আন্তর্জাতিক ডেস্ক

০৪ জুন, ২০১৬ ১৬:২৭

সাম্প্রদায়িকতা, বর্ণবাদের বিরুদ্ধেও সোচ্চার ছিলেন মোহাম্মদ আলী

তিনি ছিলেন সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী। বর্ণবাদ ও যুদ্ধবাজির বিরুদ্ধেও বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। মানবতার পক্ষে নিবেদিতপ্রাণ একজন কর্মী। মানুষের জয় গান গেয়েছেন চিরকাল। মার্কিন নাগরিক হয়েও খোদ মার্কিন যুদ্ধবাজির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। সৃষ্টি করেছিলেন এক ঐতিহাসিকতা। তিনি সর্বকালের অন্যতম সেরা ক্রীড়াবিদ তিনবারের হ্যাভিওয়েটের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন কিংবদন্তি বক্সার মোহাম্মদ আলী।

তখন ষাটের দশক। মানবতার আর্তনাদ উপেক্ষা করে ভিয়েতনামে চলছে মার্কিন আগ্রাসন। ২৯, এপ্রিল ১৯৬৭। ঐদিন মার্কিন সেনাবাহিনী অন্য ১১ জন কৃষ্ণাঙ্গের সঙ্গে আলীকেও নিয়ে যাওয়া হয় টেক্সাসের পুরনো এক পোস্ট অফিসে। মার্কিন আইনের আওতায় তাদের বাধ্যতামূলক সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়। সেখানকার একটি কক্ষে তাদের ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য শপথ পড়তে বাধ্য করার চেষ্টা চলে। কিন্তু মোহাম্মদ আলী শপথ নিতে অস্বীকৃতি জানান। একজন সেনা কর্মকর্তা তার কাছে এর কারণ জানতে চান। আলী চুপ থাকেন। এরপর তাকে কক্ষের বাইরে নিয়ে গিয়ে হুমকি দেওয়া হয়।

দ্বিতীয়বার কক্ষে ফিরেও শপথ নিতে অস্বীকৃতি জানান আলী। পরে তিনি এর প্রতিক্রিয়ায় একটি লিখিত বিবৃতিও দেন।

আরও পড়ুন- মোহাম্মদ আলীকে ঘিরে আমার স্মৃতি

এরপর একদিকে আলীর বিরুদ্ধে নেওয়া মার্কিন সরকারের অবস্থানের বিপরীতে প্রতিবাদ চলতে থাকে। অন্যদিকে একই সময়ে আলীর বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া শুরুর কথা জানায় মার্কিন বিচার বিভাগ। সংক্ষিপ্ত বিচার প্রক্রিয়া শেষে ২০ জুন ১৯৬৭ সালের সেই কলঙ্কিত বিচারে আলীকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি ১০ হাজার ডলার জরিমানা করে।

বিশ্বজুড়ে প্রবল প্রতিবাদের মুখে তিন বছর পর মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তুলে নেওয়া হয়। এরপর আলী যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বিভিন্ন কলেজে ভ্রমণ করেন এবং তখনকার বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা নিয়ে তাদের সাথে কথা বলেন।
ভিয়েতনাম যুদ্ধে যোগ না দেওয়ার কারণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে আলী সে সময় জানান ‘কেন আমাকে বলা হচ্ছে ইউনিফর্ম পরে দেশ থেকে ১০ হাজার মাইল দূরে গিয়ে ভিয়েতনামের অশ্বেতাঙ্গ মানুষদের ওপর বোমা আর বুলেট নিক্ষেপ করতে? ভিয়েতনামের মানুষের সঙ্গে আমার তো কোনও ঝগড়া নেই। কেবল শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য বজায় রাখার জন্য ১০ হাজার মাইল দূরের কোনও দেশে গিয়ে মানুষের ওপর অত্যাচার করা, খুন করা, বোমা ফেলার কাজে যুক্ত হব না আমি। পৃথিবীর বুকে এইসব অবিচার বন্ধ হওয়া উচিত। আমি জানি, এই কথা বললে আমার মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হতে পারে। তারপরও এ কথা আমি বলেছি এবং বারংবার বলে যাব। আমি বলবই যে, এখানেই (যুক্তরাষ্ট্রে) রয়েছেন আমাদের (মানবতার) শত্রুরা। যারা নিজেদের অধিকার ও স্বাধীনতা আদায়ের জন্য লড়াই করছে তাদেরকে (ভিয়েতনামের মানুষদের) দাসে পরিণত করার একটি মাধ্যম হয়ে আমি আমার ধর্ম, আমার মানুষ এবং আমার নিজের মর্যাদাহানি করতে পারব না।’

উল্লেখ্য,সর্বকালের অন্যতম সেরা ক্রীড়াবিদ তিনবারের হ্যাভিওয়েটের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন কিংবদন্তি বক্সার মোহাম্মদ আলী মৃত্যুবরণ করেছেন।  

৭৪ বছর বয়সে শুক্রবার (৩ জুন) শেষ রাতের দিকে অ্যারিজোনার ফোনিক্স এরিনা হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মোহাম্মদ আলি। তার পরিবারের মুখপাত্র মৃত্যুর সংবাদটি নিশ্চিত করেন এনবিসি নিউজকে। জটিল শারীরিক অবস্থা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত