সিলেটটুডে ডেস্ক

১৮ নভেম্বর, ২০১৫ ১৬:০৩

সাকা চৌধুরী : হিংস্র খুনি থেকে অশ্লীল রাজনীতিবিদ

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে ফাঁসির দণ্ড, আপিল বিভাগে সে দণ্ড বহাল এবং সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর (সাকা চৌধুরী) রিভিউ আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর এখন ফাঁসির দণ্ড কার্যকরের আর কোন বাধা থাকল না।

বুধবার (১৮ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ সাকা চৌধুরীর রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেওয়ার পর অ্যাটর্নি জেনারেল বলছেন ফাঁসির দণ্ড কার্যকর এখন সময়ের ব্যাপার

পেছন ফিরে তাকালে দেখা যায়, অশ্লীল-অশালীন মন্তব্যের কারণে সবসময়ই বিতর্কিত ছিলো সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। একাত্তরে নিজের অপকর্মের জন্য তার অনুশোচনা তো ছিলোই না বরং এনিয়ে বারবার ধৃষ্ঠতাপূর্ণ মন্তব্য করে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত এই যুদ্ধাপরাধী।

একাত্তরের হিংস্রতার পাশাপাশি রাজনীতিতে অশ্লীলতা ছড়ানোর জন্যও সাকা চৌধুরীর নাম উঠে আসবে সর্বাগ্রে। একের পর এক বিতর্কিত, অশোভন মন্তব্য করে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়েও সমালোচিত ছিলো চট্টগ্রামের এই রাজনীতিবিদ।

কেবল মুখে নয় সাকার অভিব্যক্তিতেও সবসময় লেগে থাকতো ব্যঙ্গ আর আচরণে ঔদ্ধত্য।

ট্রাইবুন্যালে বিচার চলাকালীন বিচারকদের নিয়েও অসংখ্যবার অশ্লীল ও ধৃষ্ঠতাপূর্ণ মন্তব্য করে সাকা। একবার বিচারকের উদ্দেশ্যে বলে, ‌'আমি রাজাকার, এখন কে ... ফালাবে? বল বল কীভাবে কি করছি… বল…'

সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী সম্পর্কে সাকা বলে, ‘পঞ্চম সংশোধনীর কথা আর কি বলব? সোনা মিয়ারে বানাইসে লাল মিয়া আর লাল মিয়ারে বানাইসে সোনা মিয়া। মিয়া কিন্তু ঠিকই আছে। সোনা ডা খালি লাল হইয়া গেছে’।

দেশের জনগনকে নিয়ে বলেছিলেন, ‘আমরা নেতা হইছি বইলা এমন না যে নিজের পায়জামার ফিতা খুইল্লা জনগনের মশারী বাইন্ধা দিমু’।

তাকে সোনা চোরাচালানকারী বলায় সাকা বলে, "দেশে এত সোনা থাকতে আমার সোনা নিয়ে কেন এত টানাটানি, বুঝলাম না।'

বিএনপি নেত্রীকে উদ্দেশ্য করে সাকা বলে, "আগে কুকুর লেজ নাড়ত... আজকাল লেজ কুকুর নাড়ে", "আমাদের ম্যাডামের আবার অযোগ্য সন্তানদের জন্য অনেক ভালোবাসা..."। গ্রেফতার আতঙ্কের মধ্যেও এতটা নির্ভার কিভাবে আছেন এক সাংবাদিকের এই প্রশ্নের জবাবে সাকা চৌধুরী বলে, "ধর্ষন যখন নিশ্চিত, তখন তা উপভোগ করাই শ্রেয়।"

শেখ হাসিনাকে গ্রেনেড মেরে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ প্রসঙ্গে সাকা বলে, "আমি গ্রেনেড মারলে সেটাতো মিস হত না"

যুদ্ধপরাধীদের বিচার সম্পর্কে ঔধত্য সাকা চৌধুরীর ধৃষ্টতাপূর্ণভাবে বলে, "মাঠে যারা ফাউল করেছে তাদের বিচার হচ্ছে না...গ্যালারিতে বসে যে হাততালি দিয়েছে তাদের বিচার নিয়ে বাড়াবাড়ি হচ্ছে।"

নারী নির্যাতন বিষয়ে খাদ্রমন্ত্রী কামরুল ইসলামের একটি বক্তব্যের জবাবে সাকা বলেন,"তিনি কেরানীগজ্ঞের একজন প্রমোদ বালক, এটা কি আমি কখনও বলেছি?"

সুশীল সমাজ নিয়েও কটুক্তি করে সাকা। বলে, 'সু মানে সুন্দর আর শীল মানে নাপিত, তাহলে সুশীল মানে সুন্দর নাপিত ৷'

জীবনভর এমন নানা ব্যঙ্গোক্তি, অশ্লীল মন্তব্য ছিলো সাকার নিত্যসঙ্গী। প্রতিপক্ষ অশ্লীলভাবে আঘাত করে বিকৃত মজা লুটতেন একাত্তরের এই খুনি।

শুধু গণহত্যাই নয়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চট্টগ্রামের রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, বোয়ালখালী ও চট্টগ্রাম শহরে ধর্ষণ, লুটপাট, হিন্দুদের বাড়ি দখল এবং তাদের দেশান্তরে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল সাকা চৌধুরী।

সেসময় পুরো চট্টগ্রামজুড়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে সাকা চৌধুরী।

ফজলুল কাদের চৌধুরী ছিলেন পাকিস্তান মুসলিম লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফজলুল কাদের চৌধুরী ফকা চৌধুরী নামে পরিচিত ছিলেন। ষাটের দশকে তিনি পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকারও হয়েছিলেন, হয়েছিলেন সে দেশের অস্থায়ি রাষ্ট্রপতিও।

পিতার রাজনৈতিক আদর্শ অনুসরণ করে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীও রাজনীতি শুরু করেন মুসলিম লীগের মাধ্যমে। মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই মুসলিম লীগ সরাসরি পাকিস্তানের পক্ষে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেয়।

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর জন্ম আর বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামেই।

২০১৩ সালের ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রাউজানে কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা, সুলতানপুর ও ঊনসত্তরপাড়ায় হিন্দু বসতিতে গণহত্যা এবং হাটহাজারীর আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজাফফর ও তার ছেলে শেখ আলমগীরকে অপহরণ করে খুনের দায়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়।

ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল রেখেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ

আপনার মন্তব্য

আলোচিত