১৬ মে, ২০২০ ২৩:২৫
সাকিব আল হাসান যদি বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রাণপুরুষ হন তাহলে বেন স্টোকস ইংল্যান্ড টিমের এক অসাধারণ যোদ্ধা, যার বুদ্ধিদীপ্ততায় ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড ইতিহাসে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ নামক সোনার হরিণের দেখা পেয়েছিল। অন্যদিকে, বিশ্বকাপে সাকিবের অসাধারণ নৈপুণ্য ম্লান হয়েছিল দলগত ভাবে বাজে ক্রিকেট খেলার জন্য।
বেন স্টোকসের শক্তি যেখানে বড় শট খেলা সেখানে সাকিবের প্রধান শক্তি হল বুদ্ধিমত্তার চমকপ্রদ উপস্থাপন। বিশ্ব ক্রিকেটে অলরাউন্ডারদের এই চরম নিদানকালের মধ্যেও এই দুই তারকা অপার মহিমায় দাপট দেখিয়ে বেড়াচ্ছেন। এই দুই মহাতারকা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাদের চমকপ্রদ নৈপুণ্যের মাধ্যমে নিজেদের দেশের ক্রিকেটর ভাগ্য বদলে ফেলেছেন।
বিজ্ঞাপন
বেন স্টোকস একজন খুবই লড়াকু মানসিকতার খেলোয়াড় যা তাকে ক্রিকেট মাঠে সর্বস্ব নিংড়ে দিতে সাহায্য করে। আর সাকিবের দৃঢ় প্রত্যয়ী মানসিকতাই তাকে একজন বড় মাপের অলরাউন্ডার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে ।
আমরা আজকে এই দুই দুর্দান্ত ক্রিকেটারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পারফরম্যান্স খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে সাকিব এবং স্টোকসের মধ্যে একটি তুলনামূলক চিত্র উপস্থাপন করব।
সাকিব এবং স্টোকসের সাফল্যের সূত্রাবলী
তাদের মধ্যে বিভিন্ন ফরম্যাটের ক্রিকেটের তুলনা করার আগে জেনে নেই তাদের সাফল্যের মূলমন্ত্রগুলো।
বুদ্ধিমত্তার সর্বোত্তম ব্যবহারই সাকিবকে ক্রিকেটার হিসাবে সফলতা এনে দিয়েছে। স্পিন বোলাররা বলকে টার্ন করানোর মাধ্যমেই ব্যাটসম্যানদেরকে পরাস্ত করে থাকেন, যে বলার যত বেশি টার্ন করান সাধারণত তিনিই বোলার হিসেবে বেশি সফল হন। কিন্তু সাকিব ক্রিকেট বলের একজন বড় টার্নার না হওয়া সত্ত্বেও তিনি সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম সেরা একজন বোলার। বৈচিত্র্য ও গতির সর্বোত্তম ব্যবহারই তাকে বোলার হিসেবে সফলতা এনে দিয়েছে। সাধারণত অফস্পিনাররা রক্ষণাত্মক মানসিকতাকে পুঁজি করে বল করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে থাকেন। কিন্তু সাকিব অন্যদের থেকে আলাদা এবং তার আক্রমণাত্মক মানসিকতাই বোলিং এ সাফল্যের ক্ষেত্রে মূল চালিকা শক্তি হিসাবে কাজ করেছে।
ইংরেজিতে একটি কথা আছে ‘সি দ্য বল হিট দ্য বল’- সাকিবের ব্যাটিং দর্শন অনেকটা এই রকম। পেইস এবং স্পিন বোলারদের বিরুদ্ধে তার দৃঢ় কৌশলই তাকে ব্যাটসম্যান হিসাবে সফলতা এনে দিতে সাহায্য করেছে। উপরন্তু, সাম্প্রতিক সময়ে তিনি ব্যাটিং অভূতপূর্ব উন্নতি করেছেন। যার নিদর্শন আমরা ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে দেখতে পেয়েছি।
অন্যদিকে বোলিংয়ে বেন স্টোকসের প্রধান অস্ত্র হচ্ছে রিভার্স সুইং। বল যখন পুরনো হয় তখন তিনি সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয়ে থাকেন। তদুপরি তিনি ধারাবাহিকভাবে ১৪০ কি.মি. গতিতে বল করতে পারেন , যা তার বোলিংকে আরও কার্যকর করতে সাহায্য করে।
বিজ্ঞাপন
ব্যাটসম্যান বেন স্টোকস শুরুর দিকে একটু সময় নিতে পছন্দ করেন। যাতে করে তিনি উইকেট ও বোলারদের সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা পান। উইকেটে থিতু হয়ে গেলে প্রতিপক্ষের জন্য তিনি খুবই বিপদজনক হয়ে ওঠেন। স্টোকসের ব্যাটিংয়ের আরেকটি সবচেয়ে বড় দিক হচ্ছে আক্রমণাত্মক ও রক্ষণাত্মক শৈলীর অপরূপ মিশ্রণ। যা তাকে যেকোনো ধরণের পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সাহায্য করে।
টেস্ট ক্রিকেটে সাকিব না স্টোকস কে সেরা?
টেস্টে ব্যাটিং তুলনামূলক চিত্র
টেস্ট ক্রিকেটে ব্যাটিং গড়ের দিক থেকে সাকিব স্টোকস থেকে কিছুটা এগিয়ে আছেন। যদিও বর্তমান সময়ে স্টোকস টেস্টে ব্যাটিংয়ে যথেষ্ট উন্নতি সাধন করছেন। টেস্ট ক্রিকেটে সাকিব যেখানে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে ব্যাটিং করতে পছন্দ করেন, সেখানে স্টোকস ইনিংসের শুরুর দিকে একটু সময় নিতে পছন্দ করেন এবং পরবর্তীতে খেলার মেজাজ পরিবর্তন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। স্ট্রাইকরেট যার প্রমাণ- সাকিবের ৬২.০৫ এবং বেন স্টোকস ৫৮.৭৪।
সাকিব ৫৬ ম্যাচে ৩৯.৪১ গড়ে ৩৮৬২ রান করেছেন, বেন স্টোকস ৬৩ ম্যাচে ৩৬.৫৪ গড়ে ৪০৫৬ রান করেছেন। আমরা যদি মোট শতকের উপর ভিত্তি করে তুলনা করি তাহলে স্টোকস বেশ ভালভাবে এগিয়ে আছেন, সাকিব তার ক্যারিয়ারে সেখানে ৫টি শতক করেছেন সেখানে স্টোকস করেছেন ৯টি ।
অন্যদিকে অর্ধশতকের ক্ষেত্রে ঠিক উল্টোচিত্র, সাকিব যেখানে করেছেন ২৪টি এবং স্টোকস ২১টি। যার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য হচ্ছে বেন স্টোকসের রূপান্তর হার (Conversion Rate) সাকিব থেকে ভাল। সোজা ভাষায় বলতে গেলে স্টোকস তার ৫০-ঊর্ধ্ব ইনিংসগুলোকে ১০০-তে রূপান্তর করার ক্ষেত্রে পটুতা দেখাচ্ছেন।
বিদেশের মাটিতে ব্যাটিং গড়ের দিক থেকে বিবেচনা করলে সাকিব অল্প ব্যবধানে স্টোকস থেকে এগিয়ে আছেন। চতুর্থ ইনিংসে গড়ের দিক থেকে সাকিব বেশ এগিয়ে আছেন স্টোকস থেকে।
আমরা যদি সাকিবের ক্যারিয়ারের উল্লেখযোগ্য একটা ইনিংসের কথা চিন্তা করি তাহলে বলতে হয় নিউ জিল্যান্ডের সাথে তার ২১৭ রানের অনবদ্য এক ইনিংস, যেখানে তিনি নিউ জিল্যান্ডের মত বিরুদ্ধ জায়গায় শুরু থেকে শেষ অবধি সাবলীল ভাবে ব্যাটিং করেছেন। বেন স্টোকস ২৫৮ রানের একটি দৃষ্টিনন্দন ইনিংস খেলেছিলেন সাউথ আফ্রিকার মাটিতে, যার আদ্যোপান্তই ভরপুর ছিল অসাধারণ সব ক্রিকেট শটে।
টেস্টে বোলিংয়ে তুলনামূলক চিত্র