বিনোদন ডেস্ক

১৮ জুলাই, ২০১৬ ০১:৫০

কান্দিলের কান্নাভেজা জীবন

জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত পার করে আলোর মুখ দেখেছিলেন পাকিস্তানের সদ্য খুন হওয়া নারী মডেল কান্দিল বালোচ। দাঁড়িয়েছিলেন নিজের পায়ে। কিন্তু নিজের ভাই তাকে বাঁচতে দেননি। সেই ঘাতক ভাইকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে বিচার হবে না বলেই শঙ্কা করছে নারী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সংগঠন। তারা বলছেন, পাকিস্তানে এমন ঘটনা অহরহ ঘটে। সেটা চাপাও পড়ে যায়।

কান্দিল বালোচের জীবনে রয়েছে অনেক করুণ কাহিনী। মাত্র ১৭ বছর বয়সে গ্রামের ‘বুড়ো’ এক লোকের সঙ্গে তাকে জোর করে বিয়ে দেয়া হয়। কান্দিল তখন বিয়ে করতে চাননি। অনেক কান্নাকাটি করেও মুক্তি মেলেনি তার। পরে তার গর্ভে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। স্বামীর সংসারে কান্দিলকে নানা অত্যাচার করা হতো। প্রতিবাদী কান্দিল সেসব সহ্য না করে স্বামীকে তালাক দিয়ে চলে আসেন। এক বছর আগে পাকিস্তানের বিখ্যাত দৈনিক ডন’কে দেয়া এক সাক্ষাতকারে এসব কথা জানান কান্দিল।

‘তখন আমার বয়স সবে ১৭। জোর করে এক অশিক্ষিত লোকের সঙ্গে আমাকে বিয়ে দেয়া হয়। ছোট এক গ্রামের বালোচ পরিবার ছিল সেটা। কিন্তু আমি সেখানে থাকতে চাইনি। ছোটবেলায় আমি কিছু একটা হতে চাইতাম। আমার নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাইতাম। কিন্তু তারা আমাকে বিয়ে দিয়ে দেয়। আমি কখনোই ওই লোকটাকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করিনি।’ ওই সাক্ষাৎকারে এভাবে নিজের অতীত জীবনের বর্ণনা দিয়েছিলেন কান্দিল।

শনিবার পাকিস্তানের গণমাধ্যম জানায় বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদের ছুটি কাটানোর জন্য মুলতান যান কান্দিল। এক সপ্তাহের ছুটিতে বাড়িতে এসেছিলেন তিনি। গত শুক্রবার রাতে কান্দিল ও তার ভাই ওয়াসিমের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক ফাঁকে উত্তেজিত হয়ে কান্দিলকে লক্ষ্য করে গুলি করেন ওয়াসিম। এতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার।

বিয়ের পর কান্দিল তার ‘স্বামী’র সঙ্গে প্রায় দেড় বছর থাকেন। পরে তালাক দিয়ে চলে আসেন।

‘আমি কীভাবে ওখানে দেড় বছর ছিলাম, তা শুধু আমিই জানি। ছোটো ছিলাম বলেই বাধ্য হয়েছিলাম। তা না হলে এক মাসও ওই পশুর সঙ্গে থাকতাম না।’

যার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল তাকে কেন পশু বলছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ওই সাক্ষাৎকারে কান্দিল বলেন, ‘আমি সুন্দরী ছিলাম বলেই সে আমাকে অমানবিক অত্যাচার করতো। আমাকে বিশ্বাস করতো না। যখন-তখন আমার গায়ে হাত তুলতো। একে পশু ছাড়া কী বলবো?’

‘এরপর আমার গর্ভে সন্তান আসে। আমি সিদ্ধান্ত নেই পড়ালেখা করবো। কিন্তু ওই পশু সেটা মানতে চাইতো না। আমার পরিবারও আমার পক্ষে ছিল না। তারা চাইতো আমি যেন শ্বশুর বাড়ি থাকি।’

‘ওই পশুটা আমাকে এসিড মারতে চেয়েছিল। সব সময় বলতো আমাকে শেষ করে ফেলবে। পুড়িয়ে দিবে। কিন্তু আমি পুড়িনি। অনেক কষ্ট করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছি। এখন পরিবারকে সাহায্য করছি। পাকিস্তানের নারীদের হয়ে কথা বলছি। কিন্তু কেউ আমাকে কৃতিত্ব দেয়নি।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত