আনহার মিয়া

০২ নভেম্বর, ২০২৩ ২০:০৮

আওয়ামী লীগ বিএনপির পথে হাঁটেনি

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেওয়া হয়নি। বঙ্গবন্ধুকে নিষিদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের যাতে বিচার করা না যায়, প্রথমে খন্দকার মোস্তাক ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে। সামরিকজান্তা মেজর জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে সেই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ বন্ধ করে দেন। অথচ আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে বিএনপির পথে হাঁটেনি। বিএনপিকে স্বাভাবিক রাজনীতি করতে দেওয়া হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ সামরিকজান্তা জিয়ার অধীনে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে সান্ধ্য আইন মাথায় নিয়ে। আওয়ামী লীগ জানতো ১৯৭৭ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী হতে দেওয়া হবে না, তারপরেও দলের অস্তিত্বের জন্য নির্বাচনে অংশ নিয়েছে এবং সেই নির্বাচন কেমন হয়েছিল তা দেশ বিদেশের সবাই দেখেছে। আওয়ামী লীগ আরেক সামরিকজান্তা জেনারেল এরশাদের অধীনেও নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।

আওয়ামী লীগ জানতো এসব নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জয়ী হতে দেওয়া হবে না, তারপরেও অংশ নিয়েছে। কারণ, এই সমস্ত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করেছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠিত করা এবং আওয়ামী লীগকে জাগ্রত রাখার জন্য।

বিএনপির জ্বালাও-পুড়াও, মানুষ হত্যা, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা, সংসদ সদস্য শাহ এ এম এস কিবরিয়া, আহসান উল্লাহ মাস্টার, মমতাজ উদ্দিন এবং মঞ্জুরুল ইমামসহ অসংখ্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হত্যা, একইদিনে সারাদেশের ৫৬০ জায়গায় বোমা হামলা, আদালতে বোমা হামলা করে বিচারক হত্যা, সিলেটে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর গ্রেনেড হামলা, সিলেটের তৎকালীন মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে হত্যার লক্ষ্যে গ্রেনেড হামলা, দিরাইয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ওপর বোমা হামলা, সিলেটে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হককে হত্যার লক্ষ্যে তার বাসায় বোমা হামলা, শেখ হাসিনাকে হত্যার লক্ষ্যে বারবার হামলা এবং সর্বোপরি জঙ্গিদের মদদ ও পৃষ্ঠপোষকতা, মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তিদের পৃষ্ঠপোষকতা, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পৃষ্ঠপোষকতা এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জামায়াত-বিএনপির জোট সরকারের শাসনামলে দেশকে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য পরিণত করার জন্য বিএনপি জনগণ থেকে গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। জনগণ সেই যে তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, আর তাদের দিকে ফিরে তাকায়নি।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলেও তারা জনগণের পাশে থাকেনি। বরং তারা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য শতশত মানুষকে হত্যা করেছে পেট্রোল বোমা দিয়ে, বাসে আগুন দিয়ে। আন্দোলনের নামে লাগাতার হরতাল এবং অবরোধের নামে রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি করেছে, রাষ্ট্রের সম্পদ নষ্ট করেছে আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে। তাদের আগুন সন্ত্রাসে জ্বলে-পুড়ে অসংখ্য মানুষ মারা গিয়েছে, যারা আগুনে দগ্ধ হয়েছে তারা এখনো মানবেতর জীবনযাপন করছে।

এসব অপকর্ম, দুর্নীতি, লুটপাট, অপরাজনীতি, খুন হত্যার কারণেই বিএনপি বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে গণবিচ্ছিন্ন হয়েছে।

বিএনপি আবার রাজনীতি এবং জনগণের সাথে সম্পৃক্ত হতে হলে নির্বাচনে অংশ নেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। কারণ, একমাত্র নির্বাচনের মধ্য দিয়েই জনগণের কাছাকাছি যাওয়া যায়। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার উপলব্ধি ঘটুক সেই প্রত্যাশা করছি।

  • আনহার মিয়া: সাধারণ সম্পাদক, বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও চেয়ারম্যান ২নং বোয়ালজুর ইউনিয়ন পরিষদ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত