ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

১৪ নভেম্বর, ২০১৫ ১৭:২১

বার বার আক্রান্ত ফ্রান্স!

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তরকালের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হামলায় দেড় শতাধিক লোকের প্রাণহানির ঘটনায় প্যারিসে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে ফ্রান্স সরকার।

ঘটনাকে ফ্রান্সের জন্য ‘নজিরবিহীন’ বলেছেন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ। এর নিন্দা জানিয়েছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন সহ বিশ্ব নেতারা।

একই সঙ্গে দেশের সবগুলো সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে তারা। প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ ঘোষণা করেছেন তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক।

ঘটনার পর উইকিলিকস প্যারিস হামলাকে বছরের পর বছর ধরে সিরিয়া ও লিবিয়ায় চরমপন্থী অস্ত্রশস্ত্র এবং প্রশিক্ষণ দেয়ার ফল হিসেবে উল্লেখ করেছে।

ফ্রান্সের পিয়েরি জানাস্যাক নামের একজন রেডিও উপস্থাপক অভিযোগ করে বলেছেন, সিরিয়ায় হস্তক্ষেপ ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদের ভুল সিদ্ধান্ত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এই হামলার জন্য ফরাসি প্রেসিডেন্ট দায়ী উল্লেখ করে উপস্থাপক পিয়েরি জানাস্যাক বলেন, ‘আমি পরিস্কারভাবেই সবাইকে বলতে শুনেছি যে, এটা প্রেসিডেন্ট ওঁলাদের ভুল। এটা আমাদের প্রেসিডেন্টের ভুল। সিরিয়ায় হস্তক্ষেপ করা ওঁলাদের ঠিক হয়নি।’

এদিকে, ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ দায় স্বীকার না করলেও বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিদের দিকেই ইঙ্গিত করেছেন। ঘটনার পর টুইটারে আইএস সমর্থক অনেককেই হামলা উল্লেখ করে উল্লাস প্রকাশ করতেও দেখা যায়।

এদের অনেকের বিশ্বাস, হামলাটি চালিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিরা। বিশ্বব্যাপী জঙ্গিদের অনলাইনভিত্তিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা সাইট ইন্টালিজেন্স গ্রুপ এ তথ্য জানিয়েছে।

এরমধ্যে জিহাদি জন সমর্থনকারীরা আরবি ও ইংরেজিতে লিখা বিভিন্ন হ্যাশট্যাগে উল্লেখ করেছে ‘#প্যারিস-ওন-ফায়ার’। তবে সর্বাধিক ব্যবহৃত হ্যাশট্যাগ ছিল ‘#ফ্রান্সআন্ডারঅ্যাটাক’। তবে আইএস সমর্থকেরা আরবি হ্যাশট্যাগে লিখেন ‘খিলাফত-স্টেট-স্ট্রাইকস্‌-ফ্রান্স’ এবং ‘ক্রুসেডার-ফ্রান্স-ওনফায়ার’।

এছাড়া, সামনে আরও হামলার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন তারা। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রে হামলা করা হবে বলেও অনেকে টুইট করেন, যাতে মন্তব্য করা হয় , ‘ফরাসিদের রক্ত সুস্বাদু। কিন্তু আমেরিকান রক্ত শ্রেষ্ঠ। আমরা শিগগিরই সেটির স্বাদ নেব’।

ফ্রান্সের ওপর এ হামলাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ভাবার কারণ নাই। সন্ত্রাসী হামলার দীর্ঘ রক্তাক্ত ইতিহাস রয়েছে ফ্রান্সের।

চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি ফ্রান্সের ব্যাঙ্গ পত্রিকা শার্লি হেবদোর কার্যালয়ে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। মুখোশধারী দুই হামলাকারী অফিসে ঢুকে নির্বিচারে গুলি চালালে পত্রিকাটির প্রধান সম্পাদকসহ ১১ জন নিহত হয়।

ওই ঘটনায় একজন পুলিশ সদস্যও নিহত হন। পরে হামলাকারী দুই ভাই চেরিফ ও কাউসি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়।

শার্লি হেবদো ঘটনার আট মাস বাদেই আবার সন্ত্রাসী হামলা থেকে বেঁচে যায় ফ্রান্স। প্যারিসের একটি ট্রেনে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো এক বন্দুকধারী। তবে তিন আমেরিকান, এক বিট্রিশ ও এক ফরাসির নাগরিকের চেষ্টায় সেই দফা বেঁচে যায় প্যারিস।

পরে বন্দুক, ২৭০ রাউন্ড গুলি ও ব্যাপক বিস্ফোরকসহ ২৬ বছর বয়সী এক মরক্কোর নাগরিককে আটক করে পুলিশ। তখন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ বলেছিলেন, ‘এই হামলা সংগঠিত হলে ফ্রান্সের জন্য এটা হতো ভয়াবহ।’

আইয়ুব এল-খাজ্জানিকে আটকের পর কর্তৃপক্ষ জানায়, ওই ঘটনার অল্প সময় নিজের সেলফোনে জিহাদি ভিডিও দেখছিলেন তিনি।

২০১২ সালের মার্চে আরেকটি সন্ত্রাসী হামলা হয় ফ্রান্সে। একটি ইহুদী স্কুলে বন্দুকধারীর হামলায় তিন শিশু, একজন শিক্ষক ও তিন প্যারাসুট বাহিনীর সৈনিক নিতহ হয়। ওই হামলাকারীর জঙ্গি গোষ্ঠী আল-কায়েদার সঙ্গে যোগযোগ ছিলো বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।

২০১৪ ও ২০১৩ সালে আরো দুটি হামলায় এক সেনা ও তিন পুলিশ সদস্য নিহত হয়।

চলতি বছরের গোড়ায় শার্লি হেবদোতে হামলার আগে পত্রিকাটির অফিসে ২০১১ সালেও একবার হামলা হয়েছিলো। ওই বছরের ২ নভেম্বরের হামলায় অবশ্য কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

১৯৯৫ সালের ২৫ জুলাই প্যারিসের পাতাল রেলে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। তখন বোমা হামলায় আট জন নিহতের পাশাপাশি দেড় শতাধিক মানুষ আহত হয়। ওই হামলা আলজেরিয়ার ‘আর্ম ইসলামিক গ্রুপ’ চালায় বলে অভিযোগ আছে।

১৯৭০ সালে এক সন্ত্রাসী হামলায় বহু মানুষ আহত হয়। আর ১৯৮০ সালে প্যারিসের অরলি বিমানবন্দরে এক বোমা হামলায় নিহত হয় আট জন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্রান্সে প্রথম সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে ১৯৬১ সালে। প্যারিসের স্টার্সবার্গে একটি ট্রেনে বোমা হামলায় ২৮ জন নিহত হয়।

উল্লেখ্য, শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে দফায় দফায় বোমা হামলা্র ঘটনায় দেড় শতাধিক নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ফ্র্যান্স পুলিশ। প্যারিস শহরের কয়েকটি এলাকা এবং স্টেডিয়ামে প্রায় একই সময়ে বোমা হামলা চালানো হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত