সিলেটটুডে ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

১১ মে, ২০১৬ ০৯:৫৩

নিজামীর ফাঁসির সংবাদে প্রচারে বিশ্বমিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থান

ইতিহাসের দায়মুক্তির ক্ষেত্রে আরও অনেক দূর এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। মঙ্গলবার (১০ মে) দিনগত রাত ১২টা ১০ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের মাধ্যমে এই দায়মুক্তির পথ সুগম হয়েছে।

নিজামীর ফাঁসির রায়কে ঘিরে দিনভরই দেশীয় সংবাদমাধ্যম ছিল দারুণ তৎপর। প্রতিটি মুহূর্তে ফাঁসির প্রস্তুতি, কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম ও সবশেষে ফাঁসির খবর দেশবাসীকে জানিয়েছে তারা। এ নিয়ে তৎপর ছিল আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমও।

ফাঁসি কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই খবরটি স্ক্রল দিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। ব্রেকিং নিউজ আকারে প্রতিবেদন করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি, রয়টার্স, ফ্রান্সভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এএফপি, পাকিস্তানভিত্তিক ডন অনলাইন, জিও টিভি ইত্যাদি সংবাদমাধ্যম।

এছাড়া তৎক্ষণাৎ গুরুত্বের সঙ্গে খবরটি প্রচার করেছে যুক্তরাষ্ট্রের এপি, ওয়াশিংটন পোস্ট, নিউইয়র্ক টাইমস, ইয়াহু নিউজ, যুক্তরাজ্যের গার্ডিয়ান, ডেইলি মেইল, জার্মানির ডয়েচে ভেলে, ভারতের এনডিটিভি, দ্য হিন্দু, ওয়ানইন্ডিয়া, ফিলিপাইনের ৠাপলার.কম, ইসরায়েলের জেরুসালেম পোস্ট, লেবাননের ডেইলি স্টার, ফ্রান্সের ফ্রান্সটোয়েন্টিফোর.কম, পাকিস্তানের পাকিস্তান টুডে প্রভৃতি সংবাদমাধ্যম।

তবে, এ খবর প্রচারে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ করেছে তাদের তৈরি প্রতিবেদনই। বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যমই নিজামীর যুদ্ধাপরাধী পরিচয়ের চেয়ে ‘ইসলামী দলের নেতা’ ‘বিরোধী নেতা’ ‘ইসলামী নেতা’ পরিচয় দিতে দায়বদ্ধতা দেখিয়েছে যেন। প্রতিবেদনগুলোতে নিজামীর যুদ্ধাপরাধের কোনো কোনো বর্ণনা না থাকলেও ছিল ট্রাইব্যুনাল ও রায়কে ঘিরে কথিত ‘অভিযোগ’র ফিরিস্তি।

‘বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াত-ই-ইসলামীর নেতাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হলো’ শিরোনামে স্ক্রল দেওয়ার কিছুক্ষণ পর আল জাজিরা তাদের প্রধান খবর হিসেবে প্রচার করতে থাকে এ খবরটি।

স্ক্রলকেই শিরোনাম বানিয়ে এ খবরে বলা হয়, ‘১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধ সংগঠিত করার দায়ে নিষিদ্ধঘোষিত জামায়াত-ই-ইসলামীর প্রধান মতিউর রহমান নিজামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে বাংলাদেশ।’

নিজামীর ফাঁসির রায় কার্যকর উদযাপন করতে শত শত মানুষ রাস্তায় নেমেছে বলেও খবরে উল্লেখ করে আল জাজিরা।

যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি হয়েছে বললেও আল জাজিরার সংবাদে ছিল না নিজামীর অপকর্মের কোনো বর্ণনা। বরং বেশিরভাগজুড়েই ছিল তাকে দণ্ড দেওয়া আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালকে ঘিরে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কথিত ‘অভিযোগ’।

ব্রেকিং নিউজ আকারে প্রথমে প্রকাশের পর এখন এ খবরটিকে প্রধান খবর হিসেবে প্রচার করছে বিবিসি অনলাইন। তবে, যুদ্ধাপরাধের দায়ে নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলেও সংবাদমাধ্যমটির শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘বাংলাদেশে শীর্ষ ইসলামী নেতাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে’।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার সবচেয়ে নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখা বিবিসির বিতর্কিত এ শিরোনামের খবরে বলা হয়েছে, ‘১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাধীনতাযুদ্ধে অপরাধের দায়ে বাংলাদেশে এক ইসলামী নেতাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে।... তিনি গণহত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন।’

বিবিসিতেও নিজামীর যুদ্ধাপরাধের কোনো বর্ণনা ছিল না। তারা কেবল প্রচার করতে চেয়েছে ট্রাইব্যুনাল ও বিচারকে ঘিরে কথিত ‘বিতর্ক’।

গুরুত্ব দিয়ে এপির প্রকাশ করা এ সংক্রান্ত সংবাদের শিরোনাম করা হয়, ‘বাংলাদেশে ইসলামী দলের নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর’। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বরাত দিয়ে করা এ প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় ইসলামী দলের প্রধানকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে।’

এপির বরাত দিয়ে প্রায় একই ধরনের খবর প্রচার করে ওয়াশিংটন পোস্টও।

নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত খবরের শিরোনামে ‘যুদ্ধাপরাধী’ পরিচয় আড়াল করে লেখা হয়েছে ‘বাংলাদেশে বিরোধী নেতার ফাঁসিতে সহিংসতার আশঙ্কা’।

খবরে বলা হয়,  ‘১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাধীনতাযুদ্ধে গণহত্যার অপরাধে বাংলাদেশে এক জ্যেষ্ঠ বিরোধী নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় সহিংসতার আশঙ্কা করছে স্থানীয় প্রশাসন। মতিউর রহমান নিজামী নামে বিরোধী ওই নেতা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী দল জামায়াত-ই-ইসলামীর নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন।’

এতেও নিজামীর অপকর্ম আড়াল করে গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে বিচার প্রক্রিয়াকে ঘিরে কথিত বিতর্ক ও অভিযোগগুলো।

এএফপির এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনটির শিরোনাম করা হয়, ‘যুদ্ধাপরাধের দায়ে বাংলাদেশে শীর্ষ ইসলামী নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর’।

যুদ্ধাপরাধের দায়ে সবচেয়ে বড় ইসলামী দলের নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর জানিয়ে প্রতিবেদনটিতে অদ্ভূতভাবে দাবি করা হয়, ‘এই পদক্ষেপ মুসলিম-প্রধান অস্থিতিশীল দেশটিতে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।’

পাকিস্তানের ডন অলাইন এই খবর এএফপির বরাত দিয়ে প্রচার করলেও শিরোনাম করেছে তাদের নিজেদের মতো। শিরোনামে শীর্ষ জামায়াত নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের কথা বলা হলেও তার অপরাধকে কোটেশন করে লেখা হয়েছে, ‘১৯৭১ এর যুদ্ধাপরাধের জন্য’।

তবে, প্রতিবেদনের শুরুটি ঠিক এএফপির মতোই করা হয়।

এছাড়া, অন্য শীর্ষ ও আলোচিত সংবাদমাধ্যমগুলো এ সংক্রান্ত খবর প্রচারের ক্ষেত্রে বরাত দিয়েছে এপি, এএফপি, বিবিসি ও আল জাজিরার মতো শীর্ষ সংবাদমাধ্যমগুলোকেই। সে হিসেবে স্বভাবতই তারাও নিজামীর যুদ্ধাপরাধের চেয়ে বেশিরভাগ ফলাও করে প্রচার করতে চেয়েছে ট্রাইব্যুনাল ও বিচারপ্রক্রিয়াকে ঘিরে কথিত অভিযোগগুলো।

সূত্র: বাংলানিউজ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত