দেবব্রত চৌধুরী লিটন

২৮ মার্চ, ২০২০ ০২:৪৫

আইনে অমর্যাদাকর দণ্ড প্রদান নিষিদ্ধ

যশোরের মনিরামপুরে মুখে মাস্ক না পরায় তিন বৃদ্ধকে কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখার ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে শুক্রবার (২৭ মার্চ) রাতে। সাইয়েমা হাসান নামের সহকারী কমিশনার (ভূমি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে শুক্রবার বিকেলে উপজেলার চিনাটোলা বাজারে মাস্ক না পরায় বয়োবৃদ্ধ তিনজনকে এই দণ্ডাদেশ দেন। এই দণ্ডাদেশ দেয়ার সময়ে তিনি তার নিজের মুঠোফোনে এ ঘটনার ছবিও তুলেন।

এতে করে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বেশ কিছু অনলাইন পত্রিকায় এ নিয়ে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। সামাজিক মাধ্যমে সরব হন অসংখ্য মানুষ। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাষ্ট্রের নাগরিকদের এমন অমানবিক শাস্তি দিতে পারেন কি না এ নিয়েও কথা উঠে সর্বত্র।

আইনে এ ধরনের অননুমোদিত শাস্তি দেয়ারও কোন বিধান নেই। বাংলাদেশে বলবত ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৫৩ ধারা অনুযায়ী ৬ ধরনের শাস্তিকে আইনে অনুমোদিত শাস্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আইনে অনুমোদিত এই শাস্তিগুলো হলো - মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, দ্বীপান্তর (বর্তমানে বাতিল), কারাদণ্ড সশ্রম/বিনাশ্রম, সম্পত্তি বাজেয়াপ্তি ও অর্থদণ্ড।

কাউকে কান ধরে ওঠবস করানো সম্পূর্ণ বেআইনি, অসাংবিধানিক, মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার পরিপন্থী। বিচার ও দণ্ড সম্পর্কে রক্ষণ সম্পর্কে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৫(৫) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কান ধরে ওঠবস করানোর মতো অমর্যাদাকর দণ্ড প্রদান নিষিদ্ধ।

সংবিধানের এই অনুচ্ছেদের উপ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে - কোন ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাইবে না কিংবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনার দণ্ড দেওয়া যাইবে না কিংবা কাহারও সহিত অনুরূপ ব্যবহার করা যাইবে না। এতেকরে বলা যায় কোনো অজুহাতেই রাষ্ট্রের কোন নাগরিককে এমন অশোভন, অমর্যাদাকর, লাঞ্ছনার দণ্ড প্রদান করার এখতিয়ার দেশের দেশের সর্বোচ্চ আইন বাংলাদেশের সংবিধান সমর্থন করে না। এধরনের শাস্তি দেয়ার এখতিয়ার তো কোন আদালতেরই নেই।

প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারীর দেশের বয়োবৃদ্ধ নাগরিকদের এই ধরনের আইনে অননুমোদিত শাস্তি প্রদান খুবই দুঃখজনক।

  • অ্যাডভোকেট দেবব্রত চৌধুরী লিটন: আইনজীবী জজ কোর্ট, সিলেট।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত