১৫ আগস্ট, ২০২৩ ০৩:৪৫
বাঙালি জাতির ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পাখি ডাকা ভোরে। বাংলাদেশের স্থপতি ও রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবারের সকল সদস্যকে সেদিন পৈশাচিক উন্মত্ততায় হত্যা করা হয়েছিল। ঘটনাক্রমে বঙ্গবন্ধুর দুই আত্মজা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।
ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের ঐতিহাসিক বাসভবনটিতে অবস্থানরত বঙ্গবন্ধুর পরিবারের যেসব সদস্য হত্যাকাণ্ডের শিকার হন, তাদের মধ্যে রয়েছেন- ১) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২) বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ৩) জ্যেষ্ঠপুত্র শেখ কামাল ৪) মেজ ছেলে শেখ জামাল ৫) কনিষ্ঠ পুত্র শিশু শেখ রাসেল ৬) বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই শেখ আবু নাসের ৭) বড় পুত্রবধূ সুলতানা কামাল খুকু ৮) মেজ পুত্রবধূ পারভীন জামাল রোজী ৯) গৃহকর্মী লক্ষ্মীর মা ১০) পোটকা ১১) কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা (নাম অজ্ঞাত) এবং ১২) বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তায় নিয়োজিত সেনা কর্মকর্তা কর্নেল জামিল আহমেদ। এছাড়াও ওই রাতে হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুর ভগ্নীপতি এবং তাঁর মন্ত্রীসভার সদস্য আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও বাকশালের অন্যতম সম্পাদক শেখ ফজলুল হক মণি এবং সন্তানসম্ভবা স্ত্রী বেগম আরজু মণি, সেরনিয়াবতের ছোট মেয়ে বেবি সেরনিয়াবাত, ছোট ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি শিশু সুকান্ত বাবু প্রমুখ। পরিকল্পিতভাবে প্রায় একই সময়ে পৃথক তিনটি বাসভবনে একযোগে হামলা চালিয়ে এই হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়।
১৯৯৮ সালের ৮ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মামলার রায়ের শেষদিকে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল লিখেন, “প্রাসঙ্গিকভাবে ইহা উল্লেখ না করিয়া পারা যায় না যে, এই মামলায় প্রাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ইহা প্রতীয়মান হয় যে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাগণ বিশেষ করিয়া যাহারা ঢাকায় অবস্থান করিতেছিলেন, তাহারা তাহাদের দায়িত্ব পালন করেন নাই, এমনকি পালনের কোন পদক্ষেপও গ্রহণ করেন নাই, যথেষ্ট সময় পাওয়া সত্ত্বেও । ইহা অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, বঙ্গবন্ধুর টেলিফোন আদেশ পাওয়ার পরও তাহার নিরাপত্তার জন্য কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় নাই। সাক্ষ্য প্রমাণে ইহা পরিষ্কার যে, মাত্র দুইটি রেজিমেন্টের খুবই অল্প সংখ্যক জুনিয়র সেনা অফিসার/সদস্য এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কেন এই কতিপয় সেনা সদস্যকে নিয়ন্ত্রণ /নিরস্ত্র করার চেষ্টা করে নাই তাহা বোধগম্য নয়। ইহা আমাদের জাতীয় ইতিহাসে সেনাবাহিনীর জন্য একটি চিরস্থায়ী কলঙ্ক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে’’।
খুনি কিছু বিপথগামী সেনা কর্মকর্তা হলেও বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় সাক্ষীদের সাক্ষ্যের লাইনে লাইনে ফুটে উঠেছে প্রাতিষ্ঠানিক সেই ব্যর্থতার কথা। সেই ব্যর্থতার বিষয়গুলো বিচার বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে, যাদের দেশের রাষ্ট্রপতি এবং তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা ছিল তারা কেন ব্যর্থ হয়েছেন অথবা ব্যর্থ হওয়ার ভান করেছেন। আসুন পর্যায়ক্রমে জেনে নেয়া যাক সে সময় সিনিয়র আর্মি অফিসারদের ভূমিকা ও দায়ের ইতিহাস।
প্রথমেই আমরা নজর দিব তৎকালীন সেনাপ্রধান শফিউল্লাহর ওপর। জানা যায়, ১৪ আগস্ট দুটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। এক: দুপুরে বঙ্গবন্ধু যেখানে বক্তৃতা দেবেন সে জায়গায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। গুজব ছিল যে, ১৫ আগস্ট জাসদ ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধুর আগমন উপলক্ষে প্রতিবাদ মিছিল করবে। গুজব ছিল, রাষ্ট্রপতিকে হত্যার চেষ্টাও হতে পারে। অনুমান জাসদই এই কাণ্ড ঘটিয়েছিল। ওই সময় এ ধরনের ঘটনা মোকাবিলা করার জন্য যথেষ্ট প্রশিক্ষিত পুলিশ ছিল না। একইদিন দুপুরে ফেনীতে ভারতীয় একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়। ফলে এসব ঘটনা মোকাবিলার দায়িত্ব বর্তায় সেনাবাহিনীর উপর। শফিউল্লাহ কুমিল্লা গ্যারিসনের কমান্ডারকে নির্দেশ দেন ভারতীয় পাইলটদের মৃতদেহ উদ্ধারে। আর কর্নেল জামিলকে দায়িত্ব দেয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নিরাপত্তা সমন্বয় করার। জামিলের সঙ্গে রউফও এ কাজে যোগ দেন। এ সমস্ত কিছু পর্যালোচনা ও সমন্বয়য় করতে করতে বেশ রাত হয়ে যায়। শফিউল্লাহ বেশ রাতে ঘুমাতে যান।
পরদিন অর্থাৎ ১৫ আগস্ট ভোর সোয়া পাঁচ বা সাড়ে পাঁচটার দিকে তার ব্যাটম্যান হাবিলদার হায়দার আলী তাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন। দরজা খুলে তিনি দেখেন মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের পরিচালক লে. কর্নেল সালাহউদ্দিন ইউনিফর্ম পরে স্টেনগান হাতে দাঁড়িয়ে। শফিউল্লাহ জানতে চান, এ রকম পোশাক পরে আসার হেতু কী? সালাহউদ্দিন সে প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে জানতে চান, তিনি কি আর্মড ও আর্টিলারি ইউনিটকে শহরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন? শফিউল্লাহ জানালেন, তিনি এ ধরনের কোনও নির্দেশ দেননি। সালাহউদ্দিন জানালেন, ওই দুটি ইউনিট শহরে মুভ করেছে এবং গণভবন, রেডিও স্টেশন প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা দখল করেছে। শুধু তাই নয়, কয়েকটি ট্যাঙ্কও ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির দিকে রওনা হয়েছে। ‘এ অবস্থায় আমার কী করার ছিল?’ শফিউল্লাহ প্রশ্ন করেছেন নিজেকে। দুটি পন্থা ছিল। এক যা ঘটছে রাষ্ট্রপতিকে তা অবহিত করা এবং দুই ঢাকা ব্রিগেড কমান্ডার যিনি ফোর্সের কমান্ডার তাকে নির্দেশ দেয়া যারা এগুলো করছে তাদের প্রতিহত করার’।
সালাহউদ্দিনকে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, শাফায়াত জামিল কি ঘটনা জানেন? সালাহউদ্দিন জবাব দিলেন, তা তিনি বলতে পারবেন না। কারণ খবর পেয়েই তিনি তার বাড়িতে ছুটে এসেছেন। তিনি সালাহউদ্দিনকে নির্দেশ দিলেন দ্রুত গিয়ে শাফায়াতকে যেন ১, ২ ও ৪ নম্বর বেঙ্গল রেজিমেন্টকে তাদের প্রতিহত করতে বলেন। এ ধরনের ঘটনা প্রতিহত করার জন্য ঢাকায় ওই তিনটি রেজিমেন্টকে মোতায়েন করা হয়েছিল। এ নির্দেশ দিয়ে তিনি দ্রুত লাল টেলিফোনে বঙ্গবন্ধুকে ফোন করলেন। রেড টেলিফোন এনগেজড। তখন সাধারণ টেলিফোনে ফোন করলেন। সেটিও এনগেজড। সময় বাঁচাবার জন্য স্ত্রীকে লাল টেলিফোনে রিং করে যেতে বললেন। তিনি চেষ্টা করতে লাগলেন অন্য টেলিফোনে শাফায়াতকে ধরার। তার টেলিফোনও এনগেজড। তখন তার বাড়ির এক্সচেঞ্জকে বললেন, যেভাবেই হোক শাফায়াতের সঙ্গে যোগাযোগ করার। অন্য টেলিফোনে তিনি অন্যান্য অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে লাগলেন।
এ প্রক্রিয়ায় তিনি যোগাযোগ করতে পারলেন কর্নেল জামিলের সঙ্গে। জামিল জানালেন, রাষ্ট্রপতি তাকে টেলিফোন করে বলেছেন জলদি তার বাসায় যেতে। কারণ তিনি বিপদ আশঙ্কা করছেন। শফিউল্লাহ জানালেন, সালাহউদ্দিনের কাছ থেকে তিনি ঘটনা জেনেছেন। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন, পারছেন না। জামিল যেহেতু যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতির বাসায় তিনি যেন রাষ্ট্রপতিকে জানান শাফায়াতকে মুভ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সুতরাং সম্ভব হলে রাষ্ট্রপতিকে যেন বাসা থেকে নিরাপদ কোনও জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। জামিল জানালেন, তিনি বঙ্গবন্ধুর বাসায় পোঁছে সে চেষ্টা করবেন। কর্নেল জামিলের সঙ্গে কথা শেষ করে তিনি শাফায়াতকে ধরার চেষ্টা করলেন। তাকে পেলেন। শফিউল্লাহ লিখেছেন তার গলার স্বর অদ্ভুত বা ঘুম ঘুম লাগছিল, হয়তোবা চিন্তা থেকে। কোনও সময় নষ্ট না করে তিনি জানতে চাইলেন, ঘটনা যা ঘটছে শাফায়াত কি তা জানেন? শাফায়াত জানালেন, তিনি জানেন না। শফিউল্লাহ তাকে আবারো সেই নির্দেশ দিলেন এবং মনে হলো শাফায়াত তা বুঝেছেন। শাফায়াত পরে বলেছেন, তিনি কোনও নির্দেশ পাননি।
লিখেছেন শফিউল্লাহ, ‘তবে এটুকু স্বীকার করেছেন ওই দিন সকালে তিনি আমার ফোন পেয়েছিলেন। আমি তাকে সে নির্দেশ না দিলে অত সকালে কী কারণে ফোন করেছিলাম? তাকে কি নির্দেশ দেয়ার জন্য ফোন করিনি?’ ঢাকা ব্রিগেডকে এই নির্দেশ দেয়ার পর বিমানবাহিনী প্রধান এ কে খন্দকার ও নৌবাহিনী প্রধান এম এইচ খানকে ফোন করে ঘটনা জানান। তারাও কিছু জানেন না। তারপর জিয়াকে ফোন করেন, শফিউল্লাহ লিখেছেন, ‘জিয়ার গলার স্বর শুনে মনে হলো সেও প্রথমবার খবর শুনেছে। জিয়া শুধু বললেন, ‘ইজ ইট সো!’ এরপর খালেদ মোশাররফকে ফোন করলেন। তিনিও মনে হলো, খবরটি শফিউল্লাহর কাছ থেকেই জানলেন। এরপর রউফের বাসায়, সেখানে কেউ ফোন ধরলেন না। শফিউল্লাহ যখন এদের সঙ্গে কথা বলছেন, তখন তার স্ত্রী প্রাণপণে লাল টেলিফোনে বঙ্গবন্ধুকে ধরার চেষ্টা করছেন। এবার শফিউল্লাহ চেষ্টা করতে লাগলেন। খুব সম্ভব ছয়টা বাজার কয়েক মিনিট আগে তিনি লাইন পেলেন। বঙ্গবন্ধুই ফোন ধরেছেন।
শফিউল্লাহর গলা শুনে উত্তেজিত ও ক্রুদ্ধ স্বরে বললেন, ‘শফিউল্লাহ তোমার ফোর্স আমার বাড়ি অ্যাটাক করছে-কামালরে বোধহয় মাইরা ফেলছে-তুমি জলদি ফোর্স পাঠাও। শফিউল্লাহ লিখেছেন, ‘আমি শুধু বলতে পারলাম, ‘আমি কিছু করার চেষ্টা করছি, আপনি কি বাসা থেকে বেরুতে পারবেন?’ রাষ্ট্রপতি কোনও জবাব দিলেন না। আমি হ্যালো হ্যালো বলতে লাগলাম। মনে হলো, তার সামনে কেউ আছে যে জন্য তিনি জবাব দিতে পারছেন না। আমার আরও মনে হলো, তিনি ফোনটি টেবিলে নামিয়ে রেখেছেন কারণ এর ৩০ কি ৪০ সেকেন্ড পর টেলিফোনে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গুলির শব্দ পেলাম। এরপর প্রায় এক মিনিটের মধ্যে টেলিফোন লাইন বিচ্ছিন্ন হইয়ে গেল। শফিউল্লাহ ভেবেছেন কেন বঙ্গবন্ধু তাকে সরাসরি ফোন করলেন না। তিনি অন্যদের সঙ্গে নিশ্চয় যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন। কারণ তার টেলিফোন সব সময় ব্যস্ত ছিল বা তিনি চেষ্টা করছিলেন কিন্তু শফিউল্লাহর ফোন ব্যস্ত ছিল বা এমনও হতে পারে, তার বাসায় সৈন্যসামন্ত দেখে তিনি আস্থা হারিয়ে ফেলেছিলেন শফিউল্লাহর ওপর। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলার পর শফিউল্লাহ নিশ্চিত হতে চাইলেন শাফায়াত সম্পর্কে। শাফায়াত কি সৈন্য পাঠিয়েছে? তার টেলিফোন ব্যস্ত। অপারেটরকে বললেন, তিনি অন্য লাইনে কথা বলতে থাকলে তা কেটে যেন তার লাইন দেয়া হয়। কিন্তু তার টেলিফোন এনগেজড।
শফিউল্লাহর মনে হলো, হয় সেটের টেলিফোন ঠিক করে রাখা হয়নি অথবা বিদ্রোহী সৈন্যরা তাকে নিশ্চল করে ফেলেছে। ‘কিন্তু পরে দেখা গেল, আমার দুটি ধারণাই ভুল। লিখেছেন শফিউল্লাহ, ‘তার পরবর্তী কার্যকলাপে প্রমাণ করেছে তিনি ঠিক পথে চলেননি। তিনি সৈন্য চলাচলের নির্দেশ না দিয়ে চুপ করে ছিলেন। তিনি আমার নির্দেশ শোনেননি’। পরে শফিউল্লাহ জেনেছেন, বঙ্গবন্ধু সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মনসুর আলী, ব্রিগেডিয়ার মাশহুরুল হক, কর্নেল জামিল এবং আরও কয়েকজনকে ফোন করেছিলেন। শফিউল্লাহ আফসোস করে লিখেছেন, তার সঙ্গে খানিকটা আগে যোগাযোগ করলে হয়তো তিনি খানিকটা সময় পেতেন কিছু করার। কারণ তিনি যখন খবর পেয়েছেন তখন হত্যাকারীরা ৩২ নম্বরের পথে। সৈন্য দেখেই বঙ্গবন্ধু তার ওপর আস্থা হারিয়েছিলেন। কিন্তু তার ফোন পাওয়ার পর হয়তো তিনি বুঝেছিলেন শফিউল্লাহ এর সঙ্গে জড়িত নয়। লিখেছেন তিনি, ‘আগে পরে আমাদের সবাইকে মরতে হবে। আমার এইটেই সান্ত্বনা যে, বঙ্গবন্ধু মৃত্যুর আগে অন্তত এটুকু জেনে গেলেন যে, শফিউল্লাহ তার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেন।
দেখা যাচ্ছে শফিউল্লাহ তার ব্যর্থতার দায়ভার শাফায়াত জামিলের উপর চাপিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন শাফায়াতকে নির্দেশ দেয়ার যা শাফায়াত পালন করেনি যদিও শাফায়াত বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এখানে শফিউল্লাহর যে বড় ভুল তা হলো, তিনি যখন দেখলেন যে কোনও কারণেই হোক শাফায়াত জামিল তার সৈন্য মুভ করছে না, তখন তিনি মাত্র পাঁচশ গজ দূরে অবস্থিত শাফায়াতের হেড কোয়ার্টারে একে ওকে না পাঠিয়ে নিজেই ছুটে গিয়ে শাফায়াতের সৈন্য মুভ করাবার ব্যবস্থা নিতে পারতেন। এখানে তিনি চরম মুহূর্তে টেলিফোন ও কথাবার্তায় অযথা সময় নষ্ট করেছেন। কিন্তু একটি সৈন্যও ক্যান্টনমেন্ট থেকে মুভ করাতে পারলেন না। এখানে সেনাপ্রধান দ্রুততার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। অবশ্য অন্যদের মতো তাকে বিশ্বাসঘাতক, কুচক্রী বা ষড়যন্ত্রী বলা যায় না। কারণ খুনি ফারুক-রশীদের সাথে অনেকের পূর্ব যোগাযোগের তথ্য থাকলেও শফিউল্লাহর সাথে ছিল না। ক্যুর ব্যাপারে তিনি আগাম কিছু জানতেন না। তিনি দুটো ভুল করেছেন এক. অহেতুক এখানে সেখানে কল করে সময়ের অপচয় আর দুই. খুনি ডালিম-রশীদের চাপে পড়ে অবৈধ, অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক খুনি মোশতাকের সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছেন ।
এবার নজর দেয়া যাক, ডেপুটি চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল জিয়ার কর্মকাণ্ডের ওপর। ১৫ আগস্ট সকালে খুনি রশীদের কাছে বঙ্গবন্ধুর নিহত হবার খবর পেয়ে শাফায়াত জামিল ছুটে যান জিয়ার বাসায়। শাফায়াত লিখেছেন, ‘কিছুক্ষণ দরজা ধাক্কাধাক্কির পর দরজা খুললেন ডেপুটি চিফ স্বয়ং। অল্প আগে ঘুম থেকে ওঠা চেহারা। স্লিপিং ড্রেসের পাজামা আর স্যান্ডো গেঞ্জি গায়ে। একদিকের গালে শেভিং ক্রিম লাগানো, আরেক দিক পরিষ্কার। এত সকালে আমাকে দেখে বিস্ময় আর প্রশ্ন মেশানো দৃষ্টি তার চোখে। ভয়ংকর খবরটা দিলাম তাকে। রশীদের আগমন আর চিফের সঙ্গে আমার কথোপকথনের কথাও জানালাম। মনে হলো জিয়া একটু হতচকিত হয়ে গেলেন। তবে বিচলিত হলেন না তিনি। নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, "President is dead, so what? Vice President is there. You should uphold the sanctity of the constitution. Get your troops ready immediately." বঙ্গবন্ধু হত্যার কথা শুনে এই ছিল জিয়ার প্রতিক্রিয়া!
বস্তুত জিয়া শফিউল্লাহ বা শাফায়াতের সাথে অবাক হবার ভান করেছেন। ক্যুর আগাম সংবাদ তার কাছে ছিল। খুনি ফারুক-রশীদের ভাষ্য অনুসারে তারা আগেই জিয়াকে তাদের ক্যুর পরিকল্পনার কথা জানান। ২০ মার্চ, ১৯৭৫ জিয়ার সাথে সরকার পরিবর্তন নিয়ে পরামর্শ করতে গেলে জিয়া খুনি ফারুককে বলে দেন ‘সিনিয়র হিসেবে এ ধরনের কিছুর মধ্যে তিনি জড়াতে চান না, জুনিয়ররা কিছু করতে চাইলে নিজেদের করা উচিত’। প্রশ্ন হলো জুনিয়রদের কাছে সরকারের উৎখাতে ক্যুর পরিকল্পনা কথা শুনে তিনি তাদের বিরুদ্ধে কি কোনও ব্যবস্থা নিয়েছিলেন কিংবা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করেছিলেন? এই চেপে যাওয়ার ব্যাপারটা কিন্তু সেনা আইনে গর্হিত অপরাধ। নাকি তিনি নিজেও ষড়যন্ত্রীদের একজন? যথাযথ তদন্তের মাধ্যমেই সত্য উন্মোচিত হবে একদিন। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রধান বেনিফিশিয়ারি যে জিয়া সেটা বলা বাহুল্য। ক্যুর ৯দিনের মাথায় তিনি সেনাপ্রধান হন আর ৭ নভেম্বর জাসদের কর্নেল তাহেরের কথিত বিপ্লবে তিনি ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে যান।
এবার আসা যাক চিফ অব জেনারেল স্টাফ খালেদের বেলায়। ‘৭৫ এর মার্চে মহড়ার জন্য ৬টি ট্যাঙ্ক নিয়ে চিটাগাং এ যাবার আগে ফারুক একটা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ফেলার পরিকল্পনা করেছিলো, তা জানিয়েছিল মেজর নাসিরকে। মেজর নাসির জানিয়েছিলেন সিজিএস ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফকে। খালেদ এটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর বদলে ধামাচাপা দিয়েছিলেন। মনে রাখতে হবে খালেদ মোশাররফ তখন সিজিএস, এর পরবর্তী আর্মি চিফ হবার ক্যান্ডিডেট হিসেবে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন। তিনি তার অধীনস্থ একজন কর্মকর্তার এমন চরম শাস্তিযোগ্য বিদ্রোহী আচরণকে রিপোর্ট করা তো দূরের কথা, নিজেও কোন ব্যবস্থা নেননি, কিংবা তাকে শান্ত করতে কোন ব্যবস্থা নেননি, ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ তার প্রমাণ। সেদিন ফারুককে বিধি মোতাবেক শাস্তির আওতায় নিয়ে আসলে কি ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটার সুযোগ ৫০ ভাগ কমে যেত না? সুতরাং ১৫ আগস্টের ঘটনা সম্বন্ধে খালেদ মোশাররফ আগে থেকেই জানতেন, হয়তো জানতেন না কবে ঘটানো হবে। উপরন্তু ১৫ আগস্ট দুপুরে ফারুকের জন্য চিফ শফিউল্লাহর নির্দেশ ছাড়াই ট্যাংকের গোলাবারুদ সরবরাহের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে ফারুকের সাথে খালেদের সংশ্লিষ্টতা কিংবা ফারুকের কাজের প্রতি খালেদের সমর্থন দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়।
এ প্রসঙ্গে শফিউল্লাহ লিখেছেন, "When Brig. Khaled was informed that the rebel troops of the tank regiment did not have main gun ammunition in their tanks, that was the time he should have acted and hold them. He instead of taking any action to hold them, issued ammunition to them without even consulting me. Thereby Brig. Khaled earned their goodwill. Am I wrong to hold this view? These troops were still rebel soldiers and how could CGS issue ammunition to the rebel troops? Therefore, would I be wrong to say that Brig. Khaled also wanted to be on their side."
খালেদের সংশ্লিষ্টতার আরেকটি প্রমাণ পাওয়া যায় ১৫ আগস্ট সকালে তার কর্মতৎপরতায়। শাফায়াত জামিলের ৪৬ ব্রিগেড গিয়ে এর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন খালেদ, কিন্তু একজন সৈন্যও ফারুক-রশীদের বিরুদ্ধে নড়েনি। তখন ফারুক-রশীদের বিরুদ্ধে ৪৬ ব্রিগেডই ছিলো একমাত্র ভরসা! খালেদের এই পদক্ষেপ ৪৬ ব্রিগেডকে ফারুক-রশীদের ইউনিটের বিরুদ্ধে ব্যবহারের যে কোন চেষ্টা নস্যাৎ করে ক্যু-পরবর্তী পরিস্থিতি তাদের অনুকূলে রাখার সুপরিকল্পিত কৌশল বলে সহজেই ধরে নেওয়া যায়। যদিও সেনাপ্রধানের নির্দেশে ফোর্স মুভ করানোর জন্য খালেদ ৪৬ ব্রিগেডে গিয়ে নাকি আটকে গিয়েছিলেন, তাকে নাকি ওরা (শাফায়াত) যেতেও দিচ্ছে না কিংবা কিছু করতেও দিচ্ছে না! ১৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য রক্ষীবাহিনীকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলাও গুরুত্বপূর্ণ এটি ধাপ ছিলো, ফারুক যার ৫০ ভাগ কাজ এগিয়ে নেয় ভোরেই গোলাবিহীন ট্যাংকের ভয় দেখিয়ে, আর বাকিটা করেন খালেদ মোশাররফ রক্ষী বাহিনীর দুজন লিডার আনোয়ার উল আলম ও সারোয়ার হোসেনকে একটা বাক্য দিয়ে, "I know you are patriots, but we had to do it because we do not want this country to be a kingdom! " এমনকি রক্ষী বাহিনীকে মোশতাক সরকারের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করার জন্য জোরাজুরিও করেন খালেদ মোশাররফ।
কর্নেল শাফায়েত জামিলের ব্যাপারে ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সাথে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ হিসেবে দুটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়। প্রথমত: ১৫ আগস্ট ভোরে সেনাপ্রধান শফিউল্লাহ ফোন করেন শাফায়াত জামিলকে তার ৪৬ ব্রিগেড নিয়ে বিদ্রোহীদের প্রতিহত করার জন্য। যদিও জামিলের মতে শফিউল্লাহ বিড়বিড় করেছেন, স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। শফিউল্লাহ পরবর্তীতে জামিলকে ফোন করে পাননি, কারণ জামিল নাকি টেলিফোনের রিসিভার উঠিয়ে রেখেছিলেন! দ্বিতীয়ত: ১৫ আগস্ট ভোর রাতে শাফায়াত জামিলের বাসস্থান এর পেছনের রাস্তা দিয়েই ঘড় ঘড় শব্দ তুলে ফারুকের ট্যাংক বহর শহরের দিকে যেতে থাকে। এত শব্দেও শাফায়াত জামিলের নিদ্রাভঙ্গ হয়নি কিংবা প্রশ্ন জাগেনি। যদিও শাফায়াত জামিল বলতেই পারেন, প্রথম বেঙ্গল ল্যান্সার ও টু ফিল্ড আর্টিলারি একত্রে মহড়া করবে এটা তিনি জানতেন। তাই এ নিয়ে প্রশ্ন জাগেনি। তারপরও ১৫ আগস্ট ভোরে সেনাপ্রধানের ফোন পাওয়ার পরও শাফায়াত জামিলের নিষ্ক্রিয়তা ফারুক-রশীদের পরিকল্পনা সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে সহায়তা করেছে এই নিয়ে সন্দেহ নেই। খালেদ সেনাপ্রধানের কাছে অভিযোগও করেছিলেন, ৪৬ ব্রিগেডের কেউ তাকে যেতে দিচ্ছে না, কিছু করতেও দিচ্ছে না।
আর কর্নেল হামিদের স্মৃতিকথায় জানা যায়, ফারুক যে কিছু একটা করবে এটা নিয়ে সেনানিবাসে আগে থেকেই কানাঘুষা ছিলো। জামিলের নিষ্ক্রিয়তার পেছনে এমন পূর্বধারণার কোন প্রভাব ছিলো কি? কর্নেল হামিদ তার বইয়ে বর্ণনা করেছেন ১৫ আগস্ট সারাদিন জামিল খোশমেজাজে ছিলেন এবং কর্নেল হামিদকে বলেন, “দেখলেন স্যার, ফ্রিডম ফাইটার্স হ্যাভ ডান ইট বিফোর, এন্ড দে হ্যাভ ডান ইট এগেইন!” উল্লেখ্য, শাফায়াতের অধীনে ছিল প্রায় ৪ হাজার সৈন্য। তর্কের খাতিরে যদি ধরেই নেই যে, সেনাপ্রধান তাকে কোনও নির্দেশ দেননি তবুও প্রশ্ন জাগে রাষ্ট্রপতির ভবন আক্রান্ত হয়েছে এই খবর পাওয়ার পর ইন্ডিপেনডেন্ট ব্রিগেড কমান্ডার শাফায়াতের কি বিপদগ্রস্ত রাষ্ট্রপতির সাহায্যার্থে তৎক্ষণাৎ সৈন্য মুভ করা উচিত ছিল না? সেনাপ্রধান কি তাকে একশনে যেতে নিষেধ করেছিলেন?
সিনিয়র অফিসারদের মধ্যে বিদায়ী ডিএফআই (বর্তমানে ডিজিএফআই) প্রধান ব্রিগেডিয়ার আব্দুর রউফের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ কয়েকটি কারণে। এক, ১৫ আগস্ট রাতে ফারুক-রশিদের সম্ভাব্য অভ্যুত্থানের খবর পেয়েও তড়িৎ কোন ব্যবস্থা না নিয়ে নিজের প্রাণ বাচাতে কিংবা দায়িত্ব এড়াতে পরিবারসহ বাসার পেছনে লুকিয়ে ছিলেন, এবং ভোর ৬.৩০টায় লুঙ্গী পরিহিত অবস্থায় সেনা ভবনে হাজির হন। তিনি মাঝরাতেই তৎক্ষণাৎ আর্মি চিফ শফিউল্লাহকে জানালে হয়তো কিছু হতে পারতো। দুই, নতুন গোয়েন্দা প্রধান হিসেবে প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত কর্নেল জামিলউদ্দিন আহমেদ নিয়োগ পেলেও অসন্তুষ্ট রউফ দায়িত্ব হস্তান্তরে গড়িমসি করছিলেন, শেষে ১৫ আগস্ট দায়িত্ব হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত হয়। তিন, এত বড় একটা ঘটনার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির কোন খবরই কি ডিএফআই পায়নি? নাকি পেয়েও চুপ করে ছিলেন? যেখানে ফারুকের আচরণ প্রশ্নবিদ্ধ ছিলো, সেখানে তার কর্মকাণ্ড সম্বন্ধে খোজ রাখা তো ডিএফআই এর দায়িত্ব ছিলো। বস্তুত: উপরোক্ত ঘটনাগুলো বিচার করলে ১৫ আগস্টের ঘটনায় ব্রিগেডিয়ার রউফের সংশ্লিষ্টতার যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়।
ভারতে থাকার কারণে কর্নেল মঞ্জুর ও এরশাদের সংশ্লিষ্টতার কোন মোটিফ বা ক্লু পাওয়া যায় না। তবে দুজনেই ১৫ আগস্টের পর ভারত থেকে দেশে ফিরেছিলেন, আবার ধমক খেয়ে ফিরেও গিয়েছিলেন। তবে ফারুক-রশীদের সাথে এরশাদের সমঝোতা থাকার সম্ভাবনা প্রবল, কারণ ’৭৫ এর ১৮ আগস্ট দেশে ফিরে এরশাদ নিষেধ সত্ত্বেও গণভবনে গিয়ে ফারুক-রশীদের সাথে দেখা করেন। জিয়ার আমলে ফারুক-রশীদসহ বাকিদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকুরি দেয়ার সুপারিশেও এরশাদ ছিলেন, আবার তার শাসনামলেই ফারুক-রশীদ বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ পায়।
১৫ আগস্টের ঘটনায় আর কোন সিনিয়র অফিসারদের সংশ্লিষ্টতার ক্লু না পাওয়া গেলেও দুজন সিনিয়র সেনা অফিসার স্পষ্ট ভাবেই এই ঘটনার বিরুদ্ধে ছিলেন, দুজনের কেউই মুক্তিযোদ্ধা নন বরং পাকিস্তান ফেরত। একজন তৎকালীন কর্নেল জামিলউদ্দিন আহমেদ, যিনি ছিলেন প্রেসিডেন্টের বিদায়ী মিলিটারি সেক্রেটারি, সেই সকালে প্রেসিডেন্টের ডাকে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিহত হন। আরেকজন ব্রিগেডিয়ার কাজী গোলাম দস্তগীর, ১৫ আগস্ট সকালে ডালিমের ঘোষণা রেডিওর চিটাগাং স্টেশনে এ প্রচার বন্ধ করার আদেশ দিয়েছিলেন। তবে তাদের এই আচরণ রাজনৈতিক বিশ্বাসপ্রসূত ছিলো না, বরং সম্পূর্ণই পেশাগত দায়িত্বশীলতার অংশ, যারা রাজনীতিতে জড়িত হবার চেয়ে নিজের পেশাগত দায়িত্বকে বেশি গুরুত্ব দিতেন। এটা আজও রহস্য, আগে থেকেই সেনানিবাসে চাউর হওয়া সম্ভাব্য ক্যু’র শিখন্ডি কর্নেল ফারুককে কেন গোয়েন্দা পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা হয়নি, নাকি তাকে উলটো প্রটেকশন দেয়া হচ্ছিলো? বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর জন্য গোয়েন্দা ব্যর্থতা দায়ী। এমনকি ক্যান্টনমেন্টে সেনা গোয়েন্দা সংস্থাও সামান্য তৎপর থাকলে শুরুতেই এই অভিযান নস্যাৎ করে দেয়া যেতো।
এই আলোচনার ইতি টানছি সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে মেজর জেনারেল খলিলের মন্তব্য দিয়ে: ‘একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর স্টেনগান সজ্জিত হয়ে বিনা বাধায় সেনা সদর দপ্তরে প্রবেশ করে এবং সেনাপ্রধানকে ভয় দেখিয়ে হোক, বন্দি করে হোক, যা যা করতে চায়, তা সবই বিনা বাধায় করাতে পারে এবং বাকি দুই বাহিনীর প্রধানেরাও ওই এক মেজরের দ্বারা বন্দি হয়ে প্রায় ছয় মাইল দূরে বেতার ভবনে যান এবং তাদের যা আদেশ করা হয় তাই পালন করেন, সে বাহিনী বা বাহিনীত্রয়কে ‘প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, সুসংগঠিত, সুশৃঙ্খল ও স্বীয় দেশের প্রতিরক্ষা নিশ্চিতকারী সশস্ত্র বাহিনী তো নয়ই, কোনও বাহিনীই বলা ঠিক হবে না। এই বাহিনীর একমাত্র উপযুক্ত নাম শৃঙ্খলাবিহীন জনতা’। সেদিন বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর অবস্থা তাই ছিল’।
রেফারেন্স:
আপনার মন্তব্য