শিব্বীর আহমেদ

১৪ অক্টোবর, ২০১৯ ২৩:৫৬

যত দোষ নন্দ ঘোষের জাত গেল জাত গেল বলে!

২০১২ সালে ফোবানা সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকে অতিথি হয়ে এসেছিলেন বাংলাদেশের স্বনামধন্য দুইজন শিক্ষাবিদ। প্রথমজন তাঁর শুভেচ্ছা বক্তব্যের পুরোটা সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তৎকালীন সরকার ও বাংলাদেশের বিভিন্ন পরিস্থিতি নিয়ে নেতিবাচক বক্তব্য দিলেন। তার ভাষায় ’বাংলাদেশ এখন আর বসবাসের যোগ্য একটি দেশ নয়। আপনারা যার দেশের বাইরে আছেন আপনারা সবাই বেঁচে গেছেন।’ দেশের খেয়ে দেশের পরে দেশের মধ্যে বসবাস করে দেশের অতিথি হয়ে বিদেশে এসে দেশ বিরোধী এ রকম বক্তব্য অনেকেই দিয়ে থাকেন। এরা রাজনীতিবিদ নন। তারপরেও রাজনীতির ভাষায় এরা কথা বলেন। প্রতিনিয়ত দেশবিরোধী কথা বলে দেশের সুনাম নষ্ট করবার চেষ্টা করেন।

দেশে বর্তমানে এমন একটি শ্রেণি তৈরি হয়েছে তারা সবকিছুতেই সরকারের দোষ খুঁজে পান এবং আঙুল দিয়ে সরকারের দোষ অন্যকে দেখিয়ে দেন। এদের বেশিরভাগই দেশবিরোধী শক্তি বিএনপি-জামায়াতের আগামীর প্রজন্ম। অনুসন্ধান করলেই জানা যাবে এরা কোন না কোন বিএনপি-জামায়াতের অনুসারী কিংবা তাদের সমর্থক সন্তানসন্ততি। এদের বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযোগ নেই। কারণ এরা চিহ্নিত দেশবিরোধী শক্তি। তিলে তিলে এদেরকে গড়ে তোলা হয়েছে দেশের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে অভিযোগের আঙুল তুলতে চাই যারা বর্তমান সরকারের সকল সুবিধা ভোগ করে সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করছেন।

সবকিছুতেই এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ না দিলে যেন কোন কিছুই হওয়ার নয়। বর্তমানে দেশে সাড়ে তিনশত মন্ত্রী-এমপি রয়েছেন। এই সাড়ে তিনশত মন্ত্রী-এমপির সিংহভাগই সরকারের ভাবমূর্তি উন্নয়নে সারাদেশে কাজ করার কথা। কিন্তু আদতে তারা কি তাদের কাজগুলো করছে? ২০১৮ সালে পরপর তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর এখন মূলত যেন সবাই আওয়ামী লীগ করতে শুরু করেছে। সারাদেশে আওয়ামী লীগের মোটা মোটা নেতাদের হাত ধরে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা লাইন দিয়ে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেছে। এই অনুপ্রবেশ শুধু যে দেশের মাটিতে ঘটেছে তা কিন্তু নয়। এই অনুপ্রবেশ বিদেশে আওয়ামী লীগের সকল সংগঠনেই ঘটেছে।

ক্যাসিনো সম্রাট জিকে শামিম, লোকমান, খালেদ এরা সবাই আওয়ামী লীগের মোটাতাজা নেতাকর্মীদের হাত ধরে আওয়ামী লীগে এসেছে। এদের আওয়ামী লীগ করবার কোন ইতিহাস নেই। কিন্তু এরাই হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগের বড়বড় মোটাতাজা নেতা। এই নব্য মোটাতাজা নেতাদের দৌরাত্ম্যে আসল আওয়ামী লীগাররা হারিয়ে যাচ্ছে। দূরে সরে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ থেকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সকল চেষ্টা সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অনুপ্রবেশকারীদের কারণে দিনের পর দিন ম্লান হয়েছে। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া যেন দেখবার কেউ নেই। করবারও কেউ নেই। যদি তাই হবে তাহলে সারাদেশে এত এমপি-মন্ত্রী রেখে লাভ কী? যদি এই এমপি-মন্ত্রীরা সরকারের ভাবমূর্তি উন্নয়নে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি উন্নয়নে কোন কাজই না করবেন সঠিক পদক্ষেপ না নিবেন তাহলে এদেরকে সরকারি গাড়ি-বাড়ি বেতন দিয়ে সরকারের কি উপকার হচ্ছে?

বাংলাদেশ স্বাধীনতার সময় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে ভারত। কিন্তু ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক যখনই এক সুনির্দিষ্ট মাত্রা নিতে শুরু করে তখনই সর্বত্র ‘গেলো গেলো’, ’জাত গেল’, ’দেশ গেল’ বলে রব উঠে! দু’দেশের কোন সফর বা চুক্তি সম্পাদনের মুহূর্তে সোশাল মিডিয়া ও গণমাধ্যমে দেশ বিরোধী বিএনপি-জামাতের অপপ্রচার শুরু হয়। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। যথারীতি ’দেশ বিক্রি হল’ বলে রব তুলেছে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি। শুধু রব তুলেই ক্ষান্ত হয়নি ওরা। ক্যাসিনো সম্রাটের গ্রেপ্তার ও আবরার হত্যার পিছনে সরকারের ষড়যন্ত্র বলেও অপপ্রচার করছে।

আবরার হত্যাকাণ্ডের পর রব উঠেছে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের। কিন্তু ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেই কি আবরার হত্যাকাণ্ড বন্ধ হয়ে যাবে? দোষ করেছে অপরাধীরা। অপরাধীদের আইনের আওতায় শাস্তি হবে। কিন্তু ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল অতীতে কলঙ্ক লেপন করা সঠিক মনে হচ্ছেনা। যখন ছাত্র রাজনীতি ছিল না, তখনও দেশে মারামারি হয়েছে। যখন থাকে, তখনও হয়। ছাত্র রাজনীতি বন্ধ-খোলার ভেতর কোন সমাধান নেই। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়া এক বিরাট ভূমিকা রাখছে। ছাত্র রাজনীতিকে দিয়েছে নতুন ইন্ধন। এই ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়াকে সঠিক ভাবে ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণ করা অতীব জরুরি। মাথাব্যথায় মাথা কাটা নয়। কিন্তু পচে যাওয়া অঙ্গ কেটে না ফেললে সরকারি দল বা দেশের রাজনীতি কিছুতেই শান্তি পাবে না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা না বলা পর্যন্ত কোন কাজ হয় না। এমন এক পরিবেশ- কাকে ক’দিনের রিমান্ডে নেয়া হবে বা কাকে জামিন দেয়া হবে না হবে সে জন্যও তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকা হয়! এটা কেমন রীতি? কেনই বা সব বিষয়ে তাঁকে বলতে হবে? তাঁর কি সে সময় বা সুযোগ আছে? আজ বাংলাদেশ যে জায়গায় সেখানে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার পরিধি অর্থনীতি ও বাণিজ্য। এগুলো ঠিক করাই যেখানে মুখ্য, সেখানে দেশের ভেতরকার ছোট ছোট সমস্যাও শেখ হাসিনার নির্দেশ ছাড়া সমাধান বা নিষ্পত্তির মুখ দেখে না। এই নির্ভরতা কী প্রমাণ করে? গণতন্ত্র কি তা বলে? ইয়াবা বদীর পরিবর্তে বদীর স্ত্রী মনোনয়ন পায় এমপি হয়! দায়টা কার? কঠিন আত্মসমালোচনা সহ্য করবার মত ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আছে। তারপরও এক ধরনের অপরাজনীতির মূল টার্গেট শেখ হাসিনা ও তাঁর রাজনীতি। যে যেখানেই দোষ করুক না কেন সব দোষ যেন শুধু শেখ হাসিনার। আর বাকি সবাই সাধু।

জননেত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের যে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন আশা করছি এই শুদ্ধি অভিযান আওয়ামী লীগের মোটাতাজা নেতাকর্মীদের দ্বারা বাধাগ্রস্ত হবেনা। দলের মধ্যে যদি দুর্নীতি থাকে, তাহলে তো সেটা ভ্যানিস করাই উচিত। দল পরিষ্কার থাকবে, এটাই দলের জন্য ভালো। দলে দুষ্ট লোক থাকলে, তারা যদি এভাবে ধরাও পড়ে, সেটার জন্য দলের অন্যদের উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রশ্ন আসে না। বরং এরা ধরা পড়লে দল খাঁটি হবে। মানুষের মধ্যেও একটা সচেতনতা আসবে, যে এরকম করা যাবে না। অনুপ্রবেশকারী, পরগাছা, আগাছার ব্যাপারে দলীয় সভানেত্রী নেত্রী নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপি ও জামায়াতের কাউকে দলে না ভেড়াতে। আশা করছি জননেত্রী শেখ হাসিনার এই নির্দেশ দলের মোটাতাজা নেতাকর্মীরা এই নির্দেশ মেনে চলবেন।

শিব্বীর আহমেদ : যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত