সিলেটটুডে ডেস্ক

০৪ ডিসেম্বর, ২০১৫ ২৩:০২

কোন পথে ইয়াহু?

ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো চেষ্টাই কাজে দিচ্ছে না ইয়াহুর। গত তিন বছরে সিইও মারিসা মেয়ারের অধিকাংশ চেষ্টাই সফলতার মুখ দেখেনি। এবার তাই মূল ইন্টারনেট ব্যবসাই বিক্রি করে দিতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

এ বিষয়ে পরিচালনা পর্ষদ এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে না গেলেও এমন সম্ভাবনা সময়ের সঙ্গে তীব্র হচ্ছে। ক্রেতা হিসেবে আগ্রহ দেখাচ্ছে গণমাধ্যম, টেলিযোগাযোগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রাইভেট ইকুইটি প্রতিষ্ঠান। মূল ব্যবসা বিক্রি করে দেয়ার পর প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমান সিইও মারিসা মেয়ারের ভবিষ্যত্ কি হবে— তা নিয়েও চলছে বিভিন্ন জল্পনাকল্পনা। বলা হচ্ছে, এটি সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে পরিচালনা পর্ষদের ওপর। খবর ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।

১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ইয়াহুর জন্য সময়টা ভালো যাচ্ছে না। বিভিন্ন সময় উন্নয়নের চেষ্টা অব্যাহত থাকলেও শেষে কোনো ফল পাওয়া যায়নি। অনেকে ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব নেয়া মারিসা মেয়ারকে সময় দেয়ার দাবি জানালেও এখন পরিচালনা পর্ষদ আর বিনিয়োগকারীরা এ যুক্তির পক্ষপাতী নন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মুনাফাসন্ধানী প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে বড় সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠান হিসেবে খ্যাত ইয়াহুর মূল ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যবসাগুলোই বিক্রি করে দেয়া হতে পারে। নিজেদের অবকাঠামো ও সক্ষমতা দিয়ে সুবিধা করতে না পারলেও ভেরাইজন কমিউনিকেশনস, আইএসি/ইন্টারঅ্যাকটিভ করপোরেশনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো ইয়াহুর ব্যবসা কেনার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী। এরই মধ্যে তারা এ বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। এছাড়া ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মূল প্রতিষ্ঠান নিউজ করপোরেশন, ম্যাগাজিন প্রকাশক টাইমস ইনকরপোরেশন ও প্রাইভেট ইকুইটি প্রতিষ্ঠান টিপিজি ক্যাপিটাল ইয়াহুর ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যবসাগুলো কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছে।

ইয়াহু এখন তাদের এ ব্যবসাগুলো বিক্রির বিষয়টি বিবেচনা করছে। ইন্টারনেট কোম্পানি হিসেবে পরিচিত ইয়াহুর মূল ব্যবসা বিক্রি করে দেয়ার পর তাদের কার্যত কোনো অস্তিত্ব থাকবে কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। আর এক্ষেত্রে সিইও মারিসা মেয়ারইবা কি করবেন! অনেকের মতে, অভিজ্ঞ মেয়ারকে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে যোগ দেয়ার বিষয়টি বিবেচনায় আনা হতে পারে। তবে এ বিষয়ে ইয়াহু মুখপাত্র এখনো মুখ খোলেননি।

প্রতি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২০ কোটি মানুষ প্রতিষ্ঠানটির সাইট ভিজিট করছে। শক্তিশালী এ গ্রাহকভিত্তি নতুন ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে। শিগগিরই জরুরি বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনায় বসার কথা ইয়াহুর পরিচালনা পর্ষদের। এখানেই তারা মূল ব্যবসা বিক্রির বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। এছাড়া চীনা প্রতিষ্ঠান আলিবাবায় থাকা শেয়ার বিক্রির বিষয়টিও সামনে আসতে পারে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে গত মাসে জানা যায়, আলিবাবায় থাকা ১৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে নতুন প্রতিষ্ঠান গঠনের পরিকল্পনা করছে ইয়াহু। কিন্তু একে ঘুরে দাঁড়ানোর সর্বোত্তম বিকল্প মনে করেনি প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগকারী স্টারবোর্ড ভ্যালু। সম্প্রতি এক চিঠিতে এ উদ্যোগ থেকে ইয়াহুকে সরে আসার আহ্বান জানায় তারা।

ইয়াহুকে পাঠানো খোলা চিঠিতে স্টারবোর্ড ভ্যালু বিনিয়োগকারীদের মতের বিরুদ্ধে শেয়ার বিক্রি করা হচ্ছে বলে ইয়াহুর সিইও মারিসা মেয়ার ও চেয়ারম্যান মেনার্ড ওয়েবকে দায়ী করেন। ইয়াহুর ভবিষ্যত্ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি বেশ কয়েকবার আলোচনায় বসেছে। কিন্তু স্টারবোর্ড ভ্যালুর তথ্যমতে, আলিবাবায় থাকা প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার বিক্রির বিপরীতেই মত দিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু ইয়াহু কর্তৃপক্ষ এ মতামত উপেক্ষা করেই আলিবাবার শেয়ার বিক্রি করে অ্যাবাকো নামের নতুন প্রতিষ্ঠান চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক বিবৃতিতে স্টারবোর্ডের ম্যানেজিং পার্টনার জেফরি স্মিথ জানান, আলিবাবায় থাকা নিজেদের ১৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে অ্যাবাকো নামের নতুন প্রতিষ্ঠান গঠন ঘুরে দাঁড়ানোর সর্বোত্তম বিকল্প নয়।

উল্লেখ্য, আলিবাবায় থাকা ইয়াহুর ১৫ শতাংশ শেয়ারের মূল্য প্রায় ৩ হাজার কোটি ডলার। তিনি আরো বলেন, ‘আপনি যদি বর্তমান সিদ্ধান্তে অটল থাকেন, তাহলে ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি থাকে বলেই আমরা বিশ্বাস করি। এ সিদ্ধান্ত সংশোধনের এখন কোনো বিকল্প নেই।’

চলতি বছরের শেষ নাগাদ নতুন প্রতিষ্ঠান অ্যাবাকো গঠনের কথা ছিল। কিন্তু মার্কিন কর বিভাগের আপত্তির কারণে বিষয়টি আটকে গেছে। এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য এখনো জানা যায়নি। ইয়াহু এ মামলা নিষ্পত্তিতে আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছে বলে জানা যায়। তাদের মতে, এটি একটি করসাশ্রয়ী পদক্ষেপ। আর নতুন প্রতিষ্ঠান গঠনের মাধ্যমে আলিবাবায় থাকা শেয়ারহোল্ডারদের অংশ তাদের ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব হবে। ইয়াহুর শীর্ষ ৩০ বিনিয়োগকারীর একটি স্টারবোর্ড ভ্যালু এর বিরোধিতা করছে। তাদের মতে, সবচেয়ে উত্তম বিকল্প হচ্ছে কিছু ব্যবসা বিক্রি করে শেয়ার বাইব্যাক ও লভ্যাংশের মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডারদের তাদের অর্থ ফিরিয়ে দেয়া।

অল্প কয়েকদিনের মধ্যে ইয়াহুর পরিচালনা পর্ষদ বিষয়গুলো সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বেশ কয়েকবার আলোচনায় বসার কথা। এ খাতে তাদের সামনে দুটি পথ খোলা থাকছে। হয়তো তাদের আলিবাবার প্রায় ৩ হাজার কোটি ডলারের শেয়ার বিক্রি করে দিতে হবে, অন্যথায় প্রতিষ্ঠানটির মূল ব্যবসাই বিক্রি করে দেয়া লাগবে। কিন্তু আলিবাবায় থাকা প্রায় ৩ হাজার কোটি ডলারের শেয়ার বিক্রি করতে তাদের কর হিসেবেও দিতে হবে বড় অঙ্কের অর্থ। এ পরিস্থিতিতে তাদের মূল ব্যবসা বিক্রিকেই সবচেয়ে যৌক্তিক মনে করা হচ্ছে। অনেকে আবার দুটি ব্যবসা বিক্রির সম্ভাবনাও দেখছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ইয়াহুর বাজারমূল্য এখন হবে প্রায় ৩ হাজার ২০০ কোটি ডলার। মজার বিষয় হচ্ছে, এ বাজারমূল্যের প্রায় পুরোটাই আলিবাবা ও ইয়াহু জাপানের সঙ্গে জড়িত। আর তাদের মূল ইন্টারনেট ব্যবসার বাজারমূল্য অনেক বিনিয়োগকারী শূন্যের চেয়েও কম বলে মনে করেন। ইন্টারনেট কোম্পানিগুলোর মূল আয় আসে বিজ্ঞাপন খাত থেকে। সাম্প্রতিক সময়ে এ খাত থেকেও তাদের আয় কমে এসেছে। গুগল, ফেসবুকের তুলনায় এ খাতে তারা অনেকখানি পিছিয়ে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে তাদের জন্য ঘুরে দাঁড়ানো এখন প্রায় দুঃসাধ্য। সান ট্রাস্টের বিশ্লেষক রবার্ট পেকের মতে, ভেরাইজন, এটিঅ্যান্ডটি, কোমকাস্ট ও ওয়াল্ট ডিজনি এবং নিউজ করপোরেশনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের মতো করে ইয়াহুর ব্যবসা থেকে উপার্জন বাড়াতে আগ্রহী।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আলিবাবায় থাকা ১৫ শতাংশ শেয়ার বেচে ইয়াহু নতুন প্রতিষ্ঠান চালুর পরিকল্পনা করছে। এক্ষেত্রে ইয়াহুকে অন্যরূপে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। আর নতুন প্রতিষ্ঠান চালু করলে সেখানে মারিসা মেয়ারের অবস্থান কি হবে— নাকি তাকে এখানেই চেষ্টার ইতি টানতে হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। পরিচালনা পর্ষদের সাম্প্রতিক আলোচনাই ইয়াহু ও মারিসা মেয়ারকে পথ দেখাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

সূত্র: বণিক বার্তা

আপনার মন্তব্য

আলোচিত