শুভ ধর

২২ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:৫০

আয়নাবাজি, বাংলা সিনেমা এবং আমাদের সিনেমা হল

বাংলা সিনেমা শব্দ দুটির সাথেই চলে আসে আমাদের সিনেমা হলের প্রসঙ্গ। ইদানিং কেউ আর সিনেমা হলে গিয়ে দেখে না। ল্যাপটপ কিংবা মোবাইল স্ক্রিনেই হয়ে যায় বিনোদন উপভোগ। মহিনের ঘোড়াগুলির গৌতম চট্টোপাধ্যায় তাই হয়তো অনেক আগেই বলে গেছেন “পৃথিবীটা নাকি ছোট হতে হতে স্যাটেলাইট আর ক্যাবলের মাঝে ড্রয়িং রুমে রাখা বোকা বাক্সতে বন্দি...।” আমরা আজকাল সিনেমা দেখি মোবাইলে কিংবা কম্পিউটারে কিংবা টিভি পর্দায়।

নতুন কোন বাংলা সিনেমা মুক্তি পাওয়ার পরেই আদতে আমাদের সিনেমা হলগুলোর কথা মনে পড়ে। দৌড় শুরু হয় সিনেমা হলগুলোতে। সপরিবারে কিংবা সবান্ধবে। কোন হলে দেখাবে, কোথার পরিবেশ ভালো, কোন হলের সাউন্ড ভালো সর্বোপরি কোন হল ভালো, কোথায় গিয়ে দেখবো।

“আয়নাবাজি”, নতুন বাংলা সিনেমা। গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে সিনেমা পাড়ায় এখনো আয়নাবাজিময়। ফেসবুক কিংবা ঝড় তোলা চায়ের কাপে বন্ধুদের আড্ডায় এখন মুখরিত বাংলা সিনেমা, আয়নাবাজি। পোস্টারের সামনে সেলফি কিংবা ছবি তোলার সময়টা আমরা আবারো ফিরে পেয়েছি। হিড়িক পড়েছে টিকেট কাউন্টারে। শেষ কবে এমন লাইন ধরে হলে গিয়ে বাংলা সিনেমার টিকেট কেটেছিলেন সেটা শুধু একবার মনে করে দেখুন তো!

আমি এই সিলেটের হলেই শেষ দেখেছিলাম “যুদ্ধশিশু”। তারপর আজ আয়নাবাজি। আমরা সিনেমা পাগল মানুষ। গ্রামের যাত্রাপালা থেকে আজ আয়নাবাজি পর্যন্ত হাউজফুল হল।

সিলেটের কিছু তরুণ চেষ্টা করেছিল এই সিনেমাটা সিলেটে প্রথম দিনই সিলেটের মানুষকে উপহার দিতে; যেহেতু আয়নাবাজির হল লিস্টে সিলেটের কোন হল ছিল না। সেই সব সিনেমাপাগল মানুষ চেয়েছিল- না হোক বিগ স্ক্রিন, প্রোজেক্টরেই সিনেমা দেখাবে। হিমশিম খাচ্ছিলো তারা টিকেট টিকেট শব্দে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র আইনে আটকে যায় সেই প্রচেষ্টা।

২১ সেপ্টেম্বর সিলেটের "নন্দিতা সিনেমা হল"-এ মুক্তি পেলো আয়নাবাজি। গত বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) রাতে সিনেমা হলের সামনেও গিয়ে দেখেছি অনেক তরুণকে "শো শিডিউল" নিয়ে কথাবার্তা বলতে। আর আজ মানুষ লাইন ধরে টিকেট কিনছে। বিশ্বাস হয়? বাংলা সিনেমা তাও সিনেমা হলে মানুষ লাইন ধরে টিকেট কিনে? এইটাও সম্ভব হয়েছে। ৪২৬ সিটের ডিসি হলটা হাউজফুল। টিকেট বিক্রি বন্ধ করা যাচ্ছে না। কিন্তু সিট তো ৪২৬, মানুষ হলের সিঁড়িতে বসে সিনেমা দেখছে। প্রচণ্ড গরম আর ভাঙা সিটে সাথে বাজে সাউন্ড কোয়ালিটি তবু মানুষ দেখছে। বাইরে ততক্ষণে পরের শো এর লাইন শুরু হয়ে গেছে। এই সিনেমার কাছে যেন হলের ভেতরের প্রচণ্ড গরম আর লাইনে ঘণ্টা দাড়িয়ে থাকা যেন নস্যি।

সিলেটের ৯ টা সিনেমা হলের মধ্যে বলতে গেলে বেঁচে আছে শুধু এই একটাই সিনেমা হল। তাও ঘোলা স্ক্রিন আর অস্পষ্ট সাউন্ড। আজ সিনেমা শেষে হল থেকে বের হওয়া মানুষের মনে যেন একটাই হতাশা। না, সিনেমা নিয়ে নয়। হল নিয়ে। একটা ভালো সিনেমা হল চাই।

যখনই কেউ ভালো সিনেমা উপহার দেয় দেশকে তখনই একরাশ কষ্ট এসে ভর করে। আহা, আমাদের নেই কোন ভালো সিনেমা হল, নেই কোন সিনেপ্লেক্স! ভরসা থেকে কখন শিল্পকলা অডিটোরিয়াম কিংবা কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে সিনেমাটা দেখাবে। তবু সিনেমা দেখা তো বাদ দেওয়া যাবে না। তাই ছুটে চলে এই ভাঙা সিট আর গরম চুল্লির সিনেমা হলে।

আক্ষেপ কবে সিলেটের সিনেমা হল প্রাণ ফিরে পাবে। প্রয়োজন হবে না অডিটোরিয়ামের প্রোজেক্টরে সিনেমা দেখা। সারা সপ্তাহ কাজে ক্লান্ত প্রাণ ছুটির দিনে ছুটবে সিনেমা হলে।

  • শুভ ধর : অনলাইন এক্টিভিস্ট

আপনার মন্তব্য

আলোচিত