ওমর ফারুক লুক্স

২১ মার্চ, ২০১৫ ০৪:১৮

পিতার কাঁধে পুত্রের লাশ: উত্তর দেবেন কী জনাব ফারসীম?

২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে ফেরার পথে সন্ত্রাসীদের চাপাতির আঘাতে খুন হন লেখক, গবেষক, ব্লগার ড. অভিজিৎ রায়। হত্যাকাণ্ডের ২৩ দিন পরেও মামলার কোন কুলকিনারা হয়নি। অভিজিৎ রায়ের বাবা শিক্ষাবিদ অজয় রায় এক সাক্ষাৎকার ও বক্তৃতায় হত্যাকাণ্ডের দিন অনুষ্ঠিত এক সভা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। এ নিয়ে সরগরম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্র!

সন্তানের মৃতদেহ দেখতে একজন বাবার কাছে কেমন লাগতে পারে, তা কি আপনি-আমি অনুভব করতে পারবো? যে সন্তানকে পরম মমতায় কোলে পিঠে করে মানুষ করেছেন পিতা, প্রবল আদর যত্ন করে লালন-পালন করেছেন, সেই সন্তানের মরা মুখ যখন একজন পিতাকে দেখতে হয়, সেটা কতটা বেদনার হতে পারে, তা আপনি-আমি আন্দাজও করতে পারবো না।

তার উপর সন্তানের মৃত্যু যদি স্বাভাবিক না হয়ে, মৃত্যু ঘটে আততায়ীর হাতে, প্রকাশ্য জনপদে, কোপাতে কোপাতে মাথা থেতলে দেয়া হয়, করোটি ভেঙে ঘিলু পর্যন্ত বেরিয়ে পড়ে রাজপথে, এমন দৃশ্য দেখা একজন বাবার পক্ষে কি সহ্য করা সম্ভব? এই বেদনা আপনি-আমি যতোই হা-হুতাশ করি না কেন, সম্পূর্ণভাবে অনুভব করতে পারবো না কখনো এটাই সত্যি।

বলছি অধ্যাপক অজয় রায়ের কথা। আমাদের দুর্ভাগ্য আমাদের একজন অত্যন্ত প্রিয় শিক্ষক, অভিভাবক, আজকে যার জীবনের শেষ সময়ে এসে দুদণ্ড বিশ্রামে থাকার কথা ছিল, বয়সের ভারে ন্যুজ অসুস্থ শরীরের যত্ন পাবার দরকার ছিল, সেই অজয় স্যারকে আজ সকাল-বিকাল দৌড়াতে হচ্ছে পুত্রহত্যার বিচার কামনায়।

হত্যাকাণ্ডের তদন্তে যদি কোনো দৃশ্যমান উন্নতি দেখতে পেতাম তবে হয়তো আমাদের নিজের মনকে সান্ত্বনা দেয়া যেতো। অভিজিৎ রায়ের সন্দেহভাজন কোনো অপরাধী যদি গ্রেফতার করা হতো, অথবা তদন্তের স্বার্থে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেয়া হতো পুলিশ কাস্টডিতে, তাহলেও কিন্তু আমরা বিচার-প্রত্যাশারীরা কিছুটা সন্তুষ্টি পেতাম।

যাক, হত্যাকাণ্ডের তদন্ত তো হচ্ছে। অপরাধী একে একে সাব্যস্ত হচ্ছে। কিন্তু আমাদের আশায় গুড়েবালি! আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম? যে বাঙলাদেশ আজ একটা মৃত্যুকূপ! প্রিয় সন্তানের রক্তাক্ত মুখমণ্ডল পিতাকে দেখতে হলো? পুত্রের মৃত্যুশোকে কাতর একজন পিতার আর্তনাদে আজ ভারী হয়ে উঠেছে চারপাশ।

অধ্যাপক অজয় রায় পুত্রের হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই বিচার দাবি করে আসছেন। তিনি কয়েক দিন ধরেই সন্দেহভাজনদের নাম বলে আসছেন। আজকে দেখি নাগরিক সভায় অত্যন্ত স্পষ্ট করে কয়েক জনের নাম বলেছেন, যাদেরকে তিনি সন্দেহ করছেন, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাদের কোনো না কোনোভাবে সম্পৃক্ততা নিয়ে।

আমরা দেখতে চাই, আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন কি পদক্ষেপ নেয়। বুয়েটের শিক্ষক ফারসীম মান্নানের নাম এসেছে সন্দেহভাজনের তালিকায়। তাকে ঘটনার শুরু থেকেই সন্দেহের খাতায় অনেকেই রাখলেও কেউ প্রকাশ্যে বলতে চাননি। অধ্যাপক অজয় রায় সাহস করে প্রকাশ্যে তার নাম বলেছেন।

আমরা জানতে চাই ওই ব্যক্তির খুঁটির জোর কোথায়? যে ব্যক্তি অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের কিয়ৎপরিমাণ আগেও অভিজিৎ রায়ের সঙ্গে ছিলেন, সেই ব্যক্তি হয়তোবা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রকাশ্যে জড়িত নন, তিনি যে ওই হত্যাকাণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ সোর্স, এবং হত্যাকাণ্ডের ক্লু উদ্ঘাটনে সহায়ক হতে পারেন- এটা আমরা অস্বীকার করি কিভাবে? অথচ জনাব ফারসীম দেখলাম প্রায় ২০দিন ধরে ঘাপটি মেরেছিলেন অন্ধকারে। নিজেকে সামনে আনতে পারেননি।

অনলাইনের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রবল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে সক্ষম হওয়ায় তিনি অবশেষে মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছেন। মূলত কিছু সাফাই বাক্য দিয়েছেন। অধ্যাপক অজয় স্যারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন- এ ছবিটাও পর্যন্ত শেয়ার করেছেন ফেসবুকে। কিন্তু কেন ঘটনার ঘটার সঙ্গে সঙ্গে অন্তর্ধানে চলে গেলেন, তার কোনো সদুত্তর আমরা পেলাম না।

ধরা যাক, আমরা যদি অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের পর চুপ থাকতাম, ফারসীমের বিষয়টা জেনেও না জানার ভান করতাম, কোনো উচ্চবাচ্য করতাম না, তবে কি আপনার মনে হয়, জনাব ফারসীম আগ বাড়িয়ে কখনো কিছু বলতেন? ওই দিনের কার্যাবলীতে তার উপস্থিতির কথা তিনি কখনো জানান দিতেন? কি মনে হয় আপনাদের? তিনি যে অন্তর্ধানে ছিলেন, সেখানেই থাকতেন আরও কিছুকাল। পুরো ঘটনাই বেমালুম চেপে যেতেন। তার রহস্যপূর্ণ আচরণই আজ তাকে সন্দেহের খাতায় নাম সংযুক্ত করে দিয়েছে।

এখন আমরা দেখতে চাই, বাদী পক্ষের সরাসরি নাম প্রকাশের পরও ফারসীম কেমন করে কতদিন দূরে দূরে থাকেন। তাঁর খুঁটির জোর সম্পর্কে আমরা জানতে চাই।

গত দুই দিনে ফারসীম একটা নোট আর স্ট্যাটাস প্রসব করেছেন তার টাইমলাইন থেকে। সেখানে কয়েকটি বিষয়ে আমাদের কাছে বিভ্রান্তিকর মনে হয়েছে। যেমন ফারসীম মান্নান, অজয় স্যারের কাছে বলেছেন এবং তার সাম্প্রতিক নোটেও বলেছেন, ২৬ ফেব্রুয়ারী ঘটনার পর তার মোবাইল নাকি একদিন মাত্র বন্ধ ছিল।

কিন্তু আমাদের সূত্র মতে, আসলে বেশ কয়েকদিন তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। অজয় স্যার, বিডি নিউজ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভিসহ একাধিক ব্যক্তি যারা ফারসীমের বিজ্ঞান লেখক আড্ডার বিষয়ে অবগত হয়েছিলেন অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের পর, তাদের নিজেদের মত করে তার সাথে যোগাযোগের চেস্টা করে অন্তত ৫-৭ দিন তার মোবাইল বন্ধ পেয়েছেন। তাহলে জনাব ফারসীমের এই মিথ্যা বলার কারন কি?

জিরো টু ইনফিনিটির সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেছেন,- তিনি নাকি জনাব ফারসীমের অনুরোধে জিরো টু ইনফিনিটিতে শোক বার্তা প্রকাশ করেন নি। এদিকে ফারসীম বলছেন তিনি ওই পত্রিকার সঙ্গে একদমই জড়িত নন এখন আর।

যদি তিনি পত্রিকার সঙ্গে একদমই জড়িত না থাকেন, তাহলে তিনি জিরো টু ইনফিনিটিকে শোক বার্তা না ছাপানোর নির্দেশ দেবার কে? আর মাহমুদই বা তাকে জিজ্ঞেস করে কাজ করবেন কেন? এখানে প্রশ্ন হলো, জিরো টু ইনফিনিটিতে কি এমন কোনো বিষয় আছে যার জন্য ফারসীম পত্রিকার সঙ্গে তার সম্পর্ক থাকার পরেও বিষয়টি অস্বীকার করছেন?

কাওসার ফরহাদ নামে এক ছেলে যে জামাতি, এটা আব্দুল্লাহ মাহমুদ স্বীকারও করেছেন। কিন্তু ওই মিটিং এর দিন কাওসার ফরহাদ এসেছে বলে ফারসিম মাহমুদকে খুব বকাঝকা করে এই বলে যে, কে একে আমন্ত্রণ করেছে? সে তো লেখক না।

তাহলে সেই জামাতিকে ডেকে আনা কেন, আর ডাকার পরে এই ধরণের বকাবকি কেন?

জনাব ফারসীম, এসব প্রশ্নের কী জবাব দেবেন?

আপনার মন্তব্য

আলোচিত