সিলেটটুডে ডেস্ক

১৮ এপ্রিল, ২০১৭ ০৯:৫১

তুরস্কে ভোট বাতিল চায় এরদোয়ানবিরোধীরা

তুরস্কে প্রেসিডেন্ট রিজেপ তায়িপ এরদোয়ানের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সংবিধান সংস্কার প্রশ্নে গণভোটে ত্রুটি-বিচ্যুতি এবং অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভোটের ফল বাতিলের দাবি জানিয়েছে দেশটির প্রধান বিরোধীদল।

রোববারের এ গণভোটে এরদোয়ান খুব কম ভোটের ব্যবধানে হ্যাঁ ভোটে জয়ী হওয়ায় দেশে তীব্র বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। হ্যাঁ ভোটের জয়ে উদ্বিগ্ন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারাও।

গণভোটের অনানুষ্ঠানিক ফলে ‘হ্যাঁ’ ৫১ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ‘না’ভোট পড়েছে ৪৮ দশমিক ৬ শতাংশ। অর্থাৎ ভোটে জয়-পরাজয়ের ব্যবধান মাত্র দুই শতাংশের সামান্য বেশি। যদিও দেশের সবচেয়ে বড় তিন নগর রাজধানী আঙ্কারা, ইস্তাম্বুল ও ইজমিরে ‘না’ ভোট বেশি পড়েছে। আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা হওয়ার কথা রয়েছে ১২ দিনের মধ্যে।

কিন্তু তার আগেই বিরোধীরা ভোটে অনিয়মের অভিযোগ তোলার পরও তুরস্কের নির্বাচন কর্তৃপক্ষ এ ভোট সুষ্ঠু হয়েছে বলেই ঘোষণা করেছে। তুরস্কের দুটো বৃহত্তম বিরোধী দলই রোববারের ভোটের ফলকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেছে এ ভোট অনেক বেশি ত্রুটিপূর্ণ হয়েছে।

কুর্দি-পন্থি বিরোধী দল পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি সিল না মারা ব্যালটপেপার নিয়ে অভিযোগ করেছে। সিলবিহীন ব্যালট পেপার ভোট গণনায় বৈধ বলে গৃহীত হওয়ায় প্রায় ৩০ লাখ ভোট প্রভাবিত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তারা। এ ভোটার সংখ্যা এরদোয়ান জয়ী হতে যে ভোট পেয়েছেন তার দ্বিগুণেরও বেশি।

ওদিকে, তুরস্কের প্রধান ধর্মনিরপেক্ষ বিরোধী দল পিপলস রিপাবলিকান পার্টি বলেছে, অনিয়মের কারণে কি পরিমাণ ভোট ওলট-পালট হয়েছে এ বিষয়ে তারা এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি। প্রয়োজনে এ বিষয়ে দলটি তুরস্কের সাংবিধানিক আদালত যাবে বলেও জানায়।

দলটির উপ-পার্টি চেয়ারম্যান বুলেন্ত তেজকান বলেছেন, “একারণেই ভোটের বৈধতা নিয়ে বিতর্কের অবসান ঘটানো এবং জনগণের আইনগত শঙ্কা দূর করার জন্য একমাত্র যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আছে তা হচ্ছে ভোট বাতিল করা।”

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ জয়যুক্ত হওয়ায় প্রেসিডেন্ট রিজেপ তায়িপ এরদোয়ান সর্বময় ক্ষমতা পাওয়ার পাশপাশি ২০২৯ সাল পর্যন্ত তার ক্ষমতায় থাকার পথ তৈরি হয়েছে। সংবিধান সংস্কার হলে আধুনিক তুরস্কে সংসদীয় গণতন্ত্রের বদলে পুরোমাত্রায় প্রেসিডেন্টের নির্বাহী শাসন শুরু করা যাবে। বাতিল হয়ে যাবে প্রধানমন্ত্রীর পদ এবং সমস্ত ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের হাতে কেন্দ্রীভূত হবে।

এরদোয়ানের হাতে এ বিপুল ক্ষমতা তুলে দেওয়ার জন্যই গণভোটের সমালোচনায় সরব হয়েছেন ইউরোপীয় নেতারা। ওদিকে, ভোটের আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, তুরস্কের গণভোট নিয়ে প্রচারটাই অসম ছিল। ‘অর্গানাইজেশন ফর দ্য সিকিউরিটি এন্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপ (ওএসসিই) বলেছে, পদ্ধতিগত পরিবর্তন অনেক দেরীতে হওয়ায় ভোট পণ্ড হয়েছে।

ভোটের দিন ভালভাবে কেটেছে বলে জানালেও ওএসসিই ভোটের প্রচারের সমালোচনা করেছে। তারা বলছে, গণভোটের প্রচারে দুইশিবির সমান সুযোগ পায়নি। প্রেসিডেন্ট এবং কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকার ফলে প্রচারের ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। জরুরি অবস্থার মধ্যে প্রচার চলায় মৌলিক স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হয়েছে।

তাছাড়া, নির্বাচনী কর্মকর্তারা দেরীতে কিছু পদ্ধতি পরিবর্তন করায় অফিসিয়াল স্ট্যাম্প ছাড়া ব্যালট পেপার গণনার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলেও পর্যবেক্ষকরা অভিযোগ করেছেন। যদিও তুরস্কের নির্বাচন কর্তৃপক্ষের প্রধান বলছেন, স্ট্যাম্পহীন ব্যালট উচ্চ নির্বাচনী বোর্ডই তৈরি করেছে এবং এ পদ্ধতি অতীতেও ব্যবহার হয়েছে।

তুরস্কের প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) ৬০ শতাংশ ভোট পুনর্গনণার দাবি জানিয়েছে। দলটির উপপ্রধান নেতা বলেছেন ফলও সেইসঙ্গে বাতিল করা উচিত। ওদিকে, কুর্দিপন্থি পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টিও (এইচডিপি) ভোটকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে।

রোববার গণভোটের পর প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সমর্থকরা বড় শহরগুলোর রাস্তায় রাস্তায় পতাকা নিয়ে উল্লাস শুরু করে। অন্যদিকে, এরদোয়ান বিরোধীরা ইস্তাম্বুলে হাড়ি-পাতিল পিটিয়ে বিক্ষোভ দেখায়।

দেশের আধুনিকায়নে গণভোটের মাধ্যমে পরিবর্তন আনা গুরুত্বপূর্ণ বলে দাবি এরদোয়ান সমর্থকদের। গণভোটের ফলের পর ইস্তাম্বুলে নিজের সরকারি বাসভবন হুবার প্রাসাদে এক ব্রিফিংয়ে এরদোয়ান বলেন, “তুরস্ক আজ এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করতে যাচ্ছি।”

আপনার মন্তব্য

আলোচিত