অনলাইন ডেস্ক

২৩ ডিসেম্বর, ২০১৬ ১০:০৫

জন্মের পর পরই ‘সেলিব্রেটি’ তৈমুর!

তৈমুর আলী খান পাতৌদির বাবা সাইফ ও মা কারিনা

ভারতে বলিউডের তারকা দম্পতি সাইফ আলি খান ও কারিনা কাপুর খান তাদের সদ্যোজাত সন্তানের নাম তৈমুর আলী খান পাতৌদি রাখার পর তা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে তুমুল বিতর্কের ঝড় উঠেছে। আর এই ‘বিতর্কিত’ নামের জন্য জন্মের কয়েক ঘণ্টার মাঝেই তৈমুর হয়ে ওঠে তারকাদের তারকা।

মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে ভারতের মুম্বাই শহরের একটি হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করে তৈমুর। সঙ্গে সঙ্গেই বাবা সাইফ ও মা কারিনা একটি লিখিত বিবৃতিতে ছেলের জন্মের খবর সবাইকে জানান। তবে ছেলের নাম রাখা নিয়ে তোপের মুখে পড়েছেন এই দম্পতি।

চতুর্দশ শতাব্দীতে যে মোঙ্গল অভিযানকারী তৈমুর লং ভারত আক্রমণ করে দিল্লিকে ছারখার করে দিয়েছিলেন ও হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছিলেন, তার নামে কেন সাইফ ও কারিনা নিজেদের ছেলের নাম রাখলেন তা নিয়ে তাদের রীতিমতো ট্রোল করা হচ্ছে, তীব্র শ্লেষ ও আক্রমণের মুখেও পড়তে হচ্ছে।

সাইফিনা দম্পতির বিরুদ্ধে অভিযোগ, ‘দুর্ধর্ষ স্বৈরাচারী’ শাসক তৈমুর লংয়ের নামের সঙ্গে মিল রেখে ছেলের নাম রেখেছেন তারা। বর্তমান আফগানিস্তান, ইরান, সিরিয়া, বাগদাদ ও জর্জিয়ার এক বিরাট অংশে সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিলেনন তৈমুর লং।

অপরদিকে, তৈমুর নামটির সঙ্গে ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস ভীষণভাবে জড়িত। তার বংশধর হলো তিন শতাব্দী ধরে ভারতীয় উপমহাদেশ শাসন করা মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবর। অভিযোগ রয়েছে, ১৩৯৮ খ্রিস্টাব্দে দিল্লি দখলের অভিযানে হাজার হাজার ভারতীয়কে হত্যা করেন তৈমুর।

সাইফিনার বিবৃতিতে নবজাতকের নাম ঘোষণার পর আশিস মহারিশি নামের এক ব্যক্তি টুইট বার্তায় বলেছেন, ‘তৈমুর আরবি নাম নয়। এটা তুর্কি ভাষা। এর অর্থ হলো লোহা বা শক্তিশালী কেউ।’

টুইটার ব্যবহারকারীদের অনেকের মন্তব্য– তৈমুর ছিলেন সবচেয়ে বর্বর ও হিংস্র খুনিদের একজন। ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর আক্রমণকারী তিনিই। কীভাবে এমন নাম রাখা হলো? কেউ বিদ্রুপ করে বলেছেন, ‘২০৩৭ সালে কোনও ছেলে প্রেমের প্রস্তাব নিয়ে নিজেকে তৈমুর আলী খান পতৌদি বলে পরিচয় দিলে মেয়েরা আগেভাগে জানিয়ে দেবে আমার প্রেমিক আছে!’

আবার কারও মতে, নবাব মর্যাদাকে একটু বেশিই গুরুত্ব দেন বলে এমন নাম বেছে নিয়েছেন সাইফ ও কারিনা। অনেকে আবার তৈমুর নামের সঙ্গে ওসামা বিন লাদেন ও পাকিস্তানি মিসাইলকে তুলনা করে তাচ্ছিল্য করেছে টুইটারে।

ভারতে টুইটার আর ফেসবুক সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। দুর্ধর্ষ এক ভারত লুন্ঠনকারীর নামে কীভাবে সাইফ ও কারিনা ছেলের নামকরণ করতে পারেন সেই প্রশ্ন উঠতে থাকে অবিরত। কেউ বলেন পাকিস্তানও কিন্তু তাদের ক্ষেপণাস্ত্রের নাম রেখেছে তৈমুর, কেউ আবার মনে করিয়ে দেন মাত্র ১৮ বছর বয়সে তৈমুর লং নিজের মা-র মাথা কেটে ফেলেছিলেন, বাবাকে শেকলে বেঁধে বন্দী করেছিলেন জেলে।

কেউ কেউ আবার বলতে থাকেন, দেশের বুকে সাইফ-কারিনা যেন ছুরি চালিয়ে দিয়েছেন, রাগে তাদের গা জ্বলছে।

পাতৌদির মুসলিম নবাব পরিবারের ছেলে সাইফ বিয়ে করেছেন হিন্দু পাঞ্জাবি ঘরের মেয়ে কারিনাকে। তার বাবা-মা মনসুর আলি খান ও শর্মিলা ঠাকুরও ছিলেন ভিন্ন ধর্মের।

সমাজতত্ত্ববিদ আশিস নন্দী মনে করেন, তৈমুর নামকরণ নিয়ে যে জনবিস্ফোরণ দেখা যাচ্ছে সেটা আসলে ভারতীয় সমাজে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কে অবক্ষয়েরই প্রতিফলন।

"আমার মনে হয় যে এ এক অদ্ভুত বা কিম্ভুতকিমাকার জাতীয়তাবাদ, যা দেখায় যে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ বাড়ছে। এই বালখিল্যদের সমালোচনায় বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয়, কারণ হয়তো দেখবেন অন্য নাম রেখেও আপনি তাদের খুশি করতে পারবেন না। কিছু না কিছু একটা খুঁত তারা বের করবে", বলছেন ড: নন্দী।

কারিনার কাকা ও টুইটারে অত্যন্ত স্পষ্টবক্তা বলে পরিচিত ঋষি কাপুরও এই বিতর্কে মুখ খুলে বলেছেন, "তৈমুর নাম নিয়ে মাথা না-ঘামিয়ে লোকে বরং নিজের চরকায় তেল দিক।"

আলেকজান্ডার বা সিকান্দরও কোনও সাধু ছিলেন না, কিন্তু তাদের নামে দুনিয়ায় যে হাজার হাজার লোক ঘুরে বেড়াচ্ছে সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত