সিলেটটুডে ডেস্ক

২৯ নভেম্বর, ২০১৬ ১৭:৫৯

সঞ্জীবদার মৃত্যুই দলছুটের থমকে যাওয়ার বড় কারণ: বাপ্পা

দারুণ জনপ্রিয়তা নিয়ে এগিয়ে চলে হুট করে থেমে যাওয়ার নজির পৃথিবীর বহু ব্যান্ডের ক্ষেত্রেই ঘটেছে। এ মুহূর্তে বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘দলছুট’ও কি সেদিকেই এগিয়ে চলছে?

প্রশ্নটির আংশিক উত্তর মিলবে যদি এর সর্বশেষ প্রকাশিত অ্যালবামের দিকে চোখ রাখা হয়। আজ থেকে প্রায় অর্ধযুগ আগে অর্থাৎ ২০১০ সালে ‘আয় আমন্ত্রণ’ নামে একটি অ্যালবাম প্রকাশ করে দলটি।

যদিও শ্রোতাপ্রিয়তা সত্ত্বেও আর কোনো নতুন অ্যালবাম নিয়ে কাজ করেনি দলছুট। উল্টো দলটি চলে গেছে লোকচক্ষুর আড়ালে। ফলে নতুন অ্যালবাম প্রকাশ কিংবা দলের ব্যানারে কনসার্টে অংশগ্রহণ, কোথাও তাদের উপস্থিতি চোখে পড়ছে না।

আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও কেন দলছুটের মতো দলে এমন স্থবিরতা জানতে চাইলে ব্যান্ডটির অন্যতম প্রধান সংগীতশিল্পী বাপ্পা মজুমদারের উত্তর, ‘শ্রোতারা যে গান দলছুটের কাছে প্রত্যাশা করে, সে ধরনের লিরিক তৈরি করতে পারছি না। নতুন কথা, নতুন সুরের গানের অভাব দলছুটের এগিয়ে চলাকে বাধাগ্রস্ত করছে।’

ছন্দে থাকা দলছুট শুরুতেই ধাক্কা খায় সঞ্জীব চৌধুরীর প্রয়াণের পর। মোট কথা, ২০০৭ সালে সঞ্জীবের মৃত্যুর আগে ও পরের দলছুটের কার্যক্রম পুরোপুরিই ভিন্ন। ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠার এক বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে দলছুট বের করে তাদের প্রথম অ্যালবাম ‘আহ্’। এর তিন বছরের মধ্যে ‘হৃদয়পুর’ অ্যালবাম বাজারে আনে তারা। তার পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাদের। ২০০২ সালে বের হয় দলের তৃতীয় অ্যালবাম ‘আকাশচুরি’।

অবশ্য এ অ্যালবাম দলের গতি পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। প্রথমত অ্যালবামটি বাপ্পা মজুমদারকে শ্রোতামহলে ব্যাপক পরিচিত এনে দেয়। এর পর তিনি সলো ক্যারিয়ারের দিকেই বেশি ঝুঁকতে থাকেন। দ্বিতীয়ত. একই সময়ে সঞ্জীব চৌধুরীও অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় দলছুটের গতিতে কিছুটা পিছুটান আসে। অবশ্য এত কিছুর পরও ২০০৭ সালে বাপ্পা-সঞ্জীব প্রকাশ করেন দলের চতুর্থ অ্যালবাম ‘জোছনাবিহার’।

নানা কারণে ব্যক্তির অনুপস্থিতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হলেও ব্যান্ডের ক্ষেত্রে যে কথাটি পুরোপুরি সত্য নয়, তার প্রমাণ দলছুট। ব্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত এমন অনেকেই অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, দলের গুরুত্বপূর্ণ একজন সদস্য, যিনি কিনা দলের নামের মতোই সবার কাছে পরিচিত ও জনপ্রিয়, তার মতো সদস্যের অনুপস্থিতি শক্তিশালী ব্যান্ডকেও ধসিয়ে দিতে পারে। এমন ঘটনাই কি ঘটেছে দলছুট ও সঞ্জীব চৌধুরীর বেলায়?

বিষয়টি নিয়ে বরাবরই প্রায় একই উত্তর বাপ্পার, ‘আমি কিছুতেই সঞ্জীবদার অনুপস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারছি না। তার চলে যাওয়া ছিল দলছুটের জন্য প্রকাণ্ড একটা ধাক্কা। সবচেয়ে বড় কথা, দলছুট ছিল আমার এবং সঞ্জীবদার অ্যাডভেঞ্চার। দুজন মিলেই এটি তৈরি করেছিলাম। দলছুট যত দিন থাকবে তত দিন সঞ্জীবদার অনুপস্থিতি প্রখরভাবে থাকবে। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। সঞ্জীবদার মৃত্যুই দলছুটের থমকে যাওয়ার বড় কারণ।’

নানা কারণে দলছুট থমকে গেলেও বাপ্পা মজুমদার কিন্তু ‘বাপ্পা মজুমদার অ্যান্ড ফ্রেন্ডস’ নামের একটি লাইনআপ দাঁড় করেছেন। যেটির ব্যানারে এরই মধ্যে বেশকিছু গানও প্রকাশ পেয়েছে। এক কথায় দলছুটের চেয়ে এ লাইনআপ নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকছেন তিনি। তাহলে কি বাপ্পার মনোযোগ দলছুট থেকে সরে এসেছে, নাকি অন্য কোনো কারণ আছে?

দলছুটকে নিয়ে কোনো রকম পরিকল্পনা নেই অথচ বাপ্পা মজুমদার অ্যান্ড ফ্রেন্ডস নিয়েই আপনাকে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যাচ্ছে। এ সময়টুকু তো দলছুটের পেছনেও দিতে পারতেন? সরাসরি করা এমন প্রশ্নে খানিকটা দ্বিধা নিয়ে বাপ্পার উত্তর, ‘এ প্রশ্নের উত্তর যতটা সহজ হওয়ার কথা ছিল তা নয়, খুবই জটিল। কাউকে আহত করতে চাই না। ফলে বিষয়টি নিয়ে এর চেয়ে বেশি কিছু বলাও সম্ভব নয়।’

তবে বাপ্পার কথায় একটা জিনিস পরিষ্কার, যে স্বপ্ন নিয়ে তিনি ও সঞ্জীব চৌধুরী দলছুট নিয়ে যাত্রা করেছিলেন, এর ছেদটা হয়েছে সঞ্জীবের মৃত্যুতেই। এখন সত্যিই দেখার পালা সঞ্জীববিহীন দলছুট আর কতটা পথ পাড়ি দিতে পারে। হয়তো সময়ই সেটার মোক্ষম জবাব দেবে।
সূত্র: বণিক বার্তা

আপনার মন্তব্য

আলোচিত