এস এম নাদিম মাহমুদ

৩১ মার্চ, ২০১৭ ২১:০৪

যেভাবে আপনিও জঙ্গি-সম!

ব্লগার মারা হলো, আপনি তখন বললেন, ব্যাটারা নাস্তিক কিসব ধর্মের বিরুদ্ধে লিখে। অন্যের বিশ্বাসে আঘাত হানে এমন ব্লগার দরকার নাই। ব্যস খুন জায়েজ হয়ে গেল।

লেখকদের কুপিয়ে হত্যা করা হলো, আপনি তখন বললেন, এই দেশটা তো আর পশ্চিমা বিশ্ব না যে যা ইচ্ছে তাই বইয়ে লিখবেন। যৌনতা নিয়ে যদি লিখতেই চান তাহলে চটি লিখে ফেলুন না। ব্যস লেখকদের রক্ত নেয়া বৈধ হয়ে গেল।

ক্লাস নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে শিক্ষকদের কুপিয়ে মারলো। আপনার শত ইন্দ্রিয় জাগ্রত হলো। আপনি তখন বললেন, এতো শিক্ষক থাকতে ওই শিক্ষককে কেন মারলো? নিশ্চয় ওইটা নারী ঘটিত ব্যাপার স্যাপার। ব্যস আবারও আপনি সফল হলেন।
আপনার আইডিয়াকে প্রাধান্য দিয়ে খবর বের হলো। খুনের রক্ত হয় হয়ে গেল অপবিত্র।

লালন-বাউলদের গলা কাটা হলো, আপনি তখন আপনার সেই আদর্শিক উক্তি ছেড়ে দিলেন, ধর্মে গান-বাজানা হারাম। ওইগুলো বিদআত। হজম হয়ে গেল লালন-বাউলদের খুন।

আপনি অনেক মানবিক। বিশ্বে রক্ত দেখলেই আপনি লিখে ফেলেন সেভ বার্মা মুজলিম, সেভ ফিলিস্তিন, সেভ সিরিয়া। তুরস্কের সেনা উত্থানে আপনি ঘুমালেন না। সারা রাত এরদোগানের জন্য প্রার্থনা করলেন। আপনার মানবিকতার ছায়া সর্বত্র বিরাজ করলো।
ফ্রান্সের রক্ত, ব্রাসেলসের রক্ত কিংবা নিজ দেশের রক্তে আপনার মানবিকতা অসার হয়ে যায়। আপনি তখন হয়, ঘুমান না হয় খাওয়া দাওয়ায় ব্যস্ত থাকেন। আপনার মানবিকতা এতোটাই তীব্র যে ঘুমন্ত বিবেক জাগ্রত করতে ‘আপনি নিয়মিত ধর্মের কোটেশন’ ব্যবহার করেন। ব্যস আপনার মতো তারাও বসবাস করতে শুরু করলো।

দেশে জ্বালাও পোড়াও হচ্ছে। মানুষ মরছে। আপনি তখন, আলু পোড়ার কাহিনী বর্ণনা করছেন। আপনি তখন দলাদলির রাজনৈতিক বিশ্লেষক হয়ে যান। আপনি তখন মনে করেন, ওইগুলো সরকারের এজেন্ট করছে। ব্যস আপনার ঘুমন্ত জঙ্গিমন সাড়া দিতে শিখছে।

আপনার দেয়ালে প্রস্রাব বন্ধ করার জন্য আরবি লিখে দিলেন। আপনি জানেন, ধর্মকে কিভাবে ব্যবহার করতে হয়। আবেগ, অনুভূতির পুরো ব্যবসাটাই আপনার দখলে চলে গেল। বন্ধ হলো মূত্র বিসর্জন। মস্তিষ্কে কেবল ঢুকল আত্মসমর্পণ।

সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ভাস্কর্য করা হলো, আপনার পবিত্র শিশু মন জেগে বসলো। আপনি তখন ভাস্কর্যে খুঁজলেন, মূর্তি তো ভাস্কর্য হতে পারে না। তাছাড়া এমন ভাস্কর্যে তো বাংলার কোন ঐতিহ্য সংস্কৃতিই ধারণ করে না। ব্যস আপনার প্রগতিশীল মনে দেদারছে ঢুঁকে গেল।

পাঠ্যপুস্তকে ‘ছাগল-ওড়না’ তত্ত্ব আসলো, আপনি তখন খুঁজলেন ‘রথ’। আবিষ্কার করলেন, মুসলমানদের দেশে তো একটু আধটু ওইসব থাকবেই। ব্যস, ভিত রচনা হয়ে গেল।

আপনি বিশ্ব রাজনীতি বোঝেন। কথায় কথায় আমেরিকার গোষ্ঠি উদ্ধার করেন। আপনি মনে করেন, আইএস, তালেবান, নুসরা, আল শাবাব, বোকা হারাম সবই পশ্চিমাদের সৃষ্টি। মুসলমানদের উৎখাত করতেই তারা একজোট হয়ে জঙ্গিদের সহায়তা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের সেনা-কর্মকর্তার সাথে আইএসের কমান্ডের ছবিগুলোকে আপনি বিশ্বাস করেন। নিজের ওয়ালে সেঁটেও দেন। ব্যস আপনার মস্তিষ্কের বিচক্ষণতা বিলক্ষণ ধরা পড়ে গেল। আপনি একটু সুযোগ পেলেই, সাদা চামড়াকে ধুয়ে দেন। ব্যস আপনার ভিতর মধ্যপ্রাচ্য আরামে বসবাস করছে।

আপনি দক্ষ নাট্যবোদ্ধা। নাটকই ধ্যান। তাই আপনি সহজেই দেশের জঙ্গি অভিযানকে নাটক বলেই আখ্যায়িত করেন। ভারতের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তির কৌশল হিসেবেই নাটকের সারমর্ম বলে দাবি করেন। অভিযান হলো, মানুষ মরলো, শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা প্রাণ দিলো তখনো আপনি নাট্য দৃশ্যায়নের গন্ধ খুঁজে পান। বোমাকে আপনি পটকা বলে দাবি করেন। জঙ্গি অভিযানে আপনি ভারতীয় সৈন্য খুঁজে পান।

হ্যাঁ আপনি সত্যিই একজন ভাল নাট্যকার কাম অভিনেতা। আপনি প্রগতিশীলতার অন্তরালে ‘জঙ্গিবাদ’কে লালন করে ফেলছেন। আপনার জঙ্গি মস্তিষ্ক এই দেশে ‘দাওলার’ শাসন দেখতে চায়। আপনি সরকারের অত্যাচারে অতিষ্ঠ, তাই জঙ্গিদের দিয়ে সরকারকে শায়েস্তা করার স্বপ্ন দেখেন। আহা.. আপনি অঘোষিত, মুখোশ পরিহিত জঙ্গি। জঙ্গিরা হামলা করে আপনি সেইগুলোকে সাপোর্ট করেন। মিলে নেন, আপনার মনের অগোচরে কত-ভাগ জঙ্গিপ্রেম স্থান করে নিয়েছে।

  • এস এম নাদিম মাহমুদ: জাপান প্রবাসী লেখক।
  • এবিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত