মুক্তাদীর আহমদ মুক্তা

০৮ অক্টোবর, ২০১৯ ১৭:৫৪

আলোকিত প্রজন্ম আলোচিত অপরাধী

ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়লেই ভালো মানুষ হওয়া যায় না। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার চেয়ে পারিবারিক ও পারিপার্শ্বিক শিক্ষা মানুষকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে।   

চারপাশে প্রতিষ্ঠার প্রতিযোগিতা। কে কিভাবে বেড়ে উঠছে? কার কিভাবে সমৃদ্ধি ঘটছে এসব নিয়ে এখন আর সমাজে বাছ বিচার নেই! যার আর্থিক সামর্থ্য ও প্রশাসনিক কর্তৃত্ব বেশি তার সামাজিক সম্মানও বেশি। সে কোন উপায়ে সামর্থ্যবান বা কর্তৃত্ববান হল তা নিয়ে আড়ালে কিছু কথা বলা হলেও প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতিতে তারাই এগিয়ে। ক্ষমতার বলয়ের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার সূযোগ মানুষকে আগ্রাসী ও হিংস্র করে তুলছে। এই বাস্তবতায় ন্যায়পরায়ণতা, ন্যায্যতা, পরার্থপরতা, মানবিকতা, সংবেদনশীলতা, যোগ্যতা, নৈতিকতা, উদারতা যেনো সমাজ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।

স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান থেকে অনেক কুখ্যাত অপরাধী বেড়ে উঠেছে। উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনেক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু বুয়েটের আবরার হত্যাকাণ্ডের মতো নিষ্ঠুর, নির্মম, নৃশংস, সংঘবদ্ধ পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড খুব কমই হয়েছে। কেবল রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই অপরাধের নিন্দা আর মাত্রা নির্ধারণ করলে মানবিকতা বার বার পরাজিত হবে। রাজনৈতিক সন্ত্রাসের নামে অনেক বর্বর হত্যাকাণ্ড সুবিচার থেকে বঞ্চিত হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান অভিযানের সময় এ ধরণের আত্মঘাতি অপরাধ নিশ্চয়ই সরকার ও রাষ্ট্রযন্ত্রের জন্য সুখকর নয়।

উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যেখানে আলোকিত প্রজন্ম তৈরী করার কথা সেখানে অালোচিত অপরাধী তৈরী করছে, এসব নিয়ে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় মূল্যায়ন প্রয়োজন। চারপাশে যখন অসুস্থ প্রতিযোগিতা,  মনুষত্বহীনতার চর্চা, বিচারহীনতার সংস্কৃতি,ক্ষমতার দাপট আর বিত্তের আস্ফালন, তখনই সামাজিক অপরাধ স্থায়ী হয়। মানুষ হওয়ার সৃষ্টিশীল পথ ছেড়ে অনেকেই দানবে রূপান্তরিত হয়। মেধাবীরা শুধু ভালো শিক্ষার্থী যে হবে এমন কোনো কথা নেই। মেধা কে, কিভাবে ব্যবহার করছে এটাই ধর্তব্যের বিষয়। অনেক মেধাবী মানুষরূপী কুলাঙ্গার দেশ ও রাষ্ট্রের প্রতিনিয়ত ক্ষতি করে যাচ্ছে। মেধাবী অপরাধীরা সমাজের জন্য অারো বেশি ক্ষতিকর,কারণ তারা তাদের কার্যক্ষেত্রে নৈপুণ্য প্রদর্শন করে আরো বেশি বর্বর হয়ে উঠে। তারা সুনিপুণ পরিকল্পনার মাধ্যমেই হত্যা, খুন, ধর্ষণ, দখল, দুর্নীতিসহ নানা অপকর্ম করে।

আমরা অদ্ভুত এক সমাজে বাস করছি। যেখানে ভালো মানুষের মূল্যায়ন নেই। মনুষত্বের দাম নেই। সততা ও যোগ্যতার কদর নেই। আমরা মানুষকে মূল্যায়ন করি তার পদ পদবী, অর্থবিত্ত, গাড়ি-ফ্ল্যাট, তথা অার্থিক সামর্থ্য দিয়ে। যার ফলে প্রতিষ্ঠা ও সাফল্য পাওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতায় মানুষ মানবিকতা বিসর্জন দিয়ে ক্রমশ দানবে পরিণত হচ্ছে। দানব হওয়ার হিংস্রতা থেকেই নৃশংস অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে কমবয়সীরা।অপরাধের সংস্কৃতি যতো পাকাপোক্ত হবে ভয়ের সংস্কৃতি ততো গ্রাস করবে।মেধাবী ও দক্ষ প্রজন্মের চেয়ে মানবিক ও দেশপ্রেমিক প্রজন্ম গড়ে তুলা বেশি জরুরি।

লেখক: রাজনৈতিক কর্মী, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান, জগন্নাথপুর উপজেলা, সুনামগঞ্জ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত