বিনোদন ডেস্ক

২৫ ফেব্রুয়ারি , ২০১৬ ২৩:৩৭

দেশভাগের স্মৃতি ও অনুভূতির গল্প শঙ্খচিল

আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন চলচ্চিত্র নির্মাতা গৌতম ঘোষ সম্প্রতি বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ প্রযোজনায় নির্মাণ করেছেন ‘শঙ্খচিল’ নামের চলচ্চিত্র। ছবিটির মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন দুই বাংলার দুই প্রিয়মুখ প্রসেনজিত চট্টোপাধ্যায় ও কুসুম শিকদার। তাদের মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন নবাগত অভিনেত্রী অনুম রহমান খান।

ছবিটির শুভমুক্তি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) তেজগাঁওস্থ চ্যানেল আই ভবনে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ঘোষণা দেয়া হয়, আসছে পহেলা বৈশাখ, ১৪ এপ্রিল একসঙ্গে দুই বাংলাতে মুক্তি পাবে গৌতম ঘোষের ছবি ‌‌‌‘শঙ্খচিল’।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, আশীর্বাদ চলচ্চিত্রের কর্ণধার হাবিবুর রহমান খান, চলচ্চিত্রটির নির্মাতা গৌতম ঘোষ ও বাংলাদেশের প্রখ্যাত নাট্যভিনেতা মামনুর রশীদ। আরো উপস্থিত ছিলেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিজে. (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।

সংবাদ সম্মেলনে ছবিটিতে অভিনয় করার অনুভূতি প্রকাশ করেন অভিনেত্রী কুসুম শিকদার ও শিশুশিল্পী অনুম রহমান খান। কুসুম ছবিটির গল্প ও নিজের চরিত্র নিয়ে বলেন, ‌‘এই ছবিতে কাজ করাটা আমার ক্যারিয়ারের জন্য অনন্য এক সাফল্য হিসেবেই ধরে নিয়েছি আমি। গৌতম ঘোষের মত নির্মাতার সঙ্গে প্রসেনজিতের মতো অভিনেতার বিপরীতে কাজ করাটা যে কোনো অভিনেত্রীর কাছেই লোভনীয় ব্যাপার।’

তিনি আরো বলেন, ‘ছবিতে সবাই একটি পরিবারের গল্প দেখতে পাবেন। আমি এখানে স্কুল মাস্টার প্রসেনজিতের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছি। আমার একটি মেয়ে রয়েছে সাঁঝবাতি নামের। দারুণ একটি গল্প আসলে এখানে। না দেখলে বলে বুঝানো সম্ভব নয়। আমার বিশ্বাস, এই গল্প ও চরিত্ররা হৃদয় ছুঁয়ে যাবে দর্শকদের।’

শিশুশিল্পী অনুম রহমান খান বলেন, ‘আমি কল্পনাও করিনি কোনোদিন অভিনয় করব। প্রথম যেদিন গৌতম দাদার সঙ্গে দেখা হলো আমি তো ভয়ে আম্মুকে জড়িয়ে কাঁদছিলাম আর বলছিলাম যে আমি অভিনয় করব না। পরে দাদা আমাকে বুঝিয়েছেন যে এটা একটা পিকনিকের মতো। তার সাহস ও আদরে উৎসাহিত হলাম। কলকাতায় গিয়ে আবার ভড়কে গেলাম বড় বড় সব তারকাদের দেখে। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই অনুভব করলাম এটা একটা পরিবারের মতো। আর শুটিং করতে গিয়ে দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে। সবাইকে অনেক জ্বালিয়েছি আইসক্রিমের জন্য। আসলে এই ছবিতে কাজ করার কথা আমি জীবনেও ভুলব। আমার স্মৃতিতে শঙ্খচিল অনন্য এক ‘জার্নি’ হয়ে থাকবে।’

এই ছবিতে কাজী নজরুল ইসলামের একটি গান ‘খেলিছো হে বিশ্বলয়ে...’ ব্যবহার করা হয়েছে। আর সেই গানে কণ্ঠ দিয়েছেন নজরুলসঙ্গীত শিল্পী ফেরদৌস আরা। তিনিও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে অনভূতি প্রকাশ করার সময় গানটির কিছু অংশ পরিবেশন করেন।

নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে মামুনুর রশীদ বলেন, ‘আমি সৌভাগ্যবান যে শঙ্খচিল টিমের একজন সদস্য আমি। এখানে একটি স্কুলের হেডমাস্টারের চরিত্রে অভিনয় করেছি আমি। কাজ করতে গিয়ে দেশভাগের অনেক কিছু্ই হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে। সেইসঙ্গে সীমান্ত ঘেঁষা লোকেশনে কাজ করতে গিয়ে দারুণ এক অভিজ্ঞতা হয়েছে। দেখেছি একটি বাড়ির রান্নাঘর বাংলাদেশে কিন্তু তাদের শোবার ঘরটা পড়েছে ভারতে। পৃথিবীতে এমন অদ্ভূত সীমান্ত বোধহয় এটাই একমাত্র। আর দীর্ঘদিন অসংখ নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু গৌতম ঘোষকে দেখেছি একেবারেই ভিন্ন ধাঁচে। অনেক কিছুই তার কাছ থেকে শিখবার দুই বাংলার নির্মাতাদের।’

সম্মেলনে ছবিটির দুই প্রযোজক ফরিদুর রেজা সাগর ও হাবিবুর রহমান খান নিজেদের বক্তব্যে গৌতম ঘোষের নির্মাণের প্রশংসা করেন। তারা শঙ্খচিল টিমকে অভিনন্দিত করে এর সাফল্য কামনা করেন।

সবশেষে ছবির পরিচালক গৌতম ঘোষ বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে প্রসেনজিৎকে নিয়ে তৈরি করেছিলাম মনের মানুষ। এর আগে পদ্মা নদীর মাঝি চলচ্চিত্রটি তৈরি করেছি। চলচ্চিত্র দুইটি মুক্তি পাওয়ার পর দুই দেশ থেকেই দারুণ সাড়া পেয়েছিলাম। সেগুলো ছিলো ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। পদ্ম নদীর মাঝিটা বানিয়েছিলাম একটি ক্লাসিক মুভি বানানোর স্বপ্ন থেকে। আর মনের মানুষ তৈরি করেছি সময়ের প্রয়োজনে। চারদিকে যখন ধর্ম নিয়ে গোলযোগ আর সংঘাত তখন লালনকেই মনে হয়েছে নির্ভরতার আশ্রয়। তাই লালনকে সবার সামনে তুলে ধরতে চেয়েছি। এবার বানিয়েছি শঙ্খচিল। এর প্রেক্ষাপট ও সময়ের প্রয়োজনীয়তাটা ভিন্ন। আর প্রত্যাশা এবারও অনেক। বরং আগের চেয়ে বেশি।’

তিনি আরো বলেন, ‘এটি দেশভাগের কোনো গল্প নয়। এটি দেশভাগের স্মৃতির গল্প। দেশভাগের পর আজ অবধি কিছু মানুষের অনুভূতির গল্প। এখানে অতীত থেকে গল্পকে ভবিষ্যতে প্রবাহিত করা হয়েছে। আমার কাছে বর্তমান বলে কিছু নেই, ছিলোও না কোনোদিন। বর্তমান হলো অতীত আর ভবিষ্যতের মাঝখানে একটা ক্ষুদ্র স্টেশন। তাই আমি সীমান্তের কিছু মানুষের অতীত থেকে ভবিষ্যত- এই দুটি সময়কেই শঙ্খচিলে উপস্থাপনের প্রয়াস করেছি।’

ছবির নাম নিয়ে ঘোষ বলেন, ‘শঙ্খচিল এখানে প্রতীকী। সাধারণত শঙ্খচিল বলতে আমরা একটি ভয়ংকর শিকারি পাখিকে বুঝে থাকি। পাখিটির কোনো সীমানা নেই। ছবিতে সেটাই দেখবেন দর্শকেরা। দুই বাংলার আকাশজুড়ে শঙ্খচিলের অসীম সীমানা। আর এই শব্দটি আমাকে অনুপ্রাণীত করেছে বাঙালি কবিদের কবিতা। বিশেষ করে জীবনানন্দ দাশের অসংখ্য কবিতায় শঙ্খচিল এসেছে বহুবার। কখনো সরাসরি, কখনো বা প্রতীক হয়ে।’  

ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনায় তৈরি শঙ্খচিল-এর চিত্রায়ন হয়েছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তসংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার টাকিতে। চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করেছে বাংলাদেশের ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড ও আর্শীবাদ চলচ্চিত্র এবং ভারতের এন আইডিয়াজ থেকে প্রসেনজিত চট্টোপাধ্যায় ও মৌ রায়চৌধুরী।

এ ছবির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করেছেন দুই বাংলার শিল্পীরা। তারা হলেন- মামুনুর রশীদ, প্রবীর মিত্র, রোজী সিদ্দিকী, রিয়াজ মাহমুদ জুয়েল, শাকিল আহমেদ, শাহেদ আলী, দীপঙ্কর দে, অরিন্দম শীল, ঊষসী চক্রবর্তী প্রমুখ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত