সিলেটটুডে ডেস্ক

২৪ নভেম্বর, ২০১৬ ০১:৪৩

রোহিঙ্গা সমস্যায় বাংলাদেশের উদ্বেগ

মিয়ানমার সরকার কর্তৃক রোহিঙ্গাদের প্রতি নিপীড়নের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশমুখী ঢলে সীমান্তে নতুন সঙ্কট সৃষ্টি হওয়ায় ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ।

বুধবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে রাষ্ট্রদূত মিউ মিন্ট থান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এসে অতিরিক্ত সচিব (দ্বিপক্ষীয় ও কনস‌্যুলার) কামরুল আহসানের সঙ্গে দেখা করেন। কামরুল আহসান তখন বাংলাদেশের উদ্বেগের কথা মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে জানান, একই সঙ্গে সেনা অভিযানের সময় নির্বিচারে হত‌্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্তের যে দাবি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জানিয়েছে, তাতে সাড়া দিতেও মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

কামরুল আহসান পরে সাংবাদিকদের বলেন, যে পরিস্থিতি চলছে তা নিয়ে ‘বাংলাদেশের উদ্বেগের কথা’ মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে জানানো হয়েছে। বাংলাদেশে আসা মিয়ানমারের শরণার্থীরা যাতে ফিরে যেতে পারেন, সেজন্য পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে আহ্বান জানানো হয়েছে।

গত ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের তিনটি সীমান্ত পোস্টে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের’ হামলায় সেদেশের নয় সীমান্ত পুলিশের মৃত্যুর পর আশপাশের এলাকাগুলোয় ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়। রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা-অধ্যুষিত জেলাগুলোয় শুরু হয় সেনাবাহিনীর অভিযান।

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, সেনাবাহিনীর অভিযানে রাখাইন প্রদেশে ১২শ’র বেশি ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ সহিংসতায় ৮৬ জনের মৃত‌্যুর খবর মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করলেও নিহতদের মধ‌্যে ৬৯ জনকে সন্দেহভাজন বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে দাবি করেছে তারা। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, নিহতের সংখ‌্যা আরও অনেক বেশি।

মিয়ানমারে দমন অভিযানের মুখে পালাতে থাকা রোহিঙ্গাদের অনেকে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছেন। এ প্রেক্ষাপটে সীমান্তে বাড়তি বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। গত কয়েক দিনে কয়েকশ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর কথা জানিয়েছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী। এ বিষয়ে দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ‌্যে বৈঠকও হয়েছে।

তিন দশক ধরে ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গার ভরণপোষণ করে আসছে বাংলাদেশ, এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার নতুন করে শরণার্থী নিতে নারাজ। বারবার আহ্বান সত্ত্বেও আগের শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়ার কোনো উদ‌্যোগও নিচ্ছে না মিয়ানমার সরকার। মিয়ানমারের অভ‌্যন্তরীণ সঙ্কট থেকে উদ্ভূত এই শরণার্থী সমস‌্যা সমাধানে মিয়ানমার সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ।

বুধবার রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাতের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ক্রম অবনতির দিকে যেতে থাকা রাখাইন রাজ‌্যে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর অভিযানে যে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এবং তার যে প্রভাব বাংলাদেশের ওপর পড়ছে- সে বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের গভীর উদ্বেগের কথা রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছেন কামরুল আহসান।

বিবৃতিতে বলা হয়, অনুপ্রবেশ বন্ধে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের আন্তরিক চেষ্টার পরও নারী-শিশুসহ বিপদগ্রস্থ হাজারো মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে আসছে। আরও বহু মানুষ সীমান্তের ওপারে জড়ো হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

অতিরিক্ত সচিব কামরুল আহসান অনুপ্রবেশ বন্ধে মিয়ানমারকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান। মিয়ানমারের সংবাদমাধ‌্যমে তাদের দেশের ঘটনাপ্রবাহে বাংলাদেশকে জড়ানোর চেষ্টারও প্রতিবাদ জানান তিনি।

বিবৃতিতে বলা হয়, “রাখাইন রাজ‌্যে সেনা অভিযানের সময় নির্বিচারে হত‌্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্তের যে দাবি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জানিয়েছে, তাতে সাড়া দিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন কামরুল আহসান।

সেই সঙ্গে রাখাইন রাজ‌্যের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে দ্রুত উদ‌্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের অতিরিক্ত সচিব, যাতে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসা মিয়ানমারের নাগরিকরা নির্ভয়ে, নিরাপদে এবং আত্মসম্মানের সঙ্গে নিজেদের গ্রামে গিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন।

এদিকে, জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার আহ্বান উপেক্ষা করে মিয়ানমারে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের ঢুকতে না দিতে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানকে সমর্থন করছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম‌্যান কাজী রিয়াজুল হক।

গাজীপুরে বুধবার এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম‌্যান বলেন, “দেশের মানুষকে ক্ষতি করে বিশ্বমানবতা দেখানো সমীচীন হবে না। আমার প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে, আমার দেশের মানুষের মানবাধিকার সুরক্ষা করা।”

মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম‌্যান রিয়াজুল বলেন, “নতুন মানুষ নিয়ে আমাদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় এমন কোনো কাজ করতে পারি না। আমার দেশের মানুষের জন্য যেটা মঙ্গলজনক হবে, যেটা কল্যাণকর হবে, আমরা সেটার পক্ষেই যাব।

“রোহিঙ্গারা এদেশে এসে বিভিন্ন ক্রাইম করছে। বাংলাদেশ থেকে পাসপোর্ট করে নিয়ে বিদেশে গিয়েও তারা ক্রাইম করে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে।”

রিয়াজুল আরও বলেন, “আপনারা জানেন মিয়ানমার থেকে পার্বত্য জেলাগুলো দিয়ে একটা রুট আছে, যেখান দিয়ে অস্ত্র যেমন আসে, ইয়াবাও আসে। এ বিষয়ে আমরা যদি স্ট্রিক না হই, তাহলে এটা বাংলাদেশকে শেষ করে দেবে।

“এমনিতেই ইয়াবার ভয়ে আমরা এখন আতঙ্কিত। সেই কারণে এত বড় রিস্ক তো আমরা নিতে পারি না। কাকে ঢুকতে দেব? সঙ্গে করে অস্ত্র নিয়ে আসবে না, ইয়াবা নিয়ে আসবে না, এটা তো বলা যায় না।”

গণতন্ত্রের পথেখ যাত্রা করা মিয়ানমারে অং সান সুচির সমালোচনা করে মানবাধিকার চেয়ারম্যান বলেন, “তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। অথচ উনি ক্ষমতায় আসার পর মানুষের ওপর নির্যাতন হচ্ছে।”

আপনার মন্তব্য

আলোচিত