০৬ নভেম্বর, ২০২২ ২০:৩০
সাকিবের আউট যে শুধু আম্পায়ারিংয়ের মানকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে তা নয়। এই বিতর্কিত সিদ্ধান্তটি আম্পায়ারিং এর পাশাপাশি ডিআরএসকেও নিয়ে এসেছে আতশি কাচের নিচে।
সাদাব খানের বলটি লেগ স্পিন হওয়া পরও কীভাবে স্ট্যাম্পে লাগে?
সাদাব খানের বলটি লেগ স্পিন ছিল। কিন্তু তারপরও হকআইতে গুগলি হিসেবে দেখানো হয়েছে। যদি লেগ স্পিন হিসাবে গণ্য করা হতো তাহলে বলটি লেগ স্ট্যাম্প মিস করার প্রবল সম্ভাবনা ছিল। বিষয়টি হয়ত অনেকেই এক দেখায় মিস করতে পারেন। তবে আউটের রিপ্লেটা কয়েকবার দেখলে বিষয়টা পানির মত পরিষ্কার হয়ে যাবে।
স্নিকোমিটার স্পাইকও সাকিবকে বাঁচাতে ব্যর্থ?
ব্যাটসম্যান ফ্রন্টফুটে থাকলে আম্পায়াররা সংগত কারণেই এলবিডব্লিউ দিতে চান না। কিন্তু সাকিবের ক্ষেত্রে ঘটল উল্টো ঘটনা। সাউথ আফ্রিকান আম্পায়ার হোল্ডস্টোক সাকিবের আউট ঘোষণা দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি সময় নেন। যা থেকে বোঝা যায় তার মনে যথেষ্ট সন্দেহ ছিল। আউট দেওয়ার কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই সাকিব রিভিউ নেন। যা থেকে বুঝা যাচ্ছিল হয়তো বা বলটা সাকিবের ব্যাটে লেগেছে এজন্য তিনি এত আত্মবিশ্বাসী হয়ে তৎক্ষণাৎ রিভিউ নেন এবং রিপ্লে দেখার পর বিষয়টা আরও পরিষ্কার হয়। কিন্তু বিস্ময়করভাবে থার্ড আম্পায়ার বল ব্যাটে লাগার পরও সাকিবকে আউট দিয়ে দেন।
ব্যাট শূন্যের উপর আছে কি না তা বুঝার প্রাথমিক আলামত হচ্ছে ছায়া (ব্যাট যখন শূন্যে থাকে তখন ছায়া পড়ে)। সাকিবের ক্ষেত্রেও ব্যাটের ছায়া তো ছিলই, এছাড়া ব্যাটে বল ছোঁয়ার পর স্নিকো মিটারে বিশাল বড় একটি স্পাইক ধরা পড়ে। দুইয়ে দুইয়ে চার হওয়া পরও থার্ড আম্পায়ার ব্যাটের ছায়া ও স্পাইককে অগ্রাহ্য করে একই সময়ে ব্যাট মাটিতে লেগেছে এই খোঁড়া যুক্তিতে সাকিব আল হাসানকে আউট ঘোষণা করেন।
আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় সাকিব ফ্রন্ট ফুটে ছিলেন এবং ৩ মিটার বাইরে ছিলেন সেটি হক আইয়ের পর্যালোচনাতেও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আউট না দেওয়ার মত যৌক্তিক একাধিক কারণ থাকা সত্ত্বেও অস্পষ্ট খোঁড়া যুক্তির উপর ভিত্তি করে সাকিবকে আউট দেওয়াটা নিছক ভুল হিসাবে হজম করাটা কঠিন। বরং ভুলের ঊর্ধ্বে গিয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাক-ভারত ফাইনাল করানোর নিখুঁত প্রচেষ্টা হিসাবেই মনে হয়। সেক্ষেত্রে ক্রিকেট বাণিজ্যকেই হয়ত আবেগ থেকে বেশি মূল্যায়ন করা হয়েছে।
আকাশ চোপড়া, ব্রেড হগসহ ক্রিকেট পাড়ার নামজাদা অনেক বিশেষজ্ঞরা এক দেখাতেই সেটাকে নটআউট বলে আখ্যায়িত করেছেন।
সাকিব যদি আউট না হতেন তাহলে কী হতো?
ম্যাচের সেই সময়ে সাকিবকে আউট না দিলে যে বাংলাদেশ আজ ২০ ওভার শেষে ১৮০ করে ফেলত তা হয়তো না। কিন্তু এটা বলা যায় দলের সেরা খেলোয়াড়ের এভাবে আউট হওয়া ছিল বাংলাদেশের ভঙুর মিডল অর্ডারের জন্য ছিল বিশাল বড় একটি ধাক্কা। যার প্রভাব ম্যাচের পরবর্তী সময়েও তারা কাটিয়ে ওঠতে পারেনি।
সাকিব আউট হওয়ার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ সৌম্য সরকার ও নাজমুল হোসেন শান্তর পার্টনারশিপে বেশ ভালো একটি প্লাটফর্ম তৈরি করেছিল যেখান থেকে তারা ১৫০ করতে পারত। কিন্তু সাদাব খানের একই ওভারে প্রথমে সৌম্য ও পরে সাকিব আউট হওয়ায় অনভিজ্ঞ মিডল অর্ডার চাপে পড়ে। সেই সুযোগ পাকিস্তান বাংলাদেশের মিডল অর্ডারকে চেপে ধরে, ফলস্বরূপ বাংলাদেশ কাঙ্ক্ষিত স্কোর থেকে অন্তত ২০ রান কম করে।
এটা ঠিক এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ তাদের সেরা ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলতে পারেনি। কিন্তু তারা অন্তত ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করে। ভারত ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচে যদি সঠিকভাবে খেলা পরিচালনা করা হতো তাহলে কে জানে আমরাই হয়তো নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালের লড়াইয়ে নামতাম।
শেষ কথা
সাকিবকে যদি বৈধভাবে আউট দেওয়া হতো তাহলে এই আবেগের বিস্ফোরণও হতো না, তখন হয়ত দলগত ব্যর্থতা মেনে নেওয়া যেত কোন আপত্তি ছাড়াই। এখন সমর্থকদের শুধুই আফসোস ছাড়া করার কিছু নেই।
আপনার মন্তব্য