মো. আব্দুল মতিন

০৯ ফেব্রুয়ারি , ২০১৭ ২৩:৫৩

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত : রাজনীতির হাইপার রিয়েলিস্ট

বাংলাদেশের রাজনীতিতে যিনি প্রজ্ঞা, মানবতাবোধ দিয়ে হাইপার রিয়েলিস্ট শিল্পী নাতান ওয়ালশ, ফ্রানকো ক্লান, এড ওয়ারডপাউলজি, জাস্পার জোন্সের হাইপার রিয়েলিজম চিন্তার মতো রাজনীতির তিক্ত অভিজ্ঞার পেন্সিল দিয়ে নিজেকে এঁকে যে চিত্র কর্মের নাম নিজেই দিয়েছেন সেই নামটিই সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।

হাওরের প্রতিকুল ঢেউ, হিজল-বরুন-করচের সৌন্দর্যের ভিড়ে বিষাক্ত সাপের ছোবল ডিঙিয়ে, রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকে, ঘাতকদের প্রাণ সংহার থেকে বারবার ফিরে, এলিটিস্টদের ভিড়ে থেকেও যিনি আমৃত্যু পপুলিস্ট নেতা, দেশই যার কাছে রাজনীতির মূল, গ্রামের মেঠো পথ-খেতের আল বেয়ে যিনি আমৃত্যু একাই লড়ে রাজপথ আর রাজধানী দখল করে হয়েছেন জাতীয় নেতা ; সারা বাংলার সবার প্রিয় নেতা ও দাদাবাবু ; তিনি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছাড়া কেউ নয়।

১৯৪৬ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জ মহকুমার দিরাইয়ের আনোয়ার পুর গ্রামে শ্রীমতী সুমতিবালা সেনগুপ্তের গর্ভে জন্ম নেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর বাবা দেখেন নি তিনি। তার জন্মের তিন মাস পূর্বেই বাবা দেবেন্দ্র নাথ সেনগুপ্ত গত হয়েছিলেন। মা সন্তানের নাম রেখেছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। যখন তিনি ১১ বছরের শিশু তখন হয়েছেন মাতৃহারা।

দিরাই উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে মেট্রিকুলেশন পাশ করে সিলেট এমসি কলেজে ভর্তি হন। স্কুল জীবন থেকেই অভিনয়ের নেশা ছিল তার। বাম রাজনীতির পুরোধা প্রসূন কান্তি বরুণ রায়ের সান্নিধ্যে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর করেন।

মেধা আর প্রজ্ঞায় স্থান করে নেন ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে। ১৯৬২ সালের হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বিরুদ্ধে আন্দোলনে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানে রেখেছিলেন অনন্য ভূমিকা।

ঢাকা সেন্ট্রাল ল কলেজ থেকে এলএলবি পাস করে ১৯৭০ সালে তিনি ব্যারিস্টারি পড়তে পাড়ি জমান ইংল্যান্ডে। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার সাধারণ নির্বাচন ঘোষণা করলে প্রসূন কান্তি বরুণ রায়ের চিঠি পান তিনি। এরপর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন এবং ন্যাপ থেকে কুঁড়েঘর মার্কা নিয়ে দেশের সর্বকনিষ্ঠ প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে সারাদেশে তাক লাগিয়ে দেন।

মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন তিনি ৫নং সেক্টরের বালাট সাব-সেক্টর কমান্ডার হিসেবে করেছেন যুদ্ধ।

১৯৭২ সালে গণপরিষদ গঠিত হলে তিনি ছিলেন বিরোধীদলীয় সদস্য, এবং একমাত্রও। একমাত্র বিরোধীদলীয় সদস্য হিসেবে বাহাত্তরের মূলস্তম্ভ সংবিধান প্রণয়ন কমিটর সদস্যও ছিলেন।

১৯৭০, ১৯৮৯, ১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

প্রিয় দাদা, আপনার চন্দন দাহে আমরা ভক্তরা সহ দেশের সবাই সত্যিই দহন হয়েছি। আমৃত্যু আপনি আমাদের মাঝে সত্যিই বেচে থাকবেন। ভালো থাকুন ওপারে...

  • মো. আব্দুল মতিন : প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, শাহজালাল মহাবিদ্যালয়, জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ

আপনার মন্তব্য

আলোচিত