সিলেটটুডে ডেস্ক

৩০ নভেম্বর, ২০১৬ ১৯:১৫

‘১৫ ডিসেম্বর থেকে দেশীয় চ্যানেলে ডাবিং সিরিয়াল চলতে পারবে না’

বিদেশি চ্যানেলে দেশি বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধসহ পাঁচ দফা দাবিতে বুধবার রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করেছেন টেলিভিশন শিল্পী ও কলাকুশলীরা। ‘টেলিভিশন শিল্পী ও কলা-কুশলী সমাবেশ’ ব্যানারে এই সমাবেশের আয়োজন করেছে ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশন (এফটিপিও)।

পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে দেশের বেসরকারি চ্যানেলে বাংলায় ডাব করা বিদেশি সিরিয়াল ও অনুষ্ঠান বন্ধ করা, টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাণ, ক্রয় ও প্রচারে ক্লায়েন্ট বা এজেন্সির ব্যতীত চ্যানেলের অনুষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে হবে, টেলিভিশন শিল্পের সর্বক্ষেত্রে আগাম আয়কর বা এআইটি পুনর্নির্ধারণ করতে হবে, টেলিভিশন শিল্পে বিদেশি শিল্পী ও কলা-কুশলীদের অবৈধভাবে কাজ করা বন্ধ করতে হবে এবং ডাউনলিংক চ্যানেলের মাধ্যমে বিদেশি চ্যানেলে দেশি বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ করতে হবে।


সমাবেশে অভিনেতা ,নির্মাতা জাহিদ হাসান বলেন, চ্যানেল মালিকরা শুধু টাকার কথা চিন্তা করে। ২২ মিনিটের নাটক চালায় ১৬মিনিট। তাও আবার পর্ব করে। যাতে বেশি বিজ্ঞাপন দিতে পারে। বিদেশি সিরিয়াল প্রচার নিয়ে এখন যতই মাতামাতি করুক না কেন, কিছুদিন পর ঠিকই এসব ছেড়ে আবার দেশী নাটকে ফিরে আসতে হবে। মাসি, পিসি, খালা যতই থাকুক, আমাদের মা তো মা’ই।

তৌকীর আহমেদ বলেন, দূর্নীতি এখন শুধু টাকায় সীমাবদ্ধ নেই। নীতর ভেতর ঢুকে গেছে। আমাদের নাটক একসময় ভারতে পর্যন্ত প্রচার হতো। কলকাতায় আমরা হাঁটতে পারতাম না। ভক্তরা এসে ঘিরে ধরতো। এখন কেন এমন হচ্ছে? আমাদের একসময় মাত্র একটি চ্যানেল ছিলো। বিটিভি। আমরা সেটাই দেখতাম। তারপর আস্তে আস্তে বাড়তে বাড়তে এখন তিন ডজন। এতো ছোট একটা দেশে এতো গুলো চ্যানেলের কি দরকার? কোন যোগ্যতায় তারা চ্যানেল করছে? টিভি চ্যানেল এখন ক্ষমতার একটা হাতিয়ার হয়ে গেছে। বড় বড় ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষকতায় তারা চ্যানেল বানাচ্ছে। আর নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করে নিচ্ছে।

শহীদুজ্জামান সেলিম বলেন, একজন শিল্পী দৈনিক বারো ঘন্টা পর্যন্ত কাজ করে। ভালো অভিনয় উপহার দেয়ার জন্য। কিন্তু, চ্যানেলের চাহিদার চাপে পিষ্ট হয়ে একই ধরণের নাটকে সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। এই যেমন মোশাররফ করিম, অপূর্ব এরা নিয়মিত একই ধরণের নাটকে অভিনয় করছে। তারাও এখন উপস্থিত আছে। তাদের সামনেই আমি বলছি, তারাও একই ধরণের নাটকে অভিনয় করে করে ক্লান্ত হয়ে গেছে।  অশুভ হাত আমাদের সংস্কৃতির উপর থাবা বসিয়েছে। কিন্তু, আমরা সেটা ভাঙতে জানি। ক্রিকেটার মেহেদি হাসান মিরাজ যদি কয়েকটি ম্যাচে ভালো খেলে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে বাড়ি পেতে পারে, সৌম্য সরকারের বাবার চাকরিস্থল বদলির ব্যাপারেও যদি প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করতে পারে, তাহলে আমাদের নাটকের   দুরাবস্থা দূরীকরণেও তিনি  উদ্যোগ নেবেন।

চলচ্চিত্র নির্মাতা আমজাদ হোসেন এই আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে নাটকের যে অবস্থা। এর চেয়েও চলচ্চিত্রের অবস্থা আরো খারাপ। এখন অবৈধভাবে যৌথ প্রযোজনার ছবি হচ্ছে। বিশ্বাস করুন,  চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অনেকে না খেয়ে থাকে। আমাদের সব মন্ত্রণালয় কাজ করে, কিন্তু তথ্য মন্ত্রণালয়ই নিরবতা পালন করে। এখন টেলিভিশনে টেলিভিশনে শুধু স্বজনপ্রীতি। বাবা, মা, ভাই, বোন, আত্মীয়স্বজন সব স্বজনদের দখলে চলে গেছে।

জনপ্রিয় অভিনেত্রী চিত্রলেখা গুহ সাবিনা ইয়াসমিনের কালজয়ী গান ‘মা গো আর তোমাকে ঘুম পাড়ানির মাসি হতে দেবো না’ গানটি গেয়ে শোনান।

বিকালে এফটিপিওর আহবায়ক মামুনুর রশীদ বলেন, আজ কোথাও কোনো শুটিং হয়নি। কোনো ক্যামেরা কিংবা লাইট চলেনি। আমরা এভাবেই আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো। আমাদের দাবিগুলোর কিছু দাবি সরকারের সাথে সংশ্লিষ্ট। ১৫ ডিসেম্বরের পর কোনো চ্যানেলে ডাবিং করা সিরিয়াল চলতে পারবে না। যে চ্যানেল চালাবে, সে চ্যানেলের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবো। কোনো চ্যানেল যদি আমাদের শিল্পীদের বিরুদ্ধে কিছু করার চিন্তা করে, তাহলে আমরা সবাই সেই শিল্পীর পাশে একতাবদ্ধ হয়ে দাঁড়াবো।

ভবিষ্যতে যেকোনো প্রয়োজনে এফটিপিওর আহবানে আপনাদের এমন উপস্থিতি আশা করি। যারা আজ এখানে এসেছেন, তারা কেবল মিডিয়াপ্রেমী নয়, তারা দেশপ্রেমিক। তারা সংস্কৃতি প্রেমী।

এদিকে পাঁচ দফা আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে এনটিভি ,আরটিভি এটিন বাংলা ও এটিন নিউজ, বাংলাভিশন, দেশ টিভি ।

একাত্তর টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু মিডিয়া ইউনিটির পক্ষ থেকে আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছে সঙ্গে ছিলেন এটিন বাংলার চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান ।

বিকালে চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ইমপ্রেস টেলিফিল্মের কর্ণধার ফরিদুর রেজা সাগর সমাবেশ মঞ্চে এসে তিনি ঘোষণা দেন, শিল্পীদের এই আন্দোলনের সঙ্গে চ্যানেল আই সম্পূর্ণভাবে একাত্ম।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত