অনলাইন প্রতিবেদক

০৮ জুলাই, ২০১৬ ২১:৫৮

‘অবিন্তা ও ফারাজ, তোমরা আমার আলোকবর্তিকা’

ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ে অবীন্তা ও ফারাজকে স্মরণ

১ জুলাই (শুক্রবার) ঢাকার গুলশানে জঙ্গি হামলায় নিহত ফারাজ হোসেন ও অবিন্তা কবীর ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ফারাজ ও অবিন্তাকে গত বৃহস্পতিবার স্মরণ করেছে ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়। এদিন বন্ধু, সহপাঠী, শিক্ষকসহ পরিচিতরা ফারাজ ও অবিন্তার প্রতিকৃতিতে ফুলের শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করেন।


বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যানন চ্যাপেলে একত্রিত হয়েছিলেন ফারাজ ও অবিন্তার প্রায় ২০০ শুভাকাঙ্খী। তখন কেউ বলেন ফারাজ ও অবিন্তা সম্পর্কে, কেউবা বন্ধুর স্মৃতি রোমন্থন করেন, প্রার্থনা করা হয় তাদের বিদেহি আত্মার প্রতি।

ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, অবিন্তা কবীর এ বছর ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অক্সফোর্ড কলেজে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। আর ফারাজ বিশ্ববিদ্যালয়টির গইজুয়েটা বিজনেস স্কুলের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং অক্সফোর্ড কলেজ থেকে পাশ করেছিলেন তিনি। ঢাকার গুলশানে হামলার সময় দুজনেই পরিবারের সাথে দেখা করতে বাংলাদেশে গিয়েছিলেন এবং তাদের আরেক বন্ধু ভারতীয় তারিশি জৈন এর সাথে দেখা করতে সেদিন শুক্রবার গুলশানের হোলি আর্টিসান বেকারিতে যান। এ হামলায় তারিশি জৈনও মারা যান।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ফারাজ ও অবিন্তা, দুজনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অক্সফোর্ড কলেজের ‘স্টুডেন্ট অ্যাকটিভিটিজ কমিটি’র নেতৃত্বশীল দায়িত্বে ছিলেন, এবং ক্যাম্পাসের বিভিন্ন আয়োজনে তারা সবসময়ই ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছিলেন, সাথে পেয়েছিলেন সবার উদাত্ত সহযোগিতা।

বৃহস্পতিবার ক্যানন চ্যাপেলে তাদের স্মরণে আয়োজিত সমাবেশে একই কমিটির আরেক সদস্য চেজ জ্যাকসন একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তিনি বলেন, “কারো যদি পরামর্শের প্রয়োজন হতো, তবে সে এক মুহূর্ত না ভেবে যেত অবিন্তা কবীরের কাছে, এমনই ছিল তার ব্যক্তিত্ব। আর ফারাজের হৃদয় ছিল যে কোন সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেক বড়, সবাইকে সে তার চমৎকার হাসি দিয়েই বরণ করে নিতে জানতো”।

এ সময় প্রায় সবকটি ধর্মীয় রীতিতেই ফারাজ ও অবীন্তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয়। এ সময় বক্তারা ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি রাগ বা ভয় প্রতিহত করার এবং সবাইকে ভালোবেসে আলিঙ্গণ করার উদাত্ত আহবান জানান।

ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা আরেক বাংলাদেশী শিক্ষার্থী রিফাত মুরসালিন বলেন, “ফারাজ ও অন্যান্যদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য হলেও এরকম পরিস্থিতিতে ভয় পাওয়া চলবে না। অন্যকে ভয় পাওয়া, আত্মসমর্পণ, অপশক্তির কাছে হার মানা”।

একই বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সালমা সোলায়মান সমাবেশে ফারাজ ও অবীন্তার স্মরণে হান্না সেনেশের একটি কবিতা পাঠ করেন। ফারাজ ও অবীন্তার পুরাতন এ বন্ধু আবেগতাড়িত হয়ে তার সদ্যপ্রয়াত বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলেন, “অবীন্তা ও ফারাজ, তোমরা আমার আলোকবর্তিতা। তোমাদের মত ধৈর্য্যশীল, ত্যাগী ও হৃদয়বান হতে আমি আপ্রাণ চেষ্টা করবো”।

এ সমাবেশে অবীন্তা ও ফারাজ ছাড়াও গুলশান হামলায় নিহত সবার প্রতি শোক প্রকাশ করা হয়। হামলায় নিহত সবার স্মরণে ফুলদানিতে রাখা হয় সাদা জারবারা ডেইজি ফুল এবং অবীন্তা ও ফারাজের জন্য হলুদ ডেইজি।

গত ১ জুলাই শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকার গুলশানের হোলি আর্টিসান বেকারিতে হামলায় চালায় জঙ্গিরা। এ সময় জঙ্গিদের হাতে ২০ জিম্মি ছাড়াও ২জন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। পরদিন শুক্রবার সকালে জিম্মি উদ্ধারে পরিচালিত কমান্ডো অপারেশনের সময় হত্যা করা হয় ৬ জঙ্গিকে। এ হামলার দায় স্বীকার করেছে আন্তর্জাতিক ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আইএস।

সূত্র: অ্যাসোসিয়েট প্রেস

আপনার মন্তব্য

আলোচিত