সিলেটটুডে ডেস্ক

২৩ জানুয়ারি, ২০২৪ ১২:৫১

নায়করাজ রাজ্জাকের জন্মদিন আজ

‘নীল আকাশের নিচে আমি রাস্তা চলেছি একা/ এই সবুজের শ্যামল মায়ায় দৃষ্টি পড়েছে ঢাকা…’ কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে মায়ার জাল বিছানো বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি প্রয়াত চিত্রনায়ক ‘নায়ক রাজ’ রাজ্জাকের জন্মদিন আজ। ১৯৪২ সালের আজকের এই দিনে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার পুরো নাম আব্দুর রাজ্জাক।

কলকাতার থিয়েটারে অভিনয় করার মাধ্যমে রাজ্জাক তার অভিনয় জীবন শুরু করেন। বেঁচে থাকলে আজ তিনি ৮২ বছর বয়সে পা দিতেন। ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট ৭৫ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বাংলা সিনেমার অন্যতম এই নায়ক।

দেশের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে রাজ্জাকের জন্মদিন নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করলেও রাজ্জাকের কর্মস্থল বিএফডিসিতে প্রতিষ্ঠিত কোনো সমিতি বিশেষ কোনো আয়োজন করেনি। পারিবারিকভাবেও ঘটা করে জন্মদিন পালনের কোনো উদ্যোগ নেয়নি তার পরিবার। তেমনটি জানিয়েছেন নায়ক রাজের ছোট ছেলে চিত্রনায়ক সম্রাট।

এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে কী দিন যত যাচ্ছে জন্মদিন নিয়ে উচ্ছ্বাসটা ততই কমে যাচ্ছে। একটা সময় আব্বুর জন্মদিনে বড় পার্টি হতো। সেই সময়টা খুব উপভোগ করতাম। কিন্তু এখনতো আসলে বিশেষ দিন বলেই যে এমন নয়, আব্বুর জন্য সব সময়ই দোয়া করি। আব্বুর কবরের কাছে যাই, আজকেও যাব। আল্লাহর কাছে দোয়া করে শুধু এতটুকুই বলব- আল্লাহ যেন আমার আব্বুকে বেহেস্ত নসিব করেন। আব্বু কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকলে যেন তারা ক্ষমা করে দেন। শুধু দোয়া চাই সবার কাছে। জন্মদিনে কেউ বিশেষ আয়োজন করলেন কী করলেন না এসব নিয়ে আমাদের সত্যিই কোনো ভাবনা নেই।’

রাজ্জাক ১৯৫৯ সালে ভারতের মুম্বাইয়ের ফিল্মালয়ে সিনেমার ওপর পড়াশোনা ও ডিপ্লোমা করেন। এরপর কলকাতায় ফিরে এসে শিলালিপি ও আরও একটি সিনেমায় অভিনয় করেন। তবে ১৯৬৪ সালে কলকাতায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন রাজ্জাক। ঢাকায় এসে তিনি পরিচালক কামাল আহমেদের সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন।

৬০-এর দশকে সালাউদ্দিন পরিচালিত হাসির সিনেমা ‘তেরো নম্বর ফেকু ওস্তাগার লেন’-এ একটি পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে ঢাকায় রাজ্জাকের অভিনয় জীবন শুরু হয়। এরপর নায়ক হিসেবে চলচ্চিত্রে নায়করাজের যাত্রা শুরু হয় জহির রায়হানের ‘বেহুলা’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে। এতে তার বিপরীতে ছিলেন কোহিনূর আক্তার সুচন্দা। ‘বেহুলা’ সিনেমায় নায়ক হিসেবে অভিনয় করে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করেন রাজ্জাক। তারপর একের পর এক সিনেমায় অভিনয় করে দর্শকদের মুগ্ধ করেন তিনি।

১৯৯০ সাল পর্যন্ত দাপটের সঙ্গেই ঢালিউডের শীর্ষ নায়ক হয়ে অভিনয় করেন রাজ্জাক। এর মধ্য দিয়েই তিনি অর্জন করেন নায়করাজ রাজ্জাক খেতাব। অর্জন করেন একাধিক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও স্বাধীনতা পদকের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্মাননাও। এ ছাড়া রাজ্জাক জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে কাজ করেছেন।

রাজ্জাক অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘নীল আকাশের নিচে’, ‘ময়নামতি’, ‘মধু মিলন’, ‘পিচ ঢালা পথ’, ‘যে আগুনে পুড়ি’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘কী যে করি’, ‘অবুঝ মন’, ‘রংবাজ’, ‘বেঈমান’, ‘আলোর মিছিল’, ‘অশিক্ষিত’, ‘অনন্ত প্রেম’, ‘বাদী থেকে বেগম’, ‘ দর্পচূর্ণ’, ‘নাচের পুতুল’, ‘ওরা ১১ জন’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘চাপা ডাঙ্গার বউ’ ইত্যাদি। প্রায় ৩০০ সিনেমায় নায়ক হিসেবে অভিনয় করেছেন রাজ্জাক।

নায়ক হিসেবে রাজ্জাক-সুচন্দা, রাজ্জাক-কবরী ও রাজ্জাক-ববিতার এবং রাজ্জাক-শাবানার অনেক সিনেমা দর্শক হৃদয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। বিশেষ করে রাজ্জাক-করবী জুটি যেন দর্শক হৃদয়ে বিশেষ দাগ কেটেছে।

সিনেমা প্রযোজনাও করেছেন চিত্রনায়ক রাজ্জাক। প্রযোজক হিসেবে নায়করাজের যাত্রা শুরু ‘রংবাজ’ সিনেমার মধ্য দিয়ে। এটি পরিচালনা করেছিলেন জহিরুল হক। রাজ্জাকের বিপরীতে ছিলেন কবরী। ‘অনন্ত প্রেম’ সিনেমা দিয়ে পরিচালক হিসেবেও যাত্রা শুরু করেন এই চিত্রনায়ক। পরিচালনার পাশাপাশি এতে অভিনয়ও করেন রাজ্জাক। এতে তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়িকা ববিতা। নায়ক হিসেবে এ অভিনেতার সর্বশেষ চলচ্চিত্র ছিল শফিকুর রহমান পরিচালিত ‘মালামতি’। এতে তার বিপরীতে ছিলেন নূতন।

নায়করাজ রাজ্জাক সর্বশেষ তার বড় ছেলে নায়ক বাপ্পারাজের পরিচালনায় ‘কার্তুজ’ সিনেমায় অভিনয় করেন।

নায়ক রাজ রাজ্জাক ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি’-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তার তিন ছেলের মধ্যে দুই ছেলে বাপ্পারাজ ও সম্রাট অভিনয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন। আরেক ছেলে বাপ্পী দেশের বাইরেই স্থায়ী হয়েছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত