক রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে কর্তৃপক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান স্যারের নামে ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরি হলের নামকরণ করেছেন এবং প্রতি বছর স্যারের মৃত্যুদিবস পালন করে নতুন প্রজন্মের কাছে স্যারের আদর্শকে পৌঁছে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের মান্যবর চেয়ারম্যান ড. তৌফিক রহমান চৌধুরীর প্রতি বিনম্র কৃতজ্ঞতা জানাই। প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে যান।

পেশাগত সংযোগ
প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন, আসীন ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ পদে । ১৯৭৫ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত লন্ডন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত কমিউনিটি ডেভেলাপমেন্ট জার্নাল : 'এন ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম'- এর তিনি ছিলেন বাংলাদেশ প্রতিনিধি । ১৯৮২-৮৩ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজসেবা বিভাগ থেকে প্রকাশিত ডাইরেক্টরি অব ভলান্টারি সোস্যাল ওয়েলফেয়ার এজেন্সিজ-এর তিনি ছিলেন সম্পাদকম-লীর সদস্য। ১৯৮২-৮৩ সালে ভারতের কলকাতা থেকে প্রকাশিত সোস্যাল সায়েন্সে একাডেমির পত্রিকা ‘সোস্যালজিক্যাল পারসপেক্টিভস'-এর তিনি ছিলেন বুক রিভিয়্যূ এডিটর। তিনি ১৯৮৭-৮৮ সালে বাংলাদেশ সোস্যাল ওয়ার্ক টিচারস এসোরিয়শানের সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন । ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ সোস্যাল সায়েন্স এসোসিয়েশানের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত সাস্ট স্টাডিজ এর সম্পাদকম-লীর সভাপতি ছিলেন। তিনি বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্যও ছিলেন। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দায়বোধ থেকে বিভিন্ন প্রকাশনার সাথে জড়িত ছিলেন। বৃহত্তর ইতিহাস প্রণয়ন পরিষদের সম্পাদক ছাড়াও তিনি বিভিন্ন স্মারকগ্রন্থ, সংবর্ধনাগ্রন্থ ও সাহিত্যপত্রের প্রকাশনার সার্থক প্রকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। অনেক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। ১৯৮১ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজসেবা অধিদপ্তরের জাতীয় কাউন্সিল সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ সরকারের সমাজসেবা অধিদপ্তরের নির্বাহী সদস্যও ছিলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলের প্রভোস্ট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচিত সম্পাদকসহ বিভিন্ন দায়িত্বে কাজ করেন ।  

সংসারজীবন ও দায়িত্বশীল মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান
১৯৬৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগে প্রভাষক পদে যোগ দেন । একই সালের ৮ অক্টোবর তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। নবীগঞ্জ থানার রাইয়াপুর গ্রামের বাসিন্দা, নবীগঞ্জ থানার স্বনামখ্যাত ডা. মিম্বরুর রহমান চৌধুরীর প্রথমা কন্যা মমতাজ সুলতানার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তখন মমতাজ সুলতানা নবীগঞ্জ জেকে হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী। ১৯৫৪ সালে তিনিও জেকে হাইস্কুল থেকে মেট্রিক পাশ করেন। এখানে উল্লেখ্য যে, প্রফেসর হাবিবুর রহমানের উৎসাহ-উদ্দীপনায় বেগম মমতাজ সুলতানা আই.এ থেকে শুরু করে এমএ পর্যন্ত বহিরাগত পরীক্ষার্থী হিসেবে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হন এবং সরকারি চাকুরি শেষে অবসরে যান। স্ত্রী-পুত্রকন্যা ছাড়াও ঢাকা মেডিকেল কলেজপড়ুয়া ভাইকেও আর্থিক সাহায্য করেছেন সীমিত আয়ের মধ্যে থেকেও। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি খুবই বিনয়ী ও আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী তিনি একজন সফল পিতাও। মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান দম্পতির পাঁচ সন্তান, চার ছেলে, এক মেয়ে। সকলেই সুপ্রতিষ্ঠিত।

নীতিবোধসম্পন্ন প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান
প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের মতো এমন সৎ, নীতিবান, ইতিহাস ও সমাজ সচেতন মানুষ সমাজে রয়েছেন হাতেগোনা কয়েকজন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তাঁকে বলা হলো ভাইস চ্যান্সেলরের দায়িত্ব গ্রহণ করতে। তিনি রাজি হলেন না। বললেন, বর্তমান ভাইস চ্যান্সেলরের মেয়াদ রয়েছে (তখনকার ভাইস চ্যান্সেলর ছিলেন প্রফেসর ড. সৈয়দ মহিব উদ্দিন আহমেদ)। এ অবস্থায় আমি দায়িত্ব নিতে পারি না। আমাকে যদি ভাইস চ্যান্সেলর করতে হয়, তাহলে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর করুন। উনার মেয়াদ শেষ হলে আমি ভাইস চ্যান্সেলরের দায়িত্ব নেবো। তাঁর ইচ্ছেমতো পরে তাই হয়েছিল। এমন নীতিবোধ তো এখন অকল্পনীয়।

তিনি ভাইস চ্যান্সেলর থাকা অবস্থায় একবার ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজনকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়া। অনেকের মত ছিল, তিনি মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের লোক। আর মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের দল আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় অথচ ছাত্রলীগের ছেলেরা বহিষ্কার হবে। এ নিয়ে তাঁর ওপর অনেক রাজনৈতিক চাপ ছিল। তীব্র আন্দোলন চলতে থাকল। বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে পড়ে অচল। ক্লাস-পরীক্ষা সবকিছুই বন্ধ। পরে অবশ্য জাতীয় পর্যায়ের নেতাদের হস্তক্ষেপে এই অচলাবস্থার সুরাহা হয়। কিন্তু তিনি তাঁর সিদ্ধান্তে অটল, অবিচল ছিলেন। এমন ব্যক্তিত্ববান মানুষ ছিলেন তিনি।

ভাইস চ্যান্সেলর থাকাকালীন তাঁর মেজো ছেলে নাজমুল হাবীব সুমন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়ে প্রভাষক পদে প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু পরীক্ষা শেষে দেখা গেলো তিনি অকৃতকার্য হয়েছেন। প্রফেসর হাবিবুর রহমান এক্ষেত্রে ছিলেন সম্পুর্ণ নিরপেক্ষ। পরের বছর নতুন নিয়োগে নিয়মতান্ত্রিক পরীক্ষার মাধ্যমে সুমন শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। আরেকটি ঘটনা, তাঁর তৃতীয় ছেলে আহসান হাবীব বাবু এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ কোর্সে ভর্তির জন্য আবেদন করেন। কিন্তু ফলাফলে দেখা যায়, বাবু উত্তীর্ণ হতে পারেননি। ভাইস চ্যান্সেলর হাবিবুর রহমান যেকোনও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ কোর্স করার জন্য ছেলেকে পরামর্শ দেন । এভাবেই বাবু বেসরকারি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ ডিগ্রি লাভ করেন।
শিক্ষক নিয়োগ বা পদোন্নতিতে দলীয় সংশ্লিষ্টতা দেখতেন না, শিক্ষককেই দেখতেন। তাঁর মতে, আমরা শিক্ষকের গুণসম্পন্ন ব্যক্তিদেরই শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে থাকি সে যে দলেরই হোক। দলটল এগুলো পারসোনাল ক্যাপাসিটি বা ব্যক্তিগত আওতার বিষয়। তবে ্এসকল শিক্ষকের অনেকেই প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের বোধের মর্যাদা দিতে পারেননি। এক পর্যাযে তাঁরা দলীয় ওষুধ ঠিকই বিক্রি করেছেন।

লেখক ও গবেষক
প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান অসংখ্য গ্রন্থের প্রণেতা। গ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, সমাজকর্ম, সমাজকল্যাণ নীতি ও কর্মসূচি, সমষ্টি উন্নয়ন ও সমষ্টি সংগঠন, সমাজকর্ম ও সামাজিক উন্নয়ন, আত্মহত্যার আর্থ-সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক কারণ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ‍ঝড়পরধষ ডড়ৎশ ধহফ উবাবষড়ঢ়সবহঃ, ঝড়পরড়-ঊপড়হড়সরপ ধহফ চংুপযড়ষড়মরপধষ ঈধঁংবং ড়ভ ঝঁরপরফব রহ ঔযবহবরফধয, টৎনধহরংধঃরড়হ ধহফ টৎনধহ ঝড়পরধষ ঝবৎারপব রহ ইধহমষধফবংয ইত্যাদি। বিভিন্ন কাগজে নিয়মিত কলাম লিখতেন। প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের লেখা বিষয় বৈচিত্র্যে ভরপুর। কালের বিবর্তন নিয়ে তিনি যেমন লিখেছেন তেমনি লিখেছেন সমসাময়িক নানাবিধ বিষয় নিয়ে। তাঁর এইসব বহুমাত্রিক লেখায় উঠে এসেছে এই উপমহাদেশের ইতিহাস ও সামাজিক পরিবর্তন, সামাজিক আন্দোলন, বাঙালির আত্মপরিচয়, বাংলাদেশে জামায়তে ইসলামীর রাজনৈতিক কৌশল, প্রশাসনিক বিবর্তন ও সিলেটের ইতিহাস ও ঐতিহ্য, সিলেটে সাংবাদিকতার শতবর্ষের ইতিহাস, বাংলাদেশের শিক্ষা নীতি ও তার সংস্কার, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার চালচিত্র, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নানাবিধ প্রসঙ্গসহ অসংখ্য বিষয়ে। স্বাধীন বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির হাতে নিহত বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীদের মৃত্যু তাঁকে ভীষণভাবে আলোড়িত করেছিল, তাঁর কলমে তাই উঠে এসেছে বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যাকা-ের প্রসঙ্গ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক ড. মোহাম্মদ ইউনুস ও ড. তাহেরের নির্মম হত্যাকা-ের বিষয়গুলো।

তিনি বৃহত্তর সিলেটের ইতিহাস যৌথভাবে সম্পাদনা করেন। প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান প্রণীত গ্রন্থসমূহকে পাঁচ খ-ের রচনাবলি আকারে ২০২১ সালে প্রকাশ করেছেন ঢাকার অন্যতম কুশল প্রকাশক উৎস প্রকাশন। রচনাবলির ৫ম খ-ে প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অগ্রন্থিত লেখাগুলো স্থান পেয়েছে। প্রবন্ধাকারে তাঁর আরও অনেক মূল্যবান লেখা রয়েছে যেগুলো গ্রন্থিত নয়। দুর্লভ রচনাসমূহ উদ্ধার করে প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করাও প্রয়োজন।

প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের রসবোধ
প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের তীক্ষ্ণ রসবোধের অধিকারী ছিলেন। অতি ব্যস্ততার মাঝেও সামাজিক লোক ছিলেন। বিভিন্ন পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে তাঁর অকৃত্রিম মেলামেশা ও আন্তরিকতায় পুরো পরিবেশ নতুন মাত্রা লাভ করত। তাঁর রসবোধ এত উচ্চমাত্রার ছিল যে সকলে প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করত এবং এর মধ্যেও অ্যাকাডেমিক উপাদান থাকত। বাসা বানানোর কথা প্রসঙ্গে একদিন বললেন, “সব বাসাই তো আমাদের। আগের বাসাটা ছিল আমার (ভাড়া বাসার নাম রহমান মঞ্জিল), পরেরটা আমার সহধর্মিনীর (ভাড়া বাসার নাম মমতাজ ভিলা, ম্যাডামের নাম মমতাজ সুলতানার সঙ্গে মিল আছে)। সর্বত্রই আমাদের জন্য বাসা বানানো আছে। আমরা শুধুু রক্ষণাবেক্ষন খরচ দিই। এভাবে আরও ঘটনা আছে।

জীবনাবসান
২০০৬ সালের ২৭ জুলাই অক্টোবর মাসে তিনি অকস্মাৎ অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি তখন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁর মতো বহুমাত্রিক পরিচয় ও প্রতিভার অধিকারী ব্যক্তিত্বের প্রয়াণে সামাজিক, সাংস্কৃতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে শিক্ষাঙ্গন সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে। প্রতিটি অঙ্গনে শূণ্যতা সৃষ্টি হয় যা কখনও পূরণ হওয়ার নয়।

শেষ কথা
প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের মতো বহুমাত্রিক প্রতিভার একজন ব্যক্তিত্বের এখনও সঠিক মূল্যায়ন হয়নি। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ে অধ্যাপনার নিজ সমাজ কর্ম বিভাগে তাঁর পরিবারের দেওয়া বইগুলো দিয়ে প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের নামে বিভাগীয় গ্রন্থাগারে একটি কর্ণার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাছাড়া, প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের নামে একটি এডুকেশন ট্রাস্ট রয়েছে। এটি ট্রাস্টিরা চালান যার মধ্যে তাঁর পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন। প্রতি বছর এই ট্রাস্ট থেকে অসচ্ছল অথচ মেধাবী শিক্ষার্থীদেও বৃত্তি প্রদান করা হয়। এ বছর প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের অন্যতম কর্মস্থল মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটিতে দশজন এ ধরনের শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। তৃতীয়ত, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির কর্তৃপক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের মৃত্যুর পর তাঁর নামানুসারে লাইব্রেরি হলের নামকরণ করেন, ‘প্রফেসর এম. হাবিবুর রহমান হল’। চতুর্থত, তাঁর মৃত্যুর পরপরই সিলেট ইতিহাস পরিষদ কর্তৃক একটি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। আরও কিছু উদ্যোগ রয়েছে। তবে সেগুলো নিতান্তই অপ্রতুল। তাছাড়া, এসব উদ্যোগের প্রচার ও প্রসারের ব্যাপক প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের একটি বিস্তৃত অধ্যয়ন ও মূল্যায়ন এবং তাঁর আদর্শের শিক্ষণীয় নীতিগুলোর প্রচার ও প্রসারে সচেতন নাগরিক মহলসহ বিদ্যান ও বিদ্যোৎসাহীদের এগিয়ে আসতে হবে। তাঁর নামে বড়ো বা ছোটো কোনও প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয়নি। তা করা আশু প্রয়োজন। তাছাড়া, জীবন ও কর্মের ওপর বার্ষিক একটি স্মারক বক্তৃতার আয়োজন তাঁর কর্মের মূল্যায়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। গুণিজনের প্রতি অবিচার ও উদাসীনতা কখনও সমাজের মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। শুভবুদ্ধির উদয় যত তাড়াতাড়ি হয়, ততই মঙ্গল।

তিনি ছিলেন সদা জ্যোতির্ময় এক ব্যতিক্রমী চরিত্রের মানুষ। বহু মানুষের আশা, ভরসা ও আশ্রয়ের নাম ছিল প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। তাঁর জীবনাবসানের সতেরো বছর পার হয়ে গেছে। যত দিন যাচ্ছে ততই তাঁর শূন্যতা ব্যাপকভাবে অনুভূত হচ্ছে। চারপাশে বিরাজ করছে অন্ধকার, কূপম-ুকতা গ্রাস করেছে সমাজকে এবং চিন্তাচেতনার দীনতা ও বৈকল্য আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। এমন পরিবেশে ত্রানকর্তা হতে পারতেন প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের মতো একজন বাতিঘরের। তাঁর খুব বেশি প্রয়োজন ছিল। মনের অজান্তেই উচ্চারিত হয় ‘তোমার আসন শূন্য আজি’। সহজ সরল জীবনের অধিকারী এই প-িত ব্যক্তির স্মৃতির প্রতি আবারও গভীর শ্রদ্ধা জানাই। নিজ কর্মগুণে ও স্বমহিমায় প্রজ্ঞাদীপ্ত মনীষা ব্যক্তি হিসেবে তিনি সকলের অন্তরে দৃঢ় এক অবস্থান নিয়ে বিরাজ করবেন। তাঁর আদর্শকে লালন করে এবং তার প্রচার ও প্রসার ঘটিয়েই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন সম্ভব।

তথ্যসূত্র :

১. রহমান, প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর, ‘রচনাবলি’, ১ম থেকে ৫ম খণ্ড, উৎস প্রকাশন, ঢাকা, ২০২১।
২. ফাত্তাহ, আবুল ফতেহ : ‘মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান’, ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট অ্যাফেয়ার্স আইডিয়া, সিলেট, প্রথম প্রকাশ ২০১০।
৩. মুক্তা, মুক্তাদীর আহমদ : ‘অধ্যাপক হাবিবুর রহমান এক জ্যোতির্ময় মানুষ’, দৈনিক মিরর, ২৮ জুলাই ২০২০।
৪. সামাদ, আব্দুস : ‘স্মরণ : প্রফেসর হাবিবুর রহমান’, দৈনিক প্রাপ্তিপ্রসঙ্গ’, ২৮ জুলাই ২০২০।
৫. উইকিপিডিয়া : ‘প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান’, উদ্ধার ২১ জুলাই ২০২৩।

* প্রবন্ধটি মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন ভাইস চ্যান্সেলর ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি কর্তৃক আয়োজিত স্মরণসভায় উপস্থাপিত। বটেশ্বর, সিলেট। ২৭ জুলাই ২০২৩।


মিহিরকান্তি চৌধুরী : ডেপুটি রেজিস্ট্রার, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি, সিলেট এবং লেখক, অনুুবাদক ও নির্বাহী প্রধান, টেগোর সেন্টার, সিলেট।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত